
ছবি: সংগৃহীত
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে অভূতপূর্ব ব্যবধানে জয় পেয়েছেন শিবির সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের প্রার্থী আবু সাদিক কায়েম। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর আয়োজিত এ নির্বাচনে শিক্ষার্থীদের ব্যাপক আগ্রহের মধ্যেই ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। চূড়ান্ত ফলাফলে দেখা যায়, সাদিক কায়েম একক আধিপত্য বিস্তার করে প্রতিদ্বন্দ্বীদের বহু দূরে ফেলে দিয়েছেন। তবে এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে তাকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়নি, যা নিয়ে বিভিন্ন মহলে আলোচনা চলছে।
বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) সব কেন্দ্রের ভোট গণনা শেষে ঘোষিত ফলাফলে দেখা যায়, সাদিক কায়েম পেয়েছেন মোট ১৪ হাজার ৪২ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী, ছাত্রদলের প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান পেয়েছেন ৫ হাজার ৬৫৮ ভোট। তৃতীয় স্থানে থাকা স্বতন্ত্র জোটের প্রার্থী উমামা ফাতেমা পান ২ হাজার ৫৪৯ ভোট, আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী শামীম হোসেন পান ২ হাজার ৩৮৫ ভোট। বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদ প্যানেলের প্রার্থী আব্দুল কাদের পেয়েছেন ৬৬৮ ভোট এবং প্রতিরোধ পর্ষদের প্রার্থী শেখ তাসনিম আফরোজ ইমি পেয়েছেন মাত্র ১১ ভোট।
নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই বিতর্ক শুরু হয়। আবিদুল ইসলাম খান ও উমামা ফাতেমা ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে কারচুপির অভিযোগ আনেন। আব্দুল কাদেরও ফলাফলের সমালোচনা করে প্রশাসনের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ করেন। তাদের অভিযোগ, নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে এবং সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখা হয়নি। তবে বিজয়ী প্রার্থী সাদিক কায়েম দাবি করেছেন, ভোটের সময় ছাত্রদলের পক্ষ থেকেই অনিয়ম করা হয়েছে এবং প্রশাসন তাদের অনৈতিক সুবিধা দিয়েছে।
বিজয়ী সাদিক কায়েম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি। বর্তমানে তিনি সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। রাজনৈতিক অঙ্গনে সক্রিয় ও প্রখর বক্তা হিসেবে তার সুনাম রয়েছে। এবারের নির্বাচনে জয় তার ব্যক্তিগত রাজনৈতিক অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করেছে বলে মনে করছেন অনেকে।
নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শুরু হয় মঙ্গলবার সকাল ৮টায় এবং চলে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে মোট ৮টি কেন্দ্র ও ৮১০টি বুথে শিক্ষার্থীরা ভোট দেন। এ বছর ডাকসু ও হল সংসদ মিলে মোট ভোটার ছিলেন ৩৯ হাজার ৮৭৪ জন। এর মধ্যে পাঁচটি ছাত্রী হলে ১৮ হাজার ৯৫৯ জন ভোটার এবং ১৩টি ছাত্র হলে ২০ হাজার ৯১৫ জন ভোটার ছিলেন।
ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার পর রাত ২টার দিকে ফলাফল ঘোষণা শুরু হয়। জগন্নাথ হল ছাড়া অন্য সব হলে বড় ব্যবধানে জয় পান সাদিক কায়েম। তবে জগন্নাথ হলে তিনি মাত্র ১০ ভোট পান, যেখানে ছাত্রদলের প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান পান ১ হাজার ২৭৬ ভোট। এর বাইরে অন্য সব হলে সাদিক কায়েমের জয়ের ব্যবধান এতটাই বেশি ছিল যে সামগ্রিক ফলাফল তার দিকেই চলে যায়।
ডাকসুতে এবার মোট ২৮টি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে। এসব পদের জন্য লড়েছেন ৪৭১ জন প্রার্থী। পাশাপাশি প্রতিটি হল সংসদে ১৩টি করে পদ থাকায় ১৮টি হলে মোট ২৩৪টি পদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে ১ হাজার ৩৫ জন প্রার্থীর। সব মিলিয়ে শিক্ষার্থীদের দিতে হয়েছে ৪১টি ভোট। এত বড় পরিসরে নির্বাচন হওয়ায় এটি ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়।
যদিও ফলাফলে বিপুল ব্যবধান নিয়ে বিজয়ী হয়েছেন সাদিক কায়েম, তবে নির্বাচনকে ঘিরে যে অনিয়ম, বর্জন ও কারচুপির অভিযোগ উঠেছে তা পুরো প্রক্রিয়াটিকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। উমামা ফাতেমা বলেছেন, “এটি ছিল সম্পূর্ণ নির্লজ্জ কারচুপির নির্বাচন।” আবিদুল ইসলাম খানও প্রায় একই ধরনের বক্তব্য দিয়ে নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছেন। এদিকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। অনেকেই মনে করছেন, এত বছরের পর ডাকসু নির্বাচন হলেও কাঙ্ক্ষিত স্বচ্ছতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা আসেনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে এবারের ডাকসু নির্বাচন আবারও প্রমাণ করল যে ক্যাম্পাস রাজনীতি কতটা জটিল এবং বিতর্কিত। বিপুল ব্যবধানে বিজয়ী হয়ে সাদিক কায়েম নতুন ইতিহাস রচনা করলেও বিরোধী প্রার্থীদের অভিযোগ এবং শিক্ষার্থীদের প্রশ্নবোধক দৃষ্টিভঙ্গি নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে গভীর বিতর্ক তৈরি করেছে। এখন দেখার বিষয়, প্রশাসন আনুষ্ঠানিকভাবে বিজয়ী ঘোষণা কবে করে এবং নির্বাচনের পরবর্তী রাজনৈতিক অঙ্গন কোন দিকে মোড় নেয়।
বাংলাবার্তা/এমএইচ