
ফাইল ছবি
দীর্ঘ বিরতির পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হলো ঐতিহাসিক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন। গতকাল মঙ্গলবার ভোটগ্রহণ শেষে আজ বুধবার সকাল ৮টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে আনুষ্ঠানিকভাবে চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। এ নির্বাচনে ২৮টি পদে মোট ৪৭১ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন, যেখানে অংশ নেন বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠন, স্বতন্ত্র প্রার্থী ও আঞ্চলিক প্যানেলের প্রতিদ্বন্দ্বীরা।
ফল ঘোষণার পর থেকে পুরো ক্যাম্পাসে উচ্ছ্বাস ছড়িয়ে পড়ে। তবে একই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের মধ্যে নির্বাচনের বিশ্লেষণ ও ফলাফল নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। বিশেষত, ছাত্রশিবির সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট ব্যাপক সাফল্য পেয়েছে।
পদ ও প্রার্থীর সংখ্যা
ডাকসুর ২৮টি পদের মধ্যে সহ-সভাপতি (ভিপি) থেকে শুরু করে কার্যনির্বাহী সদস্য পর্যন্ত নানা পদে বিপুলসংখ্যক প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। পদভিত্তিক প্রার্থীর সংখ্যা ছিল নিম্নরূপ:
-
সহ-সভাপতি (ভিপি): ৪৫ জন
-
সাধারণ সম্পাদক (জিএস): ১৯ জন
-
সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস): ২৫ জন
-
মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন সম্পাদক: ১৭ জন
-
কমনরুম, রিডিংরুম ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক: ১১ জন
-
আন্তর্জাতিক সম্পাদক: ১৪ জন
-
সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক: ১৯ জন
-
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক: ১২ জন
-
গবেষণা ও প্রকাশনা সম্পাদক: ৯ জন
-
ক্রীড়া সম্পাদক: ১৩ জন
-
ছাত্র পরিবহন সম্পাদক: ১২ জন
-
সমাজসেবা সম্পাদক: ১৭ জন
-
স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সম্পাদক: ১৫ জন
-
মানবাধিকার ও আইন সম্পাদক: ১১ জন
-
ক্যারিয়ার উন্নয়ন সম্পাদক: ১৫ জন
-
কার্যনির্বাহী সদস্য পদে: ২১৭ জন
গুরুত্বপূর্ণ পদে বিজয়ীরা
সবচেয়ে আলোচিত সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে জয়ী হয়েছেন ছাত্রশিবির সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের প্রার্থী মো. আবু সাদিক (সাদিক কায়েম)। তিনি পেয়েছেন ১৪ হাজার ৪২ ভোট। একই জোট থেকে সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে জয়ী হয়েছেন এস এম ফরহাদ হোসেন, যার প্রাপ্ত ভোট ১০ হাজার ৭৯৪।
সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে জয় পান মুহা মহিউদ্দীন খান (শিবির সমর্থিত প্যানেল), যিনি ১১ হাজার ৭৭২ ভোট অর্জন করেন।
সম্পাদকীয় পদে বিজয়ীরা
-
মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন সম্পাদক: ফাতেমা তাসনিম জুমা (শিবির সমর্থিত) – ১০,৬৩১ ভোট।
-
কমনরুম, রিডিংরুম ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক: উম্মে ছালমা (শিবির সমর্থিত) – ৯,৯২০ ভোট।
-
আন্তর্জাতিক সম্পাদক: জসীমউদ্দিন খান (শিবির সমর্থিত) – ৯,৭০৬ ভোট।
-
সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক: মুসাদ্দিক আলী ইবনে মোহাম্মদ (স্বতন্ত্র) – ৭,৭৮২ ভোট।
-
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক: মো. ইকবাল হায়দার (শিবির সমর্থিত) – ৭,৮৩৩ ভোট।
-
গবেষণা ও প্রকাশনা সম্পাদক: সানজিদা আহমেদ তন্বি (স্বতন্ত্র) – ১১,৭৭৮ ভোট।
-
ক্রীড়া সম্পাদক: আরমান হোসেন (শিবির সমর্থিত) – ৭,২৫৫ ভোট।
-
ছাত্র পরিবহন সম্পাদক: আসিফ আব্দুল্লাহ (শিবির সমর্থিত) – ৯,০৬১ ভোট।
-
সমাজসেবা সম্পাদক: যুবাইর বিন নেছারী (স্বতন্ত্র) – ৭,৬০৮ ভোট।
-
স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সম্পাদক: এম এম আল মিনহাজ (শিবির সমর্থিত) – ৭,০৩৮ ভোট।
-
মানবাধিকার ও আইন সম্পাদক: মো. জাকারিয়া (শিবির সমর্থিত) – ১১,৭৪৭ ভোট।
-
ক্যারিয়ার উন্নয়ন সম্পাদক: মো. মাজহারুল ইসলাম (শিবির সমর্থিত) – ৯,৩৪৪ ভোট।
কার্যনির্বাহী সদস্য পদে বিজয়ীরা
কার্যনির্বাহী সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন:
১. সাবিকুন নাহার তামান্না (শিবির সমর্থিত) – ১০,০৮৪ ভোট
২. সর্ব মিত্র চাকমা (শিবির সমর্থিত) – ৮,৯৮৮ ভোট
৩. ইমরান হোসাইন (শিবির সমর্থিত) – ৬,২৫৬ ভোট
৪. মোছা. আফসানা আক্তার (শিবির সমর্থিত) – ৫,৭৪৭ ভোট
৫. তাজিনুর রহমান (শিবির সমর্থিত) – ৫,৬৯০ ভোট
৬. রায়হান উদ্দীন (শিবির সমর্থিত) – ৫,০৮২ ভোট
৭. মো. মিফতাহুল হোসাইন আল মারুফ (শিবির সমর্থিত) – ৫,০১৫ ভোট
৮. আনাস ইবনে মুনির (শিবির সমর্থিত) – ৫,০১৫ ভোট
৯. হেমা চাকমা (প্রতিরোধ পর্ষদ) – ৪,৯০৮ ভোট
১০. মো. বেলাল হোসেন অপু (শিবির সমর্থিত) – ৪,৮৬৫ ভোট
১১. মো. রাইসুল ইসলাম (শিবির সমর্থিত) – ৪,৫৩৫ ভোট
১২. মো. শাহিনুর রহমান (শিবির সমর্থিত) – ৪,৩৯০ ভোট
১৩. উম্মা উসওয়াতুন রাফিয়া (স্বতন্ত্র) – ৪,২০৯ ভোট
ঘোষিত ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২৮টি পদের মধ্যে অধিকাংশ পদে জয় পেয়েছেন ছাত্রশিবির সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের প্রার্থীরা। বিশেষ করে ভিপি, জিএস, এজিএসসহ গুরুত্বপূর্ণ সম্পাদকীয় পদগুলোতে তাদের প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন। কয়েকটি পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী ও প্রতিরোধ পর্ষদও জয় পেয়েছে, যা নির্বাচনে বহুমাত্রিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও বৈচিত্র্য নিশ্চিত করেছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ডাকসু নির্বাচনের এই ফলাফল ভবিষ্যতের জাতীয় ছাত্ররাজনীতিতে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে। শিক্ষার্থীদের দাবি, নির্বাচিতরা দলীয় পরিচয়ের ঊর্ধ্বে উঠে ছাত্রসমাজের স্বার্থে কাজ করবেন।
বাংলাবার্তা/এমএইচ