
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশের ছোট পর্দার তরুণ অভিনেতা আরশ খান অল্প সময়ের মধ্যেই দর্শকদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন। ধারাবাহিক নাটক ও টেলিফিল্মে তার অভিনয় প্রতিভা প্রশংসিত হচ্ছে নিয়মিত। তবে এবার তিনি আলোচনায় এসেছেন অভিনয়ের জন্য নয়, বরং নিজের ব্যক্তিগত জীবনের এক অভিজ্ঞতা নিয়ে খোলাখুলি স্বীকারোক্তির কারণে। সম্প্রতি ফেসবুকে ধূমপান ও ভেপিং-এর ক্ষতি নিয়ে একটি দীর্ঘ স্ট্যাটাস দেন আরশ। তার সেই পোস্ট দ্রুতই ভাইরাল হয়ে পড়ে এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়।
স্কুল জীবনের ভুল সিদ্ধান্ত
পোস্টে আরশ খান উল্লেখ করেন, কৈশোর বয়সে বন্ধুদের সাথে তাল মেলাতে গিয়ে তিনি প্রথম সিগারেট ধরেন। তখনকার উদ্দেশ্য ছিল বন্ধুদের চোখে নিজেকে ‘ফ্লেক্স’ করা বা স্টাইলিশ দেখানো। কিন্তু সেই একবারের সিদ্ধান্তই তার জীবনে দীর্ঘ ১৯ বছরের অভ্যাসে পরিণত হয়।
তিনি লিখেছেন, “স্কুল জীবনে ফ্লেক্স করতে যেয়ে বন্ধুদের সাথে সিগারেট খাওয়া শুরু করেছিলাম। ১৯ বছর শেষ। আমার ফুসফুসও প্রায় শেষের দিকে। এখন ফ্লেক্সের বিষয় বস্তু অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।”
এই বক্তব্য থেকেই বোঝা যায়, কীভাবে সামান্য এক কৌতূহল বা দম্ভবোধ সময়ের সাথে ভয়ংকর অভ্যাসে রূপ নেয় এবং শরীরের ওপর দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতি ডেকে আনে।
সিগারেট থেকে ভেপ—আরও ভয়াবহ অভিজ্ঞতা
ধূমপান ছাড়ার জন্য ভেপের সাহায্য নেওয়ার কথাও খোলাখুলি জানিয়েছেন আরশ। কিন্তু ভেপ তার শরীরের জন্য আরও বিপজ্জনক প্রমাণিত হয়েছে। তিনি লিখেছেন, “সিগারেট ছাড়ার জন্য ধরলাম ভেপ। গত ১৯ বছরে ফুসফুসের যা ১২ টা বেজেছিলো তার ৩ গুণ বেজেছে গত ৬ মাসে।”
অর্থাৎ, ১৯ বছরের ধূমপানেও যে পরিমাণ ক্ষতি হয়নি, ভেপ মাত্র কয়েক মাসেই তার ফুসফুসকে আরও ভয়াবহ অবস্থায় নিয়ে গেছে।
সুস্থ থাকার পরামর্শ
তার পোস্টে আরশ স্পষ্ট করে বলেন, সুস্থ থাকা ছাড়া জীবনে আসল ‘ফ্লেক্স’ আর কিছু নেই। তিনি লিখেছেন, “বিশ্বাস করো, সুস্থ থাকার চেয়ে বড় ফ্লেক্স আর কিছু নাই।”
এছাড়া তিনি তরুণ প্রজন্মকে সতর্ক করে বলেন, যারা এখন ধূমপান শুরু করার কথা ভাবছে, তারা যেন এই পথ থেকে দূরে থাকে। কারণ একবার অভ্যাস তৈরি হলে তা থেকে বের হয়ে আসা ভীষণ কঠিন।
ফুসফুসের ভয়ংকর বাস্তবতা
আরশ খান আরও জানান, ধূমপায়ী যদি ধূমপান ছাড়ে এবং ফুসফুসে বড় কোনো ক্ষত না থাকে, তবে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে সময় লাগে অন্তত ৯ মাস। তবে অনেক ক্ষতি এমনভাবে স্থায়ী হয়ে যায় যা কোনোদিনই ঠিক হয় না।
তিনি বলেন, “ভেপের দ্বারা ফুসফুসের যে ক্ষতি হয় তার কোনো চিকিৎসা নেই, কোনো ঔষধ নেই। পুরো জীবনের জন্য ঐ অংশ অকেজো হয়ে যায়।”
শেষ সতর্কবার্তা
তার আবেগঘন পোস্টের শেষ অংশে তিনি সিগারেট ও ভেপের সম্পর্ককে প্রেমিকার সাথে তুলনা করেন। তিনি লিখেছেন, “সিগারেট এমন প্রেমিকা, যাকে ছাড়লে একদম ছেড়ে দিতে হবে। সিগারেট ছাড়তে গিয়ে ভেপ নামক প্রেমিকাকে রিবাউন্ড বানানো যাবে না। ভাবিয়া করিও কাজ, আমার মতন করিয়া ভাবিও না।”
সমাজে প্রতিক্রিয়া
আরশ খানের এই পোস্ট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। অনেকেই তার অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে ধূমপান ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন বলে মন্তব্য করেছেন। অনেকে আবার বলেছেন, একজন জনপ্রিয় অভিনেতা প্রকাশ্যে এই স্বীকারোক্তি দেওয়ায় তরুণদের সচেতন হওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে।
ধূমপান ও ভেপ নিয়ে আরশ খানের অভিজ্ঞতা নিঃসন্দেহে তরুণ সমাজের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা। অভ্যাসের শুরুটা হয়তো সহজ, কিন্তু তা থেকে মুক্তি পাওয়া কঠিন। সিগারেট বা ভেপ কোনোটিই ‘স্টাইল’ নয়, বরং ধীরে ধীরে জীবনকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়। তাই আরশ খানের মতো বাস্তব অভিজ্ঞতা হয়তো তরুণদের সচেতন করবে এবং সুস্থ থাকার আসল ফ্লেক্সটা খুঁজে পেতে সাহায্য করবে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ