
ছবি: সংগৃহীত
জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই)-এর সরবরাহ করা গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক মানবপাচার চক্রের মূলহোতা আমিনুল ইসলাম (৪৬) ও তার চারজন সহযোগীকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)-২। রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানাধীন ১১ নম্বর সেক্টরের একটি বাসা থেকে তাদের আটক করা হয়। গ্রেপ্তারকালে বিপুল পরিমাণ পাসপোর্ট, মোবাইল ফোন এবং নগদ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।
প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই “বাংলাদেশ আমার অহংকার” স্লোগান নিয়ে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন বিভিন্ন ধরণের অপরাধীকে গ্রেপ্তার করে আসছে। সন্ত্রাস, মাদক, অস্ত্র ব্যবসা, চাঁদাবাজি, খুন, অপহরণ ও প্রতারণাসহ নানা অপরাধ দমনে র্যাবের কার্যক্রম জনগণের আস্থা অর্জন করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় এনএসআই-এর সাথে যৌথ অভিযানে মানবপাচার চক্রের মূলহোতা ও সহযোগীদের আটক করা সম্ভব হয়েছে।
আটককৃতদের পরিচয়
র্যাব জানায়, আটককৃতরা হলো- ১. আমিনুল ইসলাম (৪৬) – চক্রের মূলহোতা, ২. আব্দুল হাকিম (৫৬), ৩. মো. নূর ইসলাম (৩১), ৪. আসাদুজ্জামান (৩৫) এবং ৫. মো. শাহরিয়ার শেখ মুরাদ (৪২)। তাদেরকে রাজধানীর উত্তরা এলাকা থেকে গত ৭ সেপ্টেম্বর রাতভর অভিযানে আটক করা হয়।
মানবপাচার চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ, বিশেষ করে বেকার যুবকদের টার্গেট করে আসছিল। ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে বৈধ ভিসা ও কাজের সুযোগ পাইয়ে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণা চালানো হতো। জন প্রতি ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা দাবি করা হতো ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে।
প্রথমে জাল ভিসা ও পাসপোর্ট তৈরি করে ভুক্তভোগীদের মধ্যপ্রাচ্যে পাঠানো হতো। পরে ইউরোপে পৌঁছে দেওয়ার নামে মিসর হয়ে লিবিয়া এবং সেখান থেকে ঝুঁকিপূর্ণ ও অবৈধ নৌপথে ইউরোপে নেওয়ার চেষ্টা করা হতো। এই পদ্ধতিতে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করেছে আমিনুল-আব্দুল্লাহ চক্র। বাংলাদেশের অংশটি পরিচালনা করতেন আমিনুল ইসলাম আর লিবিয়া অংশটি তদারকি করতেন তার সহযোগী আব্দুল্লাহ।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ভুক্তভোগী জাহিদ হোসেনকে ইতালি নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তার কাছ থেকে প্রায় ২০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় প্রধান আসামি আমিনুল ইসলাম। টাকা নেওয়ার পর গত ১৩ জুলাই ভুক্তভোগীকে প্রথমে মদিনা হয়ে মিশরে পাঠানো হয়। সেখানে পৌঁছানোর পর অজ্ঞাত মানবপাচারকারীরা তাকে জিম্মি করে মুক্তিপণ দাবি করে।
এই ঘটনায় জাহিদের ভাই বাদী হয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের হাজারীবাগ থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলা নং-৯, তারিখ-৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ধারা- মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন ২০১২ (ধারা ৬/৭/৮/১০) এবং দণ্ডবিধির ৪০৬/৪২০ ধারায় মামলা রুজু হয়।
মামলার পর থেকে বিষয়টি নজরদারি করছিল জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই)। তাদের সরবরাহ করা সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব-২ ও হাজারীবাগ থানার যৌথ টিম উত্তরা ১১ নম্বর সেক্টরের একটি বাসায় অভিযান চালায়।
অভিযানে চক্রের মূলহোতা আমিনুল ইসলামসহ চার সহযোগীকে আটক করা হয়। তাদের হেফাজত থেকে ৯টি পাসপোর্ট, ১০টি স্মার্টফোন, একটি বাটন ফোন এবং মানবপাচারের মাধ্যমে অর্জিত ১ কোটি ৫৬ লাখ ২৬ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়।
র্যাব জানিয়েছে, গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্য যাচাই-বাছাই চলছে। তাদের স্বীকারোক্তি থেকে জানা গেছে, দেশে ও বিদেশে আরও বেশ কয়েকজন সহযোগী রয়েছে। এদের গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান অব্যাহত রয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন।
বাংলাবার্তা/এসজে