
ছবি: সংগৃহীত
কাতারের রাজধানী দোহায় ইসরাইলের বিমান হামলায় অল্পের জন্য প্রাণে রক্ষা পেয়েছেন ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসের শীর্ষ নেতারা। হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর সদস্য সুহাইল আল-হিন্দি মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) রাতে আল জাজিরাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে নিশ্চিত করেছেন, সংগঠনের প্রধান নেতারা নিরাপদে আছেন। তবে তিনি স্বীকার করেন, এই হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন খলিল আল-হাইয়ার ছেলে হুমাম এবং তার এক ঘনিষ্ঠ সহযোগী। একই সঙ্গে অন্তত তিনজন দেহরক্ষীর সঙ্গে এখনও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
আল-হিন্দি তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, “যেকোনো প্রাণহানিই দুঃখজনক। নেতৃত্বের রক্ত যেমন মূল্যবান, তেমনি প্রতিটি ফিলিস্তিনি শিশুর রক্তও সমানভাবে মূল্যবান। এই হামলা শুধু হামাস বা কাতারের ওপর নয়, বরং এটি আরব, মুসলিম এবং স্বাধীনচেতা মানুষের ওপর সরাসরি আগ্রাসন।” তিনি আরও উল্লেখ করেন, যারা যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনায় বসেছিলেন, তাদের হত্যা করার চেষ্টা এক ভয়াবহ অপরাধ। মুক্ত বিশ্বকে তিনি আহ্বান জানিয়েছেন এই জঘন্য কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে একযোগে দাঁড়াতে।
মঙ্গলবার রাতেই দোহায় একাধিক বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। স্থানীয় সময় গভীর রাতে দোহার আকাশে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। প্রথমে প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম রয়টার্স এ খবর প্রকাশ করে। এরপর আল জাজিরা এবং কাতারের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থাও ঘটনাটি নিশ্চিত করে। বিস্ফোরণের পর ঘটনাস্থলে জরুরি সেবাদানকারী সংস্থার কর্মীরা ছুটে যান, তবে দীর্ঘসময় বিস্তারিত তথ্য গোপন রাখা হয়।
একইসঙ্গে ওয়াইনেট নিউজ, চ্যানেল ১২ ও কানের মতো ইসরাইলি গণমাধ্যম জানায়, কাতারে হামাস নেতাদের লক্ষ্যবস্তু করেই এ হামলা চালানো হয়। তাদের দাবি অনুযায়ী, যুদ্ধবিরতির জন্য সর্বশেষ মার্কিন প্রস্তাব নিয়ে আলোচনার সময় এই হামলা হয়। এ থেকেই স্পষ্ট হয়ে যায়, হামাস নেতাদের গুপ্তহত্যার লক্ষ্যেই ইসরাইল এ হামলা চালিয়েছে।
পরবর্তীতে ইসরাইলি সামরিক বাহিনী (আইডিএফ) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) এক পোস্টে হামলার বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করে। তারা জানায়, আইডিএফ এবং ইসরাইলি সিকিউরিটি এজেন্সি (আইএসএ) যৌথভাবে হামাস সন্ত্রাসী সংগঠনের শীর্ষ নেতৃত্বকে লক্ষ্য করে এই “সুনির্দিষ্ট হামলা” চালিয়েছে। যদিও কোন নেতাকে হত্যা করা সম্ভব হয়নি।
এই হামলা সংঘটিত হয়েছে এমন এক সময়, যখন কাতার মধ্যস্থতায় হামাস ও ইসরাইলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা চলছিল। যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি যে প্রস্তাব দিয়েছে, সেটি নিয়েই দোহায় বৈঠকে বসেছিলেন হামাস নেতারা। কূটনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, হামলার এই সময় নির্বাচন প্রমাণ করে ইসরাইল কূটনৈতিক সমাধানকে ব্যাহত করতে চেয়েছে।
কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাৎক্ষণিকভাবে এ হামলার নিন্দা জানায়। তারা এক বিবৃতিতে বলেছে, সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করে দোহায় হামলা চালানো শুধু কাতারের জন্য নয়, গোটা অঞ্চলের জন্যই হুমকিস্বরূপ। এ ছাড়া বিভিন্ন আরব রাষ্ট্র এবং মানবাধিকার সংগঠনও এই হামলার নিন্দা জানায়। তবে পশ্চিমা বিশ্ব, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র এখন পর্যন্ত কেবল উদ্বেগ প্রকাশ করেছে, কোনো কঠোর অবস্থান নেয়নি।
আল-হিন্দি আন্তর্জাতিক মহলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, “ইসরাইলের এই হামলার বিরুদ্ধে বাস্তব পদক্ষেপ নিতে হবে। শুধু নিন্দা আর বিবৃতি দিয়ে কোনো লাভ হবে না। আজ যদি হামাসের নেতাদের টার্গেট করা হয়, আগামীকাল অন্য যেকোনো আরব বা স্বাধীনচেতা নেতার ওপর এমন হামলা চালানো হতে পারে।”
কাতারের রাজধানীতে এমন হামলা মধ্যপ্রাচ্যের ভূ-রাজনীতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। ইসরাইলের এই পদক্ষেপ শুধু হামাসকেই নয়, কাতারসহ শান্তি প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিতে চাওয়া দেশগুলোকেও বিব্রত করেছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এ ধরনের হামলা চলতে থাকলে যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা আরও ক্ষীণ হয়ে পড়বে, আর ফিলিস্তিন-ইসরাইল সংঘাত আরও দীর্ঘায়িত হবে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ