
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে রেমিট্যান্স প্রবাহে গত বছরের তুলনায় উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের আগস্টে প্রবাসীরা দেশে পাঠিয়েছেন মোট ২ দশমিক ৪২ বিলিয়ন ডলার, যা গত বছরের একই মাসের তুলনায় ৯ শতাংশ বেশি। ২০২৪ সালের আগস্টে রেমিট্যান্সের পরিমাণ ছিল ২ দশমিক ২২ বিলিয়ন ডলার। এই প্রবৃদ্ধি দেশের বৈদেশিক মুদ্রার স্থিতিশীলতা ও জনশক্তি রপ্তানি খাতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
রেমিট্যান্স খাতের বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, গত বছরের রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর সরকারি ও অনানুষ্ঠানিক বিনিময় হারের ব্যবধান কমে যাওয়া, অর্থপাচারের বিরুদ্ধে কঠোর প্রশাসনিক পদক্ষেপ, এবং প্রবাসীদের মধ্যে দেশপ্রেম ও দায়বদ্ধতার কারণে এই বৃদ্ধি এসেছে। দেশের বাইরে অবস্থানরত নাগরিকরা তাদের পরিবার ও অর্থনৈতিক দায়বদ্ধতা মেনে আরও বেশি রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, "রেমিট্যান্স আয়ে আরও প্রবৃদ্ধি চাইলে আমাদের জনশক্তি রপ্তানি আরও বৃদ্ধি করতে হবে। প্রবাসীদের সহায়তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করাও গুরুত্বপূর্ণ।"
তবে, মাসভিত্তিক তুলনায় আগস্টে রেমিট্যান্সের প্রবাহ জুলাইয়ের তুলনায় কিছুটা কম এসেছে। জুলাইয়ে দেশে প্রবাসীরা ২ দশমিক ৪৭ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন, যা আগস্টের তুলনায় ২ দশমিক ২২ শতাংশ বেশি। এর মাধ্যমে দেখা যাচ্ছে, মৌসুমী ও অর্থনৈতিক বিষয়গুলোও রেমিট্যান্সের প্রবাহকে প্রভাবিত করছে।
চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাস—জুলাই ও আগস্ট—মিলে বাংলাদেশে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪ দশমিক ৯০ বিলিয়ন ডলারে। এটি আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১৮ দশমিক ৪০ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছরের একই সময় রেমিট্যান্সের পরিমাণ ছিল ৪ দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলার।
রেমিট্যান্স বাংলাদেশে বৈদেশিক মুদ্রার সবচেয়ে বড় উৎস হিসেবে বিবেচিত। এটি ঘরোয়া অর্থনীতিকে শক্তিশালী রাখে, বৈদেশিক ঋণ নির্ভরতা কমায়, এবং সরাসরি পরিবারগুলোর জীবনমান উন্নত করে। দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা, খাদ্য নিরাপত্তা এবং বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে প্রবাসীদের এই পাঠানো অর্থ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রেমিট্যান্সের ধারাবাহিক বৃদ্ধি নিশ্চিত করতে প্রয়োজন সুষ্ঠু নীতিমালা, প্রবাসীদের জন্য সহজ ও নিরাপদ লেনদেন ব্যবস্থা, এবং বৈদেশিক কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি। দেশের রেমিট্যান্স খাতকে আরও শক্তিশালী করতে সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি প্রাইভেট সেক্টরের অংশগ্রহণও অপরিহার্য।
প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের প্রবণতা ও পরিমাণ দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক। দেশের মুদ্রা বৈধতা, আমদানি-রপ্তানি ব্যালেন্স এবং সরকারি রাজস্ব বৃদ্ধির ক্ষেত্রে এটি ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। তাই, প্রবাসীদের সুবিধা নিশ্চিত করে এবং বিদেশে তাদের নিরাপত্তা ও কল্যাণ নিশ্চিত করে রেমিট্যান্সের ধারাবাহিক বৃদ্ধি নিশ্চিত করা এখন জাতীয় অর্থনৈতিক লক্ষ্য।
চলতি বছরের জুলাই-আগস্টের রেকর্ড অনুযায়ী, প্রবাসীদের অবদান বাংলাদেশ অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে দৃঢ় ভিত্তি তৈরি করেছে। আগামী মাসগুলিতে এই প্রবণতা অব্যাহত থাকলে বৈদেশিক মুদ্রার প্রাচুর্য, দেশীয় বিনিয়োগ এবং ঘরোয়া অর্থনীতির স্থিতিশীলতা আরও দৃঢ় হবে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ