
ছবি: সংগৃহীত
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনকে ঘিরে দেশের রাজনৈতিক মহলে যেমন উত্তেজনা, তেমনি সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যেও উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা যাচ্ছে। দীর্ঘ বিরতির পর অনুষ্ঠিত এই নির্বাচন শুধু ছাত্র রাজনীতির ভবিষ্যৎ নির্ধারণেই নয়, বরং জাতীয় নির্বাচনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ‘মডেল’ হিসেবে কাজ করতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি ডাকসু নির্বাচনকে ঘিরে সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরেন।
বৈঠকে আলোচনার বিষয়সমূহ
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জানান, বৈঠকে শুধু ডাকসু নির্বাচনই নয়, সারা দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। বিশেষভাবে আলোচনায় এসেছে—
-
মাদক সমস্যা ও তার বিস্তার
-
চুরি, ছিনতাইসহ নগরীর নিরাপত্তা ইস্যু
-
ডাকসু ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচন
-
রোহিঙ্গা ইস্যু
-
সাগরে ইলিশ মাছের উৎপাদন সংকট
তিনি বলেন, মাদকের বিষয়টি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। কারণ মাদক এখন জাতীয় নিরাপত্তা ও সামাজিক স্থিতিশীলতার জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ডাকসু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বক্তব্য
ডাকসু নির্বাচনের প্রসঙ্গে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, “গতকাল উপাচার্যের সঙ্গে বসেছিলাম, তারা দুর্দান্ত প্রস্তুতি নিয়েছেন। মিডিয়াতেও দেখেছি, শিক্ষার্থীরা সুষ্ঠুভাবে ভোট দিচ্ছেন। দীর্ঘ সময় পর এই নির্বাচন হচ্ছে, অবশ্যই এটি একটি বড় মাইলফলক।”
তিনি আরও বলেন, “জাতীয় নির্বাচনের সঙ্গে ডাকসুর নির্বাচনকে এক করে দেখা যাবে না। তবে এটা অবশ্যই একটি মডেল হিসেবে কাজ করবে। কারণ এখানে প্রিজাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসার সবাই উচ্চশিক্ষিত। জাতীয় নির্বাচনে তা সবসময় সম্ভব হয় না। তবুও এই অভিজ্ঞতা জাতীয় পর্যায়ে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।”
বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা নাকচ
ডাকসু নির্বাচনকে ঘিরে কোনো ধরনের সহিংসতা বা বিশৃঙ্খলার তথ্য আছে কি না জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জানান, “আমাদের কাছে তেমন কোনো তথ্য নেই। শিক্ষার্থীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিচ্ছে। সকালে টিভিতে ভোটের ছবি দেখে মনটাই ভালো হয়ে গেছে।”
জাতীয় নির্বাচন প্রস্তুতি
জাতীয় নির্বাচন নিয়ে প্রশ্নের জবাবে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, “আমরা মূলত প্রস্তুতি ও প্রশিক্ষণ নিয়ে আলোচনা করেছি। পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ইতোমধ্যে তাদের প্রশিক্ষণ শুরু করেছে। আমাদের প্রশিক্ষণ গাইডলাইন তৈরি হয়েছে, সেটা যেন সবাই মেনে চলে—এটাই মূল লক্ষ্য।”
তিনি জানান, নির্বাচনের অর্থায়ন নিয়েও কিছু জটিলতা আছে। সন্ধ্যায় সচিবদের সঙ্গে আবার বসে সেই সমস্যার সমাধান খোঁজা হবে।
প্রযুক্তির ব্যবহার ও নির্বাচন পরিচালনা
বর্তমান সময়ে প্রযুক্তির সুবিধা ও চ্যালেঞ্জ নিয়েও কথা বলেন উপদেষ্টা। তিনি বলেন, “আগে কোনো ঘটনা ঘটলে খবর পৌঁছাতে অনেক সময় লাগত। এখন প্রযুক্তির উন্নতির কারণে মুহূর্তের মধ্যেই খবর পাওয়া যায়। এটা ভালো দিক হলেও অনেক ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি করে। তবে আমার মনে হয় নির্বাচন আয়োজন করতে কোনো অসুবিধা হবে না।”
প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য তুলে ধরে তিনি বলেন, “আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে শান্তিপূর্ণ, সুষ্ঠু এবং সবচেয়ে উৎসবমুখর পরিবেশে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করা।”
ইলিশ প্রসঙ্গে আলোচনা
বৈঠকে ইলিশ নিয়েও আলোচনা হয়। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “এবার ইলিশের প্রজনন কমেছে। ভবিষ্যতে হয়তো বাড়তে পারে। কিন্তু ট্রলারগুলোতে যে নতুন প্রযুক্তি এসেছে, সেটাতে পোনামাছসহ সবকিছু জালে উঠে যাচ্ছে। এ কারণে প্রজননে সমস্যা হচ্ছে। আমরা এ বিষয়েও আলোচনা করেছি, কীভাবে এটা নিয়ন্ত্রণ করা যায়।”
বাংলাবার্তা/এমএইচ