
ছবি: সংগৃহীত
বলিউড সুপারস্টার সালমান খানের বাড়ির গণেশপূজার ছবি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তা মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায়। ভক্ত-অনুরাগীদের বিস্ময়ের সঙ্গে আনন্দও প্রকাশ পায়। তবে একসঙ্গে অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে— মুসলিম পরিবার হয়েও কেন প্রতিবছর এত আড়ম্বর করে গণেশচতুর্থী পালন করেন সালমান ও তার পরিবার? এবার সেই কৌতূহলের জবাব দিয়েছেন অভিনেতার বাবা, প্রখ্যাত চিত্রনাট্যকার ও অভিনেতা সেলিম খান। তিনি জানালেন খান পরিবারের বহু পুরোনো এই ঐতিহ্যের মূল কারণ ও পারিবারিক ইতিহাস।
সালমানের বাড়ির দরজা থেকেই শুরু ধর্মীয় সম্প্রীতির ছাপ
মুম্বাইয়ের গ্যালাক্সি অ্যাপার্টমেন্টে সালমান খানের ফ্ল্যাটে ঢুকতেই দর্শনার্থীরা প্রথমে যা দেখতে পান, তা হলো এক গণেশমূর্তি। প্রায় ১৫ বছর ধরে সেই মূর্তি অবস্থান করছে খান পরিবারের বাড়ির সদর দরজায়। প্রতিবছর গণেশচতুর্থী এলেই সেখানে পূজা হয়, পরিবারের সদস্য ও ঘনিষ্ঠজনরা একত্রিত হয়ে আয়োজন করে থাকেন। ভক্তরা যখন এই দৃশ্য দেখেন, তখন তাদের মনে আরও বিস্ময় জাগে— ধর্মীয় ভেদাভেদ পেরিয়ে খান পরিবার কীভাবে এমন উদাহরণ তৈরি করে চলেছে।
সুশীলা চরক থেকে সালমা খান, কিন্তু ঐতিহ্যের শুরু আরও আগে
অনেকেই মনে করেন, সালমানের মা সুশীলা চরক (যিনি বিয়ের পর সালমা খান নাম গ্রহণ করেন) হিন্দু পরিবার থেকে আসায় হয়তো গণেশপূজার এই চল এসেছে। তবে সেলিম খান স্পষ্ট জানিয়ে দেন, বিষয়টি মোটেও এমন নয়। তিনি বলেন, “আমার বিয়ের অনেক আগে থেকেই আমাদের পরিবার গণেশপূজা করত। এটি নতুন কোনো প্রথা নয়।”
সেলিম জানান, তার বাবা ইন্দরে একটি হিন্দু অধ্যুষিত এলাকায় থাকতেন। সেখানে হিন্দু ও মুসলিম পরিবারের মধ্যে কোনো ভেদাভেদ ছিল না। সবাই মিলেমিশে উৎসব পালন করত, একে অপরের বাড়িতে যাওয়া-আসা ছিল নিয়মিত। পাড়ার হিন্দু পরিবারগুলো যেমন ঈদের মিষ্টি ভাগ করে নিত, তেমনি তাদের পরিবারের সদস্যরাও দুর্গাপূজা কিংবা গণেশচতুর্থীতে অংশ নিতেন।
হিন্দু-মুসলিম ভেদাভেদহীন পরিবেশে বেড়ে ওঠা
সেলিম খান বলেন, “আমার ছোটবেলার স্কুলে মাত্র তিনজন মুসলিম সহপাঠী ছিল, বাকিরা সবাই হিন্দু। তাই শৈশব থেকেই হিন্দু বন্ধুদের সঙ্গে সময় কেটেছে। তাদের সঙ্গে খেলাধুলা করেছি, তাদের বাড়িতে গিয়েছি, উৎসব ভাগ করে নিয়েছি। আমাদের কাছে তখন হিন্দু-মুসলিম বলে আলাদা করে কিছু ছিল না। সবাই বন্ধু ছিলাম।”
এই বন্ধুত্বপূর্ণ ও সম্প্রীতিমূলক পরিবেশই সেলিম খানের চরিত্র ও চিন্তাধারায় প্রভাব ফেলেছিল। তিনি আরও বলেন, “আমি হিন্দু সংস্কৃতির আবহে বড় হয়েছি। তাই বিয়ের পর গণেশপূজা শুরু করেছি— বিষয়টি আসলে এমন নয়। এটি আমাদের পরিবারের বহু প্রজন্ম ধরে চলে আসছে।”
ধর্মান্তর বিয়ে নিয়েও আপত্তি ছিল না
সেলিম খান তার ব্যক্তিগত জীবন নিয়েও কথা বলেন। তিনি জানান, হিন্দু পরিবার থেকে আসা সুশীলা চরককে বিয়ে করার সময়ও পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো আপত্তি ছিল না। বরং উভয় পরিবারের সদস্যরা বিষয়টিকে স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করেছিলেন। কেবলমাত্র স্ত্রীর পরিবারের এক দূর সম্পর্কের আত্মীয় সামান্য আপত্তি তুলেছিলেন তার ধর্মীয় পরিচয় নিয়ে। তবে সেটিও বড় কোনো সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়নি।
বিয়ের সময়ও সেলিম খান হিন্দু প্রথা অনুযায়ী সাত পাক ঘুরে বিয়ে করেছিলেন, পরে নিকাহ সম্পন্ন করেন। এই ঘটনাই প্রমাণ করে, ধর্মীয় বৈচিত্র্যকে তিনি কীভাবে ব্যক্তিগত জীবনে গ্রহণ করেছিলেন।
একই মানসিকতা উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছেন সালমান
সেলিম খানের মতে, তার যে মানসিকতা— যেখানে ধর্মীয় ভেদাভেদ নেই, বরং সম্প্রীতি ও মিলনের বার্তা আছে— সেটিই উত্তরাধিকার সূত্রে সন্তানদের মধ্যেও এসেছে। সালমান খানও সেই চেতনায় বড় হয়েছেন। তাই তার কাছে গণেশচতুর্থী শুধু হিন্দুদের উৎসব নয়, বরং পারিবারিক ঐতিহ্যের অংশ এবং প্রতিবছরের আনন্দোৎসব।
সেলিম খান বলেন, “আমি যেভাবে হিন্দু বন্ধুদের সঙ্গে বড় হয়েছি, আমার সন্তানরাও একই রকম মানসিকতা নিয়ে বেড়ে উঠেছে। সালমানের মধ্যেও আমি সেই সম্প্রীতির ছাপ দেখতে পাই।”
উদাহরণ সৃষ্টি করেছে খান পরিবার
বর্তমান সময়ে ধর্মীয় বিভাজন যখন সমাজকে টানাপোড়েনে ফেলছে, তখন খান পরিবারের এই প্রথা নজিরবিহীন। প্রতিবছর গণেশপূজা করে তারা শুধু ধর্মীয় সহনশীলতাই প্রদর্শন করছেন না, বরং প্রমাণ করছেন ভারতীয় সমাজে হিন্দু-মুসলিম মিলনের ঐতিহ্য কত গভীর।
সেলিম খানের বক্তব্য স্পষ্ট করে দিয়েছে— গণেশপূজা করা শুধু এক ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা নয়, বরং বহু প্রজন্ম ধরে চলে আসা এক পারিবারিক সংস্কৃতি, যা আজও সমানভাবে পালন করছেন সালমান খান ও তার পরিবার।
বাংলাবার্তা/এমএইচ