
ছবি: সংগৃহীত
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হলো বহুল প্রতীক্ষিত কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন। দীর্ঘ বিরতির পর অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনে শিক্ষার্থীদের ব্যাপক আগ্রহ দেখা গেলেও অনিয়ম ও অভিযোগ ছাড়েনি নির্বাচনকে। মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলে একযোগে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়। প্রশাসন ও নির্বাচনী কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে, সামগ্রিকভাবে পরিবেশ শান্তিপূর্ণ ছিল। তবে ছাত্র সংগঠনগুলো পাল্টাপাল্টি অভিযোগ তুলেছে অনিয়ম নিয়ে।
ভোটগ্রহণ শুরু হয় সকাল ৮টায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসজুড়ে উৎসবমুখর পরিবেশ দেখা গেলেও প্রতিটি কেন্দ্রে ছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া পাহারা। সকাল থেকেই বিভিন্ন হলে লাইনে দাঁড়িয়ে শিক্ষার্থীদের ভোট দিতে দেখা যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের আটটি কেন্দ্রে মোট ৮১০টি বুথে ভোটগ্রহণ হয়। বিকেল ৪টায় ভোটগ্রহণ শেষ হলে কেন্দ্রগুলোর গেট বন্ধ করে দেওয়া হয়। তবে গেটের বাইরে উচ্ছ্বসিত শিক্ষার্থীদের ভিড় দেখা গেছে।
প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, মোট ভোটার সংখ্যা ছিল প্রায় ৩৯ হাজার ৮৭৪ জন। এর মধ্যে পাঁচটি ছাত্রী হলে ১৮ হাজার ৯৫৯ ভোটার এবং ১৩টি ছাত্র হলে ২০ হাজার ৯১৫ জন ভোটার ছিলেন।
শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট হলেও অভিযোগেরও কমতি ছিল না। বিভিন্ন হলে আগে থেকেই ক্রস চিহ্ন দেওয়া ব্যালট পাওয়ার অভিযোগ তুলেছে শিবির ও ছাত্রদল। এ নিয়ে দুই সংগঠন একে অপরকে দায়ী করে। বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদ প্যানেলও ভোটে অনিয়মের অভিযোগ করেছে।
ভোটের শেষ সময়ের দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্ব ইনসানিয়াত বিপ্লব স্টুডেন্ট ফ্রন্ট সমর্থিত ভিপি প্রার্থী তাহমিনা আক্তার ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন। তিনি অভিযোগ করেন, সুষ্ঠু পরিবেশে ভোটগ্রহণ হয়নি।
এবারের নির্বাচনে মোট ২৮টি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন ৪৭১ জন প্রার্থী। হল সংসদ নির্বাচনে ১৮টি হলে ২৩৪টি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন ১ হাজার ৩৫ জন প্রার্থী। আংশিক ও পূর্ণাঙ্গ মিলিয়ে অন্তত ১০টি প্যানেল অংশ নেয়। এছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও ভোটের লড়াইয়ে ছিলেন।
প্রধান প্রধান সংগঠন ও তাদের প্রার্থীরা হচ্ছেন—
-
জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল (ছাত্রদল) : ভিপি পদে আবিদুল ইসলাম খান, জিএস পদে শেখ তানভীর বারী হামিম এবং এজিএস পদে তানভীর আল হাদী মায়েদ।
-
ছাত্রশিবির : ভিপি পদে আবু সাদিক কায়েম, জিএস পদে এস এম ফরহাদ এবং এজিএস পদে মুহা. মহিউদ্দীন খান।
-
বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ (বাগছাস) : ভিপি পদে আব্দুল কাদের, জিএস পদে আবু বাকের মজমুদার ও এজিএস পদে আশরেফা খাতুন।
-
সাতটি বাম সংগঠনের ‘প্রতিরোধ পর্ষদ’ : ভিপি পদে শেখ তাসনীম আফরোজ ইমি, জিএস পদে মেঘমল্লার বসু এবং এজিএস পদে জাবির আহমেদ জুবেল।
-
স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য (উমামা ফাতেমার নেতৃত্বে) : ভিপি পদে উমামা ফাতেমা, জিএস পদে আল সাদী ভূঁইয়া এবং এজিএস পদে জাহেদ আহমদ।
-
অপরাজেয় ৭১–অদম্য ২৪ (ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্রফ্রন্ট, বিসিএল-জাসদ জোট) : ভিপি পদে নাইম হাসান হৃদয়, জিএস পদে এনামুল হাসান অনয় এবং এজিএস পদে অদিতি ইসলাম।
-
ছাত্র অধিকার পরিষদ : ভিপি পদে বিন ইয়ামিন মোল্লা, জিএস পদে সাবিনা ইয়াসমিন এবং এজিএস পদে রাকিবুল ইসলাম।
-
এছাড়া ভিন্নধর্মী ইশতেহার দিয়ে আলোচনায় এসেছেন স্বতন্ত্র ভিপি প্রার্থী শামীম হোসেন, যিনি ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী।
ভোটের দিন সার্বিক পরিবেশ শান্তিপূর্ণ বলে দাবি করেছেন প্রশাসন ও নির্বাচন কর্তৃপক্ষ। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মন্তব্য করেছেন, "এই নির্বাচন সবার জন্য একটি মডেল হয়ে থাকবে।" তবে ছাত্র সংগঠনগুলোর অনেকেই ভিন্নমত পোষণ করেছে।
বাগছাসের ভিপি প্রার্থী আব্দুল কাদের বলেছেন, "আমরা এমন ডাকসু নির্বাচন চাইনি। সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে কর্তৃপক্ষ ব্যর্থ হয়েছে।" অপরদিকে ছাত্রশিবির ও ছাত্রদল একে অপরের বিরুদ্ধে ব্যালট অনিয়মের অভিযোগ তুলেছে।
ভোট চলাকালে দায়িত্ব পালনকালে একজন সাংবাদিকের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এ ঘটনাও নির্বাচনী পরিবেশে ছায়া ফেলেছে।
ডাকসু নির্বাচন বরাবরই বাংলাদেশের শিক্ষাঙ্গন ও জাতীয় রাজনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এখান থেকেই অতীতে জাতীয় নেতৃত্ব উঠে এসেছে। দীর্ঘদিনের স্থবিরতার পর আবারও এই নির্বাচন শিক্ষার্থীদের কাছে নতুন প্রত্যাশা জাগিয়েছে। তবে অনিয়ম, অভিযোগ ও বর্জনের কারণে অনেকেই বলছেন, এই নির্বাচনও বিতর্ক এড়াতে পারেনি।
বাংলাবার্তা/এমএইচ