
ছবি: সংগৃহীত
মাত্র দুই দিনের ব্যবধানে মুন্সীগঞ্জ জেলায় উদ্ধার হলো নয়জন মানুষের মরদেহ। রবিবার (৩১ আগস্ট) থেকে সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত ভিন্ন ভিন্ন স্থান থেকে এই লাশগুলো উদ্ধার করেছে পুলিশ। কারও মৃত্যু হয়েছে দুর্ঘটনায়, কেউ হয়েছেন আত্মহত্যার শিকার, আবার কোথাও ঘটেছে পারিবারিক ট্র্যাজেডি কিংবা রহস্যজনক ঘটনা। এভাবে অল্প সময়ের মধ্যে একসঙ্গে এতগুলো লাশ উদ্ধারের খবরে স্থানীয় জনমনে আতঙ্ক ও উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
রবিবার বিকেলে শহরের খালইস্ট এলাকায় একটি নির্মাণাধীন ভবনের ভেতরে ঘটে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। স্থানীয়রা জানান, সবুজ কাজীর মালিকানাধীন দ্বি-তল ভবনের ভূগর্ভস্থ সেপটিক ট্যাংকে কাজ করতে নামেন কয়েকজন শ্রমিক। কিছুক্ষণ পর ট্যাংকের ভেতর থেকে তাদের সাড়া শব্দ পাওয়া যায়নি। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে ট্যাংকের ভেতর থেকে একে একে তিনটি নিথর দেহ উদ্ধার করেন।
নিহতরা হলেন—বগুড়ার ইব্রাহিম (৪৮), গাইবান্ধার ফিরোজ (১৯) এবং পঞ্চগড়ের শাহিন ইসলাম (২২)। সবাই ছিলেন নির্মাণ শ্রমিক। ধারণা করা হচ্ছে, ট্যাংকের ভেতরে বিষাক্ত গ্যাসে শ্বাসরোধ হয়ে তাদের মৃত্যু হয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে সোমবার সকালে মরদেহগুলো স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
একই দিন সকালে সিরাজদিখান উপজেলায় আরও দুটি এবং শ্রীনগর উপজেলায় একটি লাশ উদ্ধার হয়।
-
আকাশ ঋষি (২২): সকাল ৮টার দিকে সিরাজদিখান উপজেলার রশুনিয়া গ্রামের ঋষিপাড়ায় নিজ বসতঘরের আড়ার সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায় আকাশের মরদেহ। তিনি নীল কৃষ্ণ ঋষির ছেলে। পরিবারের ধারণা, গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন।
-
আয়নাল হক (৭০): শ্রীনগর উপজেলার পূর্ব আটপাড়া এলাকায় এক দিন নিখোঁজ থাকার পর রোববার সকালে তার মরদেহ পাওয়া যায় প্রতিবেশীর বাড়ির পাশ থেকে। নিহত আয়নাল ছিলেন স্থানীয় কৃষক।
-
আমজাদ হোসেন ঢালী (৪৫): দুপুর ১টার দিকে সিরাজদিখান উপজেলার বাসাইলের উত্তর পাথরঘাটা এলাকায় ধলেশ্বরী নদী থেকে ভেসে ওঠে তার দেহ। কেরানীগঞ্জের হযরতপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা আমজাদ ছিলেন প্রয়াত শহীদ ঢালীর ছেলে এবং স্থানীয় ছাত্রদল নেতা শিমুল আহমেদ সাদ্দামের বড় ভাই।
এই তিনটি মৃত্যুর কারণ নিয়েও স্থানীয়দের মাঝে নানা প্রশ্ন উঠেছে।
রোববারের পর সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) শ্রীনগর উপজেলায় পৃথক ঘটনায় আরও তিনজনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
-
অজ্ঞাত নারী: সকালেই শ্রীনগরের ষোলঘর রেল লাইনের আন্ডারপাসের পাশে কাটা অবস্থায় একটি নারীর দেহ উদ্ধার করা হয়। ধারণা করা হচ্ছে, ট্রেনে কাটা পড়ে তার মৃত্যু হয়েছে। মরদেহটি অজ্ঞাত হওয়ায় এখনও তার পরিচয় শনাক্ত হয়নি।
-
মামুন কাজী (৭০): শ্রীনগরের ব্রাম্মণপাইকসা গ্রামে নিজ বাড়ির কাছের একটি গাছের সঙ্গে হেলানো অবস্থায় স্থানীয়রা দেখতে পান মামুন কাজীর নিথর দেহ। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে। প্রাথমিকভাবে এটি হত্যা না আত্মহত্যা তা নিশ্চিত নয়। ঘটনাটির রহস্য উদঘাটনে পাশের বাড়ির এক নারীকে আটক করেছে পুলিশ।
-
মো. রাসেল (৩০): সোমবার সকাল সাড়ে সাতটার দিকে শ্রীনগরের দেওয়ানপাড়া গ্রামে এক ভয়ংকর পারিবারিক ট্র্যাজেডি ঘটে। পুলিশ জানায়, রাসেল নামে এক যুবক ছুরি নিয়ে তার বাবা আবুল হোসেন (৭০)-এর ওপর হামলা চালাতে যান। আত্মরক্ষার জন্য বাবার ধরা ছুরিই ছেলের শরীরে বিঁধে যায়। ঘটনাস্থলেই মারা যান রাসেল। ঘটনার পর অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী আবুল হোসেন লাশের পাশে বসে ছিলেন। পুলিশ গিয়ে তাকে গ্রেফতার করে।
মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আনিছুর রহমান বলেন, “এই ঘটনাগুলো সবই বিচ্ছিন্ন। পুলিশের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ আন্তরিকতা নিয়ে তদন্ত চলছে। মৃতদেহগুলোর ময়নাতদন্ত করা হয়েছে, যা থেকে মৃত্যুর আসল কারণ স্পষ্ট হয়ে উঠবে। আইনগত ব্যবস্থাও চলমান রয়েছে।”
এক জেলার ভেতরে মাত্র দুই দিনে এতগুলো লাশ উদ্ধারের ঘটনায় স্থানীয় মানুষের মাঝে সৃষ্টি হয়েছে আতঙ্ক। কেউ বলছেন দুর্ঘটনা, কেউ খুন বা আত্মহত্যার আভাস দিচ্ছেন। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি সামাজিক সচেতনতা এবং পারিবারিক বন্ধন দৃঢ় করাও জরুরি, যাতে অপ্রত্যাশিত মৃত্যু কমে আসে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ