
ছবি: সংগৃহীত
গরমের দিনে সুস্থ থাকার জন্য শরীরে পর্যাপ্ত পানি ও তরল খাবার গ্রহণ অপরিহার্য। প্রচণ্ড গরমে ঘেমে শরীর থেকে পানি বের হয়ে যায় এবং অনেকে পানিশূন্যতায় ভোগেন। এ সময় হিটস্ট্রোকের ঝুঁকিও বেড়ে যায়। শরীর ঠান্ডা রাখা ও পানিশূন্যতা পূরণের অন্যতম ভালো উপায় হলো দই খাওয়া। দই শুধু শরীর ঠান্ডাই রাখে না, বরং দ্রুত খাবার হজম করতেও সহায়তা করে। প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় এক বাটি দই রাখলে শরীরের টক্সিন বের হয়ে যায়, হজমশক্তি বাড়ে এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সক্রিয় থাকে।
দই হলো ক্যালসিয়াম, ভিটামিন বি-২, ভিটামিন বি-১২, ম্যাগনেসিয়াম ও পটাসিয়াম সমৃদ্ধ একটি খাবার। এটি খেলে হাড় মজবুত হয়, দাঁত ভালো থাকে এবং পাচনতন্ত্র সক্রিয় থাকে। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, দই স্বাস্থ্যকর হলেও এটি সব খাবারের সঙ্গে খাওয়া যায় না। কিছু কিছু খাবারের সঙ্গে দই একসঙ্গে খেলে শরীরে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে, হজমে সমস্যা তৈরি হতে পারে, এমনকি টক্সিন তৈরি হয়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও দুর্বল হয়ে যেতে পারে।
দইয়ের সঙ্গে যেসব খাবার একসঙ্গে খাবেন না
১. দই ও পেঁয়াজ
অনেক সময় সালাদ বা চাটনির মধ্যে দই-পেঁয়াজ একসঙ্গে ব্যবহার করা হয়। কিন্তু এই সংমিশ্রণ শরীরের জন্য ভালো নয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, দই হলো ঠান্ডা প্রকৃতির খাবার, আর পেঁয়াজ শরীরে তাপ উৎপন্ন করে। এই ঠান্ডা ও গরমের মিশ্রণ শরীরে গিয়ে ত্বকের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এর ফলে র্যাশ, একজিমা, সোরিয়াসিস এবং অ্যালার্জির মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। পাশাপাশি পেটের সমস্যা, অ্যাসিডিটি, গ্যাস, এমনকি বমিভাবও হতে পারে। তাই দই এবং পেঁয়াজ একসঙ্গে না খাওয়াই ভালো।
২. আম ও দই
গরমের মৌসুমে অনেকেই আম কেটে দইয়ের সঙ্গে মিশিয়ে খেতে ভালোবাসেন। স্বাদে এটি আকর্ষণীয় হলেও শরীরের জন্য ক্ষতিকর। কারণ আম ও দই একসঙ্গে খেলে শরীরে টক্সিন তৈরি হয়। আম প্রকৃতিগতভাবে গরম প্রকৃতির ফল আর দই ঠান্ডা প্রকৃতির খাবার। এই ঠান্ডা ও গরমের দ্বন্দ্ব শরীরের ভেতর ক্ষতিকর প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। ফলে পেটের সমস্যা, অ্যালার্জি, এমনকি ইমিউন সিস্টেম দুর্বল হয়ে যেতে পারে। তবে আমের সঙ্গে দুধ খেলে কোনো ক্ষতি নেই, কিন্তু দইয়ের সঙ্গে আম খাওয়া এড়িয়ে চলা উচিত।
৩. মাছ ও দই
বাংলাদেশে অনেকেই মাছ রান্নায় দই ব্যবহার করেন বা একসঙ্গে খেয়ে থাকেন। তবে চিকিৎসকরা বলছেন, মাছ ও দই একসঙ্গে খাওয়া শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। কারণ মাছ ও দই দুটিই প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার। একসঙ্গে খেলে হজমে সমস্যা হয়, বদহজম দেখা দিতে পারে এবং পেটের অন্যান্য জটিলতা তৈরি হতে পারে। পাশাপাশি শরীরে দীর্ঘমেয়াদে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তাই যতই সুস্বাদু মনে হোক না কেন, দইয়ের সঙ্গে মাছ খাওয়া এড়িয়ে চলা জরুরি।
৪. ভাজাভুজি ও দই
অনেকে ভাজা পরোটা বা অন্যান্য ভাজাভুজির সঙ্গে দই খেতে পছন্দ করেন। দেখতে সুস্বাদু লাগলেও এই সংমিশ্রণ শরীরের জন্য ভালো নয়। তেলে ভাজা খাবারের সঙ্গে দই খেলে হজমশক্তি দুর্বল হয়ে যায়। এতে পেটে অস্বস্তি হয়, গ্যাস তৈরি হয় এবং শরীরে অলসতা আসে। শরীর হালকা হওয়ার পরিবর্তে ভারী হয়ে পড়ে। তাই ভাজাভুজির সঙ্গে দই খাওয়ার অভ্যাস থেকে বিরত থাকাই শ্রেয়।
দই নিঃসন্দেহে একটি পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্যকর খাবার। তবে সব ধরনের খাবারের সঙ্গে এটি একসঙ্গে খাওয়া যায় না। বিশেষ করে পেঁয়াজ, আম, মাছ এবং ভাজাভুজির সঙ্গে দই খাওয়া শরীরে টক্সিন তৈরি করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে দুর্বল করে দেয়। তাই দই খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে এবং সঠিকভাবে গ্রহণ করতে হবে। সুস্থ থাকতে চাইলে নিয়মিত দই খান, তবে সঠিক নিয়ম মেনে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ