
ছবি: সংগৃহীত
মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী অঞ্চলে সক্রিয় সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি তাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখছে মূলত মাদক ব্যবসার ওপর নির্ভর করে—এমন মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) সচিবালয়ে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ মন্তব্য করেন।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “বর্তমানে দেশে প্রচুর পরিমাণে মাদক প্রবেশ করছে। তবে আগের তুলনায় বেশি পরিমাণ মাদক ধরা পড়ছে। নতুন নতুন ধরণের মাদক বাজারে ছড়িয়ে পড়ছে, যা আগে আমাদের সমাজে দেখা যেত না। বিশেষ করে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন হোটেল ও অভিজাত এলাকায় এসব মাদক দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করলেও এখনো পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারিনি। যদি মাদক নিয়ন্ত্রণ করা না যায়, তাহলে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ভয়াবহ বিপদের মুখে পড়বে।”
তিনি আরও বলেন, মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী এলাকায় আরাকান আর্মির দখলদারিত্ব বেড়েছে। “আরাকান আর্মি বেঁচে আছে শুধু মাদক বিক্রির ওপর নির্ভর করে। তাদের প্রধান আয়ের উৎসই মাদক। মিয়ানমারের সীমান্ত এলাকার অনেকটাই তারা নিয়ন্ত্রণ করছে। তবে সম্প্রতি খবর পাওয়া যাচ্ছে যে, আরাকানরা কৃষিকাজের দিকে ঝুঁকছে। যদি তারা কৃষিকে বিকল্প আয় হিসেবে বেছে নেয়, তাহলে মাদক প্রবাহ কিছুটা হলেও কমে আসবে। এখন প্রতিদিন লাখ লাখ পিস ইয়াবা আমাদের হাতে ধরা পড়ছে।”
উপদেষ্টা জানান, আগে যেখানে ইয়াবাই ছিল সবচেয়ে বড় হুমকি, সেখানে এখন বিদেশি সিন্ডিকেটগুলো বাংলাদেশে আরও ভয়ঙ্কর ও নেশাসৃষ্টিকারী নতুন ধরণের মাদক পাঠাচ্ছে। এগুলো কেবল যুবসমাজ নয়, শিক্ষিত সমাজ ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোতেও দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। রাজধানীর বিভিন্ন রেস্তোরাঁ, ক্লাব ও হোটেলে এ ধরনের মাদক সেবনের প্রবণতা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে।
“যুবসমাজ যদি এই মাদকের কবলে পড়ে যায়, তাহলে শুধু ব্যক্তিগত জীবন নয়, গোটা জাতিই ধ্বংসের মুখে পড়বে,”—বলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।
বৈঠকে মাদক সমস্যা ছাড়াও খাদ্য নিরাপত্তা এবং জাতীয় সম্পদ রক্ষার বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। উপদেষ্টা জানান, এ বছর ইলিশের প্রজনন আশানুরূপ হয়নি। “আমরা খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি কেন এ বছর প্রজনন কম হলো এবং ভবিষ্যতে কীভাবে এর উৎপাদন বাড়ানো যায়। কারণ ইলিশ আমাদের জাতীয় সম্পদ, এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে লাখ লাখ জেলের জীবিকা।”
সভার আলোচনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন প্রসঙ্গও উঠে আসে। উপদেষ্টা বলেন, “গতকাল উপাচার্যের সঙ্গে ডাকসু নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। যারা ডাকসুতে ভোট দিচ্ছেন তারা সবাই শিক্ষিত সমাজের প্রতিনিধি। এখানকার প্রিজাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসাররাও উচ্চশিক্ষিত। যদিও এটি জাতীয় নির্বাচনের মতো পুরোপুরি এক নয়, তবে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মডেল হিসেবে কাজ করবে। আমরা চাই, জাতীয় নির্বাচন যেন শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর হয়।”
তিনি আরও যোগ করেন, জাতীয় নির্বাচনে জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য ডাকসু নির্বাচনের অভিজ্ঞতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। “আমরা এমন একটি নির্বাচন চাই যেখানে মানুষ ভোট দিতে আসবে উৎসবের আমেজে, কোনো ভয়-ভীতি ছাড়াই।”
বৈঠকে আসন্ন দুর্গাপূজা উপলক্ষে সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। সারাদেশে ৩৩ হাজার পূজামণ্ডপ স্থাপিত হবে বলে জানানো হয়। উপদেষ্টা বলেন, “এবার পূজা উদযাপন আরও শান্তিপূর্ণ করার জন্য প্রশাসন সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়েছে। তবে কিছু মহল অস্থিরতা সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে, আমরা সে ব্যাপারে সতর্ক আছি।”
সার্বিকভাবে বৈঠকের আলোচনায় উঠে এসেছে, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি মাদক ও সন্ত্রাসী চক্রের কারণে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়লেও সরকার নানা উদ্যোগ নিয়ে তা মোকাবিলা করছে। আরাকান আর্মির মতো সীমান্তবর্তী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো মাদক ব্যবসাকে প্রধান হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে, যা কেবল সীমান্ত অঞ্চল নয়, বাংলাদেশের ভেতরেও সামাজিক ও অর্থনৈতিক সংকট তৈরি করছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ