
ছবি: সংগৃহীত
ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি হামলা অব্যাহত থাকায় ইয়েমেনের হুথি আন্দোলন ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ক্রমবর্ধমান হুমকি সৃষ্টি করছে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী হুথিদের ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা প্রতিহত করতে ব্যস্ত থাকলেও, হুথিরা সামান্য হলেও ইসরায়েলের নিরাপত্তা ও স্থাপনা লক্ষ্য করে তীব্র হামলা চালাচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে হুথিদের হামলার লক্ষ্য ইসরায়েলের দক্ষিণের রামন বিমানবন্দর ও লোহিত সাগরে বাণিজ্যিক জাহাজ।
গত বৃহস্পতিবার ইসরায়েল নিখুঁত হামলা চালিয়ে হুথিদের প্রধানমন্ত্রী আহমেদ আল-রাহাবিকে হত্যা করেছে। তবে হুথিরা সাহস হারায়নি। বরং তারা পূর্বেই ঘোষণা করা হামলা বাস্তবায়ন করেছে। রোববার তাদের ছোড়া ড্রোন ইসরায়েলের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেদ করে রামন বিমানবন্দরে আঘাত হানেছে, ফলে দেশটির আকাশসীমা ও বিমান চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ রাখতে হয়েছে।
জেরুজালেম পোস্ট জানায়, সেপ্টেম্বরে ইয়েমেন থেকে নিক্ষেপ করা কয়েক ডজন ড্রোন ও ভূমি থেকে ভূমিতে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলি বিমানবাহিনী (আইডিএফ) প্রতিহত করেছে। তবে এখন হুথি হামলা নিয়মিত হয়ে উঠছে। মাঝে মাঝে আইডিএফের স্বয়ংক্রিয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ব্যর্থ হচ্ছে। বিশেষ করে পশ্চিম নেগেভে হুথি ড্রোন আঘাত হানা এবং রামন বিমানবন্দরে হামলার ঘটনায় ইসরায়েল তাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য হচ্ছে।
হুথিরা মূলত ইরান থেকে ড্রোন তৈরির প্রযুক্তি শিখেছে। ২০১৫-২০২১ সালের মধ্যে তারা সৌদি আরবের বিরুদ্ধে ড্রোন ব্যবহার শুরু করে। এই সময় হুথিরা রাডার, বিমানবন্দর ও অন্যান্য স্থাপনায় হামলার দক্ষতা অর্জন করে। তারা এখন নিজস্ব ড্রোন উৎপাদন করতে সক্ষম, এবং কিছু ড্রোনের মধ্যে রয়েছে লম্বা টিউব, ওয়ারহেড এবং গাইডেন্স সিস্টেম। হুথিরা ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র তৈরিতেও সক্ষমতা অর্জন করেছে।
২০২১ সালের স্যাটেলাইট ছবি থেকে দেখা যায়, হুথিরা শাহেদ-১৩৬ ড্রোন উৎপাদন করছে, যা প্রযুক্তি ইরান থেকে এসেছে। ইরান এই ড্রোনগুলো রাশিয়াতেও সরবরাহ করেছে, যা রাশিয়া ইউক্রেনে ব্যবহার করছে। হুথিরা তুলনামূলকভাবে সস্তা ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে সৌদি ও ইসরায়েলের স্থাপনা লক্ষ্য করতে সক্ষম হচ্ছে।
বার্তা সংস্থা এপি জানায়, হুথিরা লোহিত সাগরের চলাচলকারী বাণিজ্যিক জাহাজগুলোকে লক্ষ্য করে হামলা বাড়ানোর হুমকি দিয়েছে। হুথি মিডিয়া অফিসের উপপ্রধান নাসরুদ্দিন আমের সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন, “শত্রু দেশটির বিমানবন্দরগুলো আমরা অনিরাপদ করে তুলব। ইসরায়েলি বিমানবন্দর ব্যবহার ত্যাগ করতে বিদেশিদের বাধ্য করা হবে।”
হুথি ড্রোন হামলার ফলে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। গত মে মাসে ইসরায়েলের প্রধান বিমানবন্দরের কাছে হুথি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানে, এতে চারজন আহত হন। অনেক বিমান সংস্থা কয়েক মাস ধরে ইসরায়েলে ফ্লাইট বাতিল করেছে। পরে হুথি নিয়ন্ত্রিত ইয়েমেনের সানা বিমানবন্দরে হামলা চালিয়ে ক্ষতি করেছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, হুথিরা এখনও আংশিক হলেও ইসরায়েলের জন্য ভয়ের উৎস হিসেবে কাজ করছে। ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ক্রমবর্ধমান এবং হুথিরা নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করে হামলা আরও শক্তিশালী করছে। এর ফলে ইসরায়েলকে তাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থার পুনর্মূল্যায়ন ও বিমানবন্দর, বাণিজ্যিক জাহাজ এবং দক্ষিণাঞ্চলের রিসোর্ট শহরের সুরক্ষা জোরদার করতে হচ্ছে।
হুথির এই সাম্প্রতিক হুমকি ইসরায়েলি সেনাবাহিনীকে তাদের প্রতিরক্ষা কৌশল পুনর্বিবেচনার দিকে বাধ্য করছে। তেলআবিবের সামরিক বিশ্লেষকরা বলছেন, হুথি হামলা ইসরায়েলের জন্য প্রতিনিয়ত উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, এবং সামরিক ও বাণিজ্যিক লক্ষ্যবস্তু রক্ষা করতে তাদের কৌশল আরও শক্ত করতে হচ্ছে।
সূত্র: এপি, এনবিসি, জেরুজালেম পোস্ট
বাংলাবার্তা/এমএইচ