
ছবি: সংগৃহীত
নেপালে টানা কয়েকদিন ধরে সহিংস বিক্ষোভ, সংঘর্ষ ও রাজনৈতিক অস্থিরতা চরম আকার ধারণ করেছে। এর ফলে দেশটিতে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের জন্য মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) জরুরি সতর্কবার্তা জারি করেছে কাঠমান্ডুতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস। দূতাবাস তাদের বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, নেপালে বর্তমানে অবস্থানরত বা আটকে পড়া সকল বাংলাদেশি নাগরিককে বাইরে বের না হতে এবং নিজ নিজ বাসস্থান বা হোটেলে নিরাপদে অবস্থান করতে কঠোরভাবে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে যারা নেপালে ভ্রমণের পরিকল্পনা করছেন, তাদের আপাতত দেশটিতে না যাওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
দূতাবাস বলেছে, নেপালে চলমান সহিংসতা ও নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতির কারণে বাংলাদেশিদের বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি। এ ছাড়া, কেউ যদি জরুরি পরিস্থিতির সম্মুখীন হন, তবে তাৎক্ষণিকভাবে নিচের দূতাবাস কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে—
-
মি. সাদেক: +৯৭৭ ৯৮০৩৮৭২৭৫৯
-
মিসেস সারদা: +৯৭৭ ৯৮৫১১২৮৩৮১
উল্লেখ্য, গত ৪ সেপ্টেম্বর নেপাল সরকার হঠাৎ করে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, ইনস্টাগ্রাম, ইউটিউবসহ ২৬টি জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধের ঘোষণা দেয়। সরকারের দাবি ছিল, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে অরাজকতা সৃষ্টি হচ্ছিল। কিন্তু এ সিদ্ধান্তের পর থেকে রাজধানী কাঠমান্ডুসহ দেশজুড়ে তরুণ প্রজন্ম বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। বিশেষ করে জেনারেশন-জি বা তরুণ প্রজন্মের উদ্যোগে গড়ে ওঠা আন্দোলনের নাম দেওয়া হয় ‘জেন-জি রেভল্যুশন’।
সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) আন্দোলনকারীরা পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে পার্লামেন্ট ভবনের সংরক্ষিত এলাকায় প্রবেশের চেষ্টা করলে ভয়াবহ সংঘর্ষ শুরু হয়। নিরাপত্তা বাহিনী টিয়ার গ্যাস ও লাঠিচার্জ চালিয়ে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে থাকে। এ সময় রাস্তায় রাস্তায় শুরু হয় সংঘর্ষ, আগুন দেওয়া হয় সরকারি ভবন ও যানবাহনে। কেবল সোমবারের সহিংসতায় অন্তত ১৯ জন নিহত হন—তাদের মধ্যে রাজধানী কাঠমান্ডুতেই ১৭ জন এবং পূর্বাঞ্চলীয় শহর ইতাহারিতে ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া, চার শতাধিক বিক্ষোভকারী গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
বিক্ষোভে প্রাণহানির দায় নিয়ে আগেই পদত্যাগ করেন নেপালের কয়েকজন মন্ত্রী। তবে পরিস্থিতি শান্ত হয়নি। বরং জনগণের ক্ষোভ আরও বাড়তে থাকে। কাঠমান্ডুসহ বিভিন্ন শহরে কারফিউ জারি করে প্রশাসন। কিন্তু বিক্ষোভকারীরা কারফিউ উপেক্ষা করে দ্বিতীয় দিনের মতো রাজপথে নামে।
মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) বিক্ষোভ আরও ভয়াবহ রূপ নেয়। আন্দোলনকারীরা প্রধানমন্ত্রী ও প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ে হামলা চালায়। এমনকি নেপালের পার্লামেন্ট ভবনে ঢুকে সেখানে অগ্নিসংযোগ করে তারা। রাজধানীর বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও মন্ত্রীদের বাড়িতেও হামলার খবর পাওয়া গেছে। দেশজুড়ে অরাজকতা ছড়িয়ে পড়ায় সব ধরনের বিমান চলাচল বন্ধ করে দেয় নেপাল সরকার।
অবশেষে, ক্রমবর্ধমান সহিংসতা, রক্তপাত এবং জনগণের তীব্র চাপের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ান কেপি শর্মা ওলি। তার পদত্যাগে বিক্ষোভকারীদের দাবি আংশিক পূরণ হলেও নেপালের রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা আরও ঘনীভূত হয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, অলি সরকারের পতনের পর দেশটিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হলেও অচিরেই স্থিতিশীলতা ফিরবে—এমন নিশ্চয়তা নেই।
এমন পরিস্থিতিতে নেপালে অবস্থানরত বাংলাদেশি শিক্ষার্থী, পর্যটক ও প্রবাসী শ্রমিকদের মধ্যে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকেই দেশে ফিরে আসতে চাইছেন, কিন্তু বিমান চলাচল বন্ধ থাকায় তারা এখনো অপেক্ষায় আছেন। দূতাবাস তাদের নিরাপদে অবস্থান নিশ্চিত করতে ২৪ ঘণ্টা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে।
বাংলাদেশের কূটনৈতিক সূত্র বলছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলে নেপালে আটকে পড়া বাংলাদেশিদের দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা হবে। তবে তার আগে তাদের নিজ নিজ স্থানে নিরাপদে থাকা অত্যন্ত জরুরি।
বাংলাবার্তা/এমএইচ