
ছবি: সংগৃহীত
প্রযুক্তির অগ্রগতি যেমন মানুষের জীবনকে সহজ করেছে, তেমনি প্রতারণার ধরনও হয়ে উঠেছে আরও অভিনব ও বিপজ্জনক। কয়েকটি অসতর্ক ক্লিক, আর মুহূর্তেই হারিয়ে যেতে পারে আপনার ফেসবুক আইডি। সাম্প্রতিক সময়ে এই ধরনের প্রতারণা বেড়েছে উদ্বেগজনক হারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সচেতনতার বিকল্প নেই—কারণ প্রতারকরা এমন ফাঁদ তৈরি করছে, যা থেকে বাঁচা অনেক সময় কঠিন হয়ে যায়।
সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে আলোচিত প্রতারণার একটি হলো ‘স্পুফিং’। সহজভাবে বলতে গেলে, এটি এমন একটি কৌশল যেখানে প্রতারকরা আসল প্রতিষ্ঠানের নাম ও পরিচয় ব্যবহার করে ভুয়া যোগাযোগ পাঠায়। দেখতে এতটাই বাস্তব মনে হয় যে, সাধারণ ব্যবহারকারীর পক্ষে তা বোঝা প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়।
উদাহরণস্বরূপ, আপনি যদি ফেসবুকের পাসওয়ার্ড ভুলে যান, সেক্ষেত্রে সাধারণ নিয়মে পাসওয়ার্ড রিসেট করার সময় একটি ই–মেইল আসে। কিন্তু প্রতারকরা একই ধাঁচের আরেকটি ই–মেইল পাঠায়, যেখানে প্রেরকের নাম ও লোগোও হুবহু ফেসবুকের মতো থাকে। ব্যবহারকারী তাড়াহুড়ো করে বা অসতর্কভাবে সেই ভুয়া মেইলে ক্লিক করলে বিপদ অনিবার্য।
সম্প্রতি এমনই এক ভুক্তভোগীর অভিজ্ঞতা প্রকাশ পেয়েছে। তিনি ফেসবুক থেকে আসা দুটি ই–মেইল দেখতে পান। একটি আসল হলেও অন্যটি ছিল প্রতারকদের পাঠানো। অসতর্কভাবে দ্বিতীয় মেইলটি খোলার পর সেখানে দেওয়া লিংকে ঢুকে লগইন তথ্য দিলে বুঝতেও পারলেন না যে, ফেসবুক নয় বরং ‘ফেইলবুক (Failbook)’ নামের ভুয়া একটি ওয়েবসাইটে তথ্য জমা হয়েছে। কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই আইডি হাতছাড়া হয়ে গেল।
এই অভিজ্ঞতা মোটেও বিরল নয়। প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ একই ফাঁদে পা দিয়ে ফেসবুক, ইমেইল কিংবা অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছেন।
স্পুফিং কৌশলে তৈরি ই–মেইল সাধারণত আসল প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে হুবহু মিলে যায়। ই–মেইলের শিরোনাম, লোগো, এমনকি ই–মেইল ঠিকানাও অনেক সময় আসলের সঙ্গে মিলিয়ে ফেলা হয়।
-
ব্যবহারকারী যখন সেই মেইলে ক্লিক করেন, তখন তিনি নিয়ে যাওয়া হয় দেখতে একেবারে আসলের মতো আরেকটি ওয়েবসাইটে।
-
সেখানে লগইন করার সময় আপনার ব্যবহারকারীর নাম, পাসওয়ার্ড ও অন্যান্য তথ্য সরাসরি চলে যায় প্রতারকদের হাতে।
-
একবার তথ্য হাতিয়ে নেওয়ার পর প্রতারকরা সঙ্গে সঙ্গে আইডি দখল করে নেয় এবং মালিককে আর প্রবেশ করতে দেয় না।
এভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পাশাপাশি ব্যাংকিং, ই–কমার্স ও অফিসিয়াল যোগাযোগেও স্পুফিং হামলা চলছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ফেসবুক শুধু সামাজিক যোগাযোগ নয়, এখন অনেকের ব্যবসা ও পেশাগত জীবনের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। একটি আইডি হ্যাক হয়ে গেলে ব্যক্তিগত তথ্যের পাশাপাশি ব্যবসায়িক যোগাযোগও হুমকির মুখে পড়ে। শুধু তাই নয়, প্রতারকরা আইডি ব্যবহার করে বন্ধুবান্ধব বা স্বজনদের কাছ থেকেও অর্থ হাতিয়ে নিতে পারে।
আরও ভয়াবহ বিষয় হলো, একবার আইডি হারালে তা পুনরুদ্ধার করা অত্যন্ত কঠিন হয়ে যায়। প্রতারকরা সঙ্গে সঙ্গে ই–মেইল, ফোন নম্বর ও পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করে দেয়। ফলে আসল মালিক অনেক সময় আইডি ফেরত পান না।
সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের প্রতারণা থেকে বাঁচার উপায় হলো অসতর্ক না হওয়া। কয়েকটি সহজ নিয়ম মেনে চললেই বড় বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়:
-
কখনোই অপরিচিত বা সন্দেহজনক ই–মেইলের লিংকে ক্লিক করবেন না।
-
ই–মেইল ঠিকানাটি ভালোভাবে দেখে নিন—এক অক্ষরের ভিন্নতাও বড় প্রতারণা হতে পারে।
-
সম্ভব হলে ‘টু–ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন’ চালু করুন।
-
আসল ফেসবুক বা অন্য প্রতিষ্ঠানের মেইল সাধারণত ‘@facebook.com’-এর মতো অফিসিয়াল ডোমেইন থেকে আসে।
-
সন্দেহ হলে অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে গিয়ে সরাসরি লগইন করুন, ই–মেইলের লিংক ব্যবহার করবেন না।
প্রযুক্তির এই যুগে প্রতারণার ধরন পাল্টে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। আজ যদি আমরা সচেতন না হই, তবে কাল হয়তো নিজের অজান্তেই আইডি, তথ্য বা অর্থ হারাতে হবে। তাই বলা যায়—ভুল মেইলে ক্লিক মানেই ফেসবুক হারানোর ঝুঁকি।
বাংলাবার্তা/এমএইচ