
ছবি: সংগৃহীত
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) বহুল প্রতীক্ষিত কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে শিক্ষার্থীদের বিপুল অংশগ্রহণ ঘটেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৩টার দিকে নির্বাচনের অগ্রগতি সম্পর্কে সাংবাদিকদের জানান যে, ইতোমধ্যে ৭০ শতাংশেরও বেশি ভোট পড়েছে এবং এই হার আরও বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।
সিনেট ভবনের তিনটি ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন উপাচার্য। তিনি বলেন, “ডাকসু নির্বাচনে স্বচ্ছতার কোনো ঘাটতি নেই। শিক্ষার্থীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিচ্ছেন। বিকেল ৪টার পরও যদি শিক্ষার্থীরা লাইনে থাকেন, তবে তাদের ভোট অবশ্যই নেওয়া হবে। আমরা চাই সবাই যেন ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পান।”
উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খান জানান, ডাকসু নির্বাচন এখন শুধুমাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই, এটি জাতীয় দাবিতে পরিণত হয়েছে। দীর্ঘ তিন যুগ পর অনুষ্ঠিত এ নির্বাচন ঘিরে ছাত্রসমাজে যে উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছে, তা তিনি গুরুত্ব দিয়ে উল্লেখ করেন। তার ভাষায়, “আমরা আশা করছি নির্বাচনে যারা বিজয়ী হবেন কিংবা যারা পরাজিত হবেন, সবাই ফলাফল মেনে নেবেন। কেননা, কোথাও কোনো ধরনের স্বচ্ছতার ঘাটতি নেই। এই নির্বাচন গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির নতুন দ্বার উন্মোচন করবে।”
নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ প্রসঙ্গে উপাচার্য স্বীকার করেন, কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছে, তবে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, কার্জন হলে এক ভোটারকে ভুলক্রমে দুটি ব্যালট দেওয়া হয়েছিল। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পরপরই সংশ্লিষ্ট পোলিং অফিসারকে দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার করা হয়। পাশাপাশি ঘটনার ওপর তদন্ত চলছে এবং এতে কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে জড়িত থাকলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এছাড়া টিএসসির ভোটকেন্দ্রে একজন ভোটারকে আগে থেকেই ‘ক্রস চিহ্ন’ দেওয়া একটি ব্যালট দেওয়ার অভিযোগও ওঠে। এ প্রসঙ্গে উপাচার্য জানান, “আমরা সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছি। এসব ছোটখাটো ঘটনা সামগ্রিক নির্বাচনী পরিবেশকে প্রভাবিত করতে পারেনি। শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণভাবে ভোট দিচ্ছেন।”
ভোটারদের বড় অংশই উপাচার্যের বক্তব্যের সঙ্গে একমত প্রকাশ করেছেন। তারা বলেন, এবার ডাকসু নির্বাচনে প্রশাসনের কড়া নজরদারি থাকায় বড় ধরনের অনিয়ম হয়নি। তবে কিছু শিক্ষার্থী অভিযোগ করেছেন যে, বিভিন্ন হলে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা হয়েছে। তাদের দাবি, এমন কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা নিয়ে স্বাধীন তদন্ত হওয়া প্রয়োজন।
১৯৯০ সালের পর থেকে ডাকসু নির্বাচন আর হয়নি। শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছিলেন নতুন নির্বাচনের। অবশেষে এ বছর ভোটের আয়োজন করায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে এক ধরনের উচ্ছ্বাস তৈরি হয়েছে। ভোটাররা মনে করছেন, এই নির্বাচন তাদের কণ্ঠস্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় প্রতিফলিত করবে।
উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা চাই এই নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব উঠে আসুক। ডাকসু বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি জাতীয় রাজনীতিতেও অবদান রাখবে। শিক্ষার্থীরা গণতান্ত্রিক চর্চায় অভ্যস্ত হবে এবং আগামী দিনে দেশের নেতৃত্বে তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।”
দিনের শেষ ভাগে ভোট গ্রহণ শেষ হলে উপস্থিতির হার আরও বাড়বে বলে আশা করছেন উপাচার্য। তিনি বিশ্বাস করেন, এই নির্বাচন ভবিষ্যতে দেশের গণতন্ত্র চর্চার জন্য এক মাইলফলক হয়ে থাকবে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ