
ছবি: সংগৃহীত
সুদানের দক্ষিণাঞ্চলের মাররা পাহাড়ি এলাকায় ঘটে গেছে এক ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়। টানা ভারি বর্ষণের ফলে পাহাড় ধসে মুহূর্তেই নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে একটি সম্পূর্ণ গ্রাম। এতে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত এক হাজার মানুষ। স্থানীয় একটি গ্রুপ জানিয়েছে, গোটা গ্রামটি মাটিচাপা পড়ে গেছে, আর সেই ধ্বংসস্তূপ থেকে জীবিত অবস্থায় মাত্র একজনকে পাওয়া গেছে। বাকিরা সবাই প্রাণ হারিয়েছেন। সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) বিষয়টি নিশ্চিত করেছে সুদান লিবারেশন মুভমেন্ট, যেটি বর্তমানে দারফুরের ওই পাহাড়ি অঞ্চলটি নিয়ন্ত্রণ করে।
গত ৩১ আগস্ট (শনিবার) ভারি বর্ষণের পর আকস্মিক ভূমিধস শুরু হয়। পাহাড়ি মাটি ও বিশালাকার পাথরের স্রোতে মুহূর্তের মধ্যে গ্রামটি চাপা পড়ে যায়। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, কয়েক মিনিটের মধ্যেই পুরো বসতি মাটির নিচে হারিয়ে যায়। নারী, পুরুষ ও শিশুসহ এক হাজারেরও বেশি মানুষ এ ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন। ধ্বংসস্তূপের ভেতর লাশ উদ্ধারে মানবিক সহায়তা চেয়েছে স্থানীয় গ্রুপটি। তারা জানিয়েছে, এত বিশাল মাপের বিপর্যয়ের পর আন্তর্জাতিক সংস্থা ও জাতিসংঘের সাহায্য ছাড়া উদ্ধারকাজ সম্ভব নয়।
ভূমিধসে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা অত্যন্ত দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চল। সেখানে পৌঁছাতে স্বাভাবিক সময়েই ভোগান্তি পোহাতে হয়। এখন তো পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ। গ্রামে কোনো ঘরবাড়ি অবশিষ্ট নেই। পাথর, কাদা ও ধসে পড়া গাছের নিচে চাপা পড়ে আছে শত শত মরদেহ। এ অবস্থায় উদ্ধারকর্মীদের কাজ করা দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে। স্থানীয় গ্রুপের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, হাতে পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি নেই। এমনকি পর্যাপ্ত খাবার, বিশুদ্ধ পানি ও চিকিৎসা সামগ্রীও সেখানে পাওয়া যাচ্ছে না।
এই অঞ্চলে ইতিমধ্যেই চলমান সংঘাতের কারণে হাজার হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছিলেন। সুদানের সেনাবাহিনী ও প্যারামিলিটারি বাহিনী ‘র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্স’-এর (আরএসএফ) দ্বন্দ্বে দীর্ঘ দুই বছর ধরে দেশটিতে ভয়াবহ গৃহযুদ্ধ চলছে। এর প্রভাবে ইতোমধ্যেই অর্ধেকেরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। দারফুরের দুর্গম এই পাহাড়ি এলাকাটি অনেকের জন্য ছিল নিরাপদ আশ্রয়স্থল। কিন্তু এবার সেই আশ্রয়ই হয়ে উঠল মৃত্যুকূপ। সংঘাত থেকে পালিয়ে আসা অসহায় মানুষ প্রাকৃতিক দুর্যোগে একেবারে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেলেন।
স্থানীয় কর্তৃপক্ষ বলছে, এই বিপর্যয় সুদানে চলমান মানবিক সংকটকে আরও গভীর করে তুলেছে। ভূমিধসের ঘটনায় শুধু প্রাণহানি নয়, জীবিতরা বেঁচে থাকলেও তারা এখন আশ্রয়, খাদ্য ও চিকিৎসার তীব্র সংকটে পড়বেন। তাই জাতিসংঘ, আন্তর্জাতিক রেডক্রস এবং মানবিক সহায়তা সংস্থাগুলোর প্রতি জরুরি হস্তক্ষেপের আহ্বান জানানো হয়েছে।
সুদানে একদিকে চলছে গৃহযুদ্ধ, অন্যদিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগে যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন ট্র্যাজেডি। মাররা পাহাড়ি অঞ্চলের গ্রামটি নিশ্চিহ্ন হওয়ার ঘটনায় গোটা দেশজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। একদিকে যুদ্ধের ধ্বংসযজ্ঞ, অন্যদিকে প্রাকৃতিক বিপর্যয়—সব মিলিয়ে সুদান এখন এক ভয়াবহ মানবিক সংকটের মুখোমুখি।
বাংলাবার্তা/এমএইচ