
ছবি: সংগৃহীত
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে ব্যাপক ব্যবধানে জয় পেয়েছেন শিবির সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থী এস এম ফরহাদ। বহুল প্রতীক্ষিত এই নির্বাচনে তিনি ছাত্রদল সমর্থিত শেখ তানভীর বারী হামীম ও বামপন্থি প্রার্থী মেঘমল্লার বসুকে পেছনে ফেলে বিজয়ী হয়েছেন। দীর্ঘ সময় পর অনুষ্ঠিত ডাকসু নির্বাচনে ফরহাদের এই জয় শিবিরের জন্য এক বড় সাফল্য হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) সবগুলো কেন্দ্রের ভোট গণনা শেষে ঘোষিত ফলাফলে দেখা যায়, ফরহাদ পেয়েছেন মোট ১০ হাজার ৭৭৪ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রদল সমর্থিত শেখ তানভীর বারী হামীম পেয়েছেন ৫ হাজার ২৮৩ ভোট, যা ফরহাদের চেয়ে ৫ হাজার ৪৯১ ভোট কম। তৃতীয় স্থানে থাকা বাম সমর্থিত প্রার্থী মেঘমল্লার বসু পেয়েছেন ৪ হাজার ৬৪৫ ভোট। বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী প্যানেলের প্রার্থী আবু বাকের মজুমদার পেয়েছেন ৮৪৫ ভোট এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী আশিকুর রহমান পেয়েছেন মাত্র ৭৭ ভোট।
ফলাফলের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, প্রায় সব কেন্দ্রেই বড় ব্যবধানে জয় পেলেও জগন্নাথ হলে ফরহাদ মারাত্মক ভরাডুবির শিকার হন। সেখানে তিনি মাত্র ৫ ভোট পান। একই হলে মেঘমল্লার পান ১ হাজার ১৭০ ভোট এবং হামীম পান ৩৯৮ ভোট। ফলে ওই কেন্দ্রের ফলাফল সামগ্রিক ভোটে কোনো প্রভাব ফেলতে পারেনি। অন্যান্য হলে ফরহাদের বিপুল জয় নিশ্চিত হয়ে যায়।
এর আগে মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ডাকসুর ভোটগ্রহণ চলে। এবার বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের মোট ৮টি কেন্দ্র ও ৮১০টি বুথে শিক্ষার্থীরা ভোট দেন। নির্বাচনে মোট ভোটার ছিলেন ৩৯ হাজার ৮৭৪ জন। এর মধ্যে পাঁচটি ছাত্রী হলে ভোটার ছিলেন ১৮ হাজার ৯৫৯ জন এবং ১৩টি ছাত্র হলে ভোটার সংখ্যা ছিল ২০ হাজার ৯১৫।
মঙ্গলবার দিবাগত রাত ২টার দিকে ফলাফল ঘোষণা শুরু হয় এবং ভোরের দিকে একে একে কেন্দ্রগুলোর ফলাফল প্রকাশিত হয়। দীর্ঘ বিরতির পর অনুষ্ঠিত ডাকসুর এই নির্বাচন শিক্ষার্থীদের মধ্যে বেশ সাড়া ফেলে।
ডাকসুতে এবার মোট ২৮টি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে। এই পদগুলোতে প্রার্থী ছিলেন ৪৭১ জন। পাশাপাশি ১৮টি হলে প্রতিটি সংসদের ১৩টি করে মোট ২৩৪টি পদে লড়াই হয়েছে। সবগুলো মিলিয়ে ১ হাজার ৩৫ জন প্রার্থী অংশ নিয়েছেন এ নির্বাচনে। অর্থাৎ, প্রতিটি শিক্ষার্থীকে এবার মোট ৪১টি ভোট দিতে হয়েছে। এত বিপুল পরিসরে ভোটগ্রহণের কারণে এটি ছিল একটি ব্যতিক্রমী আয়োজন।
জিএস পদে ফরহাদের পাশাপাশি ভিপি পদেও জয় পেয়েছেন শিবির সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ জোটের প্রার্থী আবু সাদিক কায়েম। তিনি ১৪ হাজার ৪২ ভোট পেয়ে বড় ব্যবধানে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রদল সমর্থিত আবিদুল ইসলাম খান পেয়েছেন ৫ হাজার ৬৫৮ ভোট। ফলে ডাকসুর শীর্ষ দুটি পদেই জয় পেল শিবিরের প্রার্থীরা, যা সংগঠনটির জন্য বিশাল অর্জন বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
যদিও ফরহাদ ও সাদিক কায়েম বিপুল ভোটে জয়লাভ করেছেন, তবে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেছেন। ছাত্রদল ও বামপন্থি প্রার্থীদের অভিযোগ, নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে এবং প্রশাসন নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করেনি। বৈষম্যবিরোধী প্যানেলের প্রার্থী আবু বাকের মজুমদারও ফলাফলের সমালোচনা করেছেন।
ক্যাম্পাসজুড়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গেছে। অনেক শিক্ষার্থী শিবির সমর্থিত প্রার্থীদের জয়কে সংগঠনের সাংগঠনিক শক্তি ও কৌশলের সাফল্য হিসেবে দেখছেন। তবে আরেক অংশের শিক্ষার্থী বলছেন, নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি এবং অনিয়মের কারণে এর গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ। ফলে বিজয়ীরা যতোই ভোটের ব্যবধানে জয় পান না কেন, নির্বাচনের সার্বিক বৈধতা নিয়ে বিতর্ক থেকেই যাচ্ছে।
ডাকসুর ইতিহাসে এবারের নির্বাচন একটি বড় মোড় এনে দিয়েছে। শিবির সমর্থিত প্রার্থীরা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক—দুটি গুরুত্বপূর্ণ পদে জয়ী হওয়ায় সংগঠনটি নতুন শক্তি নিয়ে ক্যাম্পাস রাজনীতিতে নিজেদের উপস্থিতি জানান দিল। তবে ফলাফল ঘিরে ওঠা বিতর্ক, অনিয়মের অভিযোগ এবং প্রতিদ্বন্দ্বীদের বর্জন নির্বাচনের বৈধতা নিয়ে বড় প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। এখন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ভূমিকা এবং শিক্ষার্থীদের আস্থা পুনরুদ্ধার করাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
বাংলাবার্তা/এমএইচ