
ছবি: সংগৃহীত
এয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ভোটকেন্দ্র ও ভোটকক্ষের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে রাখতে নীতিমালায় বড় ধরনের সংশোধন এনেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এর ফলে ভবিষ্যতে ভোটার সংখ্যা বাড়লেও আগের তুলনায় একই হারে ভোটকক্ষ বাড়বে না। কমিশনের দাবি, এই পদক্ষেপে শুধু আর্থিক সাশ্রয়ই হবে না, বরং নির্বাচন পরিচালনাও হবে অনেক বেশি সহজ ও স্বচ্ছ।
আগে প্রতি ৫০০ জন পুরুষ ভোটারের জন্য একটি ভোটকক্ষ এবং প্রতি ৪০০ জন নারী ভোটারের জন্য আলাদা একটি ভোটকক্ষ নির্ধারণ করার বিধান ছিল। অর্থাৎ, একটি কেন্দ্রে গড়ে ৩ হাজার ভোটার থাকলে সেখানে পুরুষ-নারীর আনুপাতিক হারে বেশ কয়েকটি কক্ষ তৈরি করতে হতো। নতুন নীতিমালা অনুযায়ী সেই নিয়ম আর থাকছে না।
এখন থেকে—
৬০০ জন পুরুষ ভোটারের জন্য একটি ভোটকক্ষ
৫০০ জন মহিলা ভোটারের জন্য একটি ভোটকক্ষ
নির্ধারণ করতে হবে।
অর্থাৎ, পুরোনো নিয়মের তুলনায় প্রতিটি ভোটকক্ষে অন্তত ১০০ জন করে বেশি ভোটার থাকবে। এতে একই কেন্দ্রে কক্ষের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কমে যাবে।
সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) ইসির উপসচিব মো. মাহবুব আলম শাহ স্বাক্ষরিত সংশোধিত নীতিমালা মাঠ পর্যায়ের নির্বাচন কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো হবে বলে জানা গেছে। এতে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, সাধারণ নিয়মে প্রতি ৩ হাজার ভোটারের জন্য একটি ভোটকেন্দ্র থাকবে এবং তার মধ্যে ৬০০ পুরুষ ও ৫০০ নারী ভোটারের জন্য আলাদা কক্ষ নির্ধারণ করতে হবে।
ইসির তথ্য মতে, এই পরিবর্তনের ফলে প্রায় ৪৯ হাজার বুথ কমানো সম্ভব হবে। এর সঙ্গে সঙ্গে প্রায় দেড় লাখ অতিরিক্ত নির্বাচন কর্মকর্তার প্রয়োজনও কমে যাবে। অর্থাৎ, ভোটগ্রহণ কর্মকর্তার সংখ্যা হ্রাস পাওয়ায় নির্বাচনী খরচ কমবে এবং ব্যবস্থাপনা সহজ হবে।
নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ সম্প্রতি এক আলোচনায় বলেন, “আগে একজন পুরুষ ভোটার ৫০০ জনের মধ্যে একটি বুথ পেতেন, আর একজন নারী ভোটার ৪০০ জনের মধ্যে একটি বুথ পেতেন। এখন তা যথাক্রমে ৬০০ ও ৫০০ করা হয়েছে। এর ফলে কমিশনের প্রায় ১০০ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে। একইসঙ্গে বিশাল সংখ্যক কর্মকর্তা নিয়োগের ঝামেলাও কমে যাবে।”
ইসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, বুথের সংখ্যা বেড়ে গেলে নির্বাচনের জন্য ব্যয়, জনবল ও অবকাঠামোগত চাপ কয়েকগুণ বাড়ে। মাঠ পর্যায়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করাও কঠিন হয়ে পড়ে। তাই বাস্তবতা বিবেচনায় ভোটকক্ষের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি ছিল।
তারা আরও উল্লেখ করেন, আধুনিক প্রযুক্তি যেমন ভোটার তালিকা হালনাগাদ এবং বায়োমেট্রিক যাচাই ব্যবস্থার কারণে এখন একজন ভোটারের ভোট দিতে কম সময় লাগছে। ফলে তুলনামূলকভাবে বেশি ভোটারকে একটি বুথে সামলানো সম্ভব হচ্ছে।
তবে নীতিমালার এই পরিবর্তন নিয়ে কিছু মহলে সমালোচনা উঠেছে। সমালোচকদের মতে, ভোটকক্ষে ভোটার সংখ্যা বাড়লে ভোট দেওয়ার সময় ভিড় ও দীর্ঘ লাইন তৈরি হবে। এতে ভোটারদের ভোগান্তি বাড়বে। বিশেষ করে নারী ভোটারদের জন্য বুথ সংখ্যা কমে যাওয়ায় তারা সমস্যায় পড়তে পারেন।
অন্যদিকে, ইসি বলছে—এটি পরীক্ষিত একটি মডেল। দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশেই একেকটি বুথে ৬০০ থেকে ৭০০ জন পর্যন্ত ভোটার থাকে। বাংলাদেশে আগে তুলনামূলকভাবে সংখ্যা কম রাখা হয়েছিল, এখন বাস্তবতার কারণে সেটি সমন্বয় করা হচ্ছে।
এখন ইসির সব জেলা ও উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তারা এই সংশোধিত নীতিমালা অনুযায়ী কাজ করবেন। মাঠ পর্যায়ে ভোটকেন্দ্র ও বুথ নির্ধারণের সময় নতুন নিয়ম কার্যকর হবে। ইসি আশা করছে, এর ফলে বাজেট ব্যবস্থাপনা আরও সুসংগঠিত হবে এবং অযথা জনবল নিয়োগের ঝামেলা এড়ানো যাবে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ