
ছবি: সংগৃহীত
নেপালে সামরিক বাহিনী সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্ব গ্রহণ করেছে। দেশের বিভিন্ন অংশে বিক্ষোভ ও অস্থিরতা ক্রমেই বাড়ায় নেপাল সেনাবাহিনী এই উদ্যোগ নিয়েছে। নিরাপত্তা পরিস্থিতি স্থিতিশীল করতে দেশটির অন্যান্য নিরাপত্তা সংস্থা ও স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে সেনাবাহিনী দায়িত্ব পালন করবে।
নেপাল সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল অশোক রাজ সিগদেল মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) রাতে একটি ভিডিও বার্তায় জানিয়েছেন, “বর্তমান কঠিন পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা এবং জাতির সর্বোচ্চ স্বার্থ রক্ষা করা সবার দায়িত্ব। বিক্ষোভ কর্মসূচি স্থগিত রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকে সংলাপের পথে আসার আহ্বান জানাচ্ছি।”
তিনি বলেন, সেনাবাহিনী শান্তিপূর্ণ সমাধান ও সংলাপের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান চায়। তবে, যদি কিছু গোষ্ঠী এই অস্থিরতাকে কাজে লাগিয়ে সাধারণ মানুষের জীবন ও সরকারি-বেসরকারি সম্পত্তির ক্ষতি করতে থাকে, তাহলে সেনাবাহিনী অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সম্পূর্ণ মোতায়েন হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেবে।
সেনাবাহিনী মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে নেপালের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নেয়। দেশজুড়ে নিরাপত্তার দায়িত্ব নেওয়া হলেও তারা সাধারণ জনগণকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছে। প্রতিরক্ষা জনসংযোগ অধিদপ্তরের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “যদি নির্ধারিত সতর্কবার্তার পরও কার্যকলাপ চলতে থাকে, সেনাবাহিনী অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে মিলে পূর্ণ মোতায়েন কার্যক্রম শুরু করবে। এরপর সামগ্রিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি পুনঃমূল্যায়ন করা হবে।”
নেপালে রাজনৈতিক অস্থিরতা দিন দিন তীব্র হচ্ছে। জেন-জি নেতাদের অনিয়মিত কর্মসূচি ও বিক্ষোভের কারণে সাধারণ নাগরিক ও সরকারি স্থাপনার নিরাপত্তা সংকটে পড়েছে। সেনাবাহিনী জনগণকে সতর্ক করে জানিয়েছে যে, অযথা সহিংসতা বা ভাঙচুরে জড়ালে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নেপালে সাম্প্রতিক সময়ে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে নিরাপত্তা পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল হয়ে উঠেছে। সেনাবাহিনীর এই পদক্ষেপকে অনেক বিশ্লেষক দেশটিতে অস্থায়ী শান্তি ও নিয়ন্ত্রণ ফিরিয়ে আনার প্রয়াস হিসেবে দেখছেন। নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সেনাবাহিনীর সরাসরি নিয়ন্ত্রণ পরিস্থিতি স্থিতিশীল করতে সহায়ক হতে পারে, তবে দীর্ঘমেয়াদে রাজনৈতিক সংলাপ ছাড়া সমস্যা স্থায়ী সমাধান পাওয়া কঠিন হবে।
বিশেষজ্ঞ ড. রঞ্জন শর্মা বলেন, “সেনাবাহিনীর মোতায়েন একদিকে ভয় কমাতে পারে, অন্যদিকে রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে সংলাপের জন্য চাপ সৃষ্টি করতে পারে। তবে এটি দীর্ঘমেয়াদে স্থায়ী সমাধান নয়; পরিস্থিতি স্থিতিশীল করতে রাজনৈতিক সংলাপ অপরিহার্য।”
নেপালের প্রতিরক্ষা অধিদপ্তর জনসাধারণকে সতর্ক করেছে যে, অস্থির পরিস্থিতি আরও বাড়তে পারে। তারা অনুরোধ করেছে, সাধারণ নাগরিকরা শান্ত থাকুন, অযথা ভাঙচুর বা সহিংসতায় অংশগ্রহণ করবেন না এবং সরকারি নির্দেশনা মেনে চলুন।
নেপালে সেনাবাহিনীর এই পদক্ষেপের মাধ্যমে দেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিক্ষোভকারীদের কর্মকাণ্ড এবং বিভিন্ন গোষ্ঠীর সংঘর্ষ এখনও সংকটের কারণ হিসেবে রয়ে গেছে। বিশ্লেষকরা মনে করেন, নিরাপত্তা পরিস্থিতি স্থিতিশীল করতে একদিকে সেনাবাহিনী মোতায়েন প্রয়োজন, অন্যদিকে রাজনৈতিক সংলাপ এবং সামাজিক সমঝোতা অপরিহার্য।
সর্বশেষ পরিস্থিতি অনুযায়ী, সেনাবাহিনী ও নিরাপত্তা সংস্থার সমন্বিত প্রচেষ্টায় নেপালের বিভিন্ন এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা জারি রয়েছে, যাতে সাধারণ মানুষের জীবন ও সম্পত্তি রক্ষা করা যায় এবং অস্থিরতা আরও বৃদ্ধি না পায়।
বাংলাবার্তা/এমএইচ