
ফাইল ছবি
রাজধানীর মোহাম্মদপুরে ছিনতাইকারী সন্দেহে পৃথক দুটি গণপিটুনির ঘটনায় দুই তরুণ নিহত হয়েছেন। একই ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও দুইজন। বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) ভোররাত থেকে সকাল পর্যন্ত নবীনগর হাউজিং এলাকায় ঘটে যাওয়া এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে স্থানীয়দের মধ্যে চরম উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
নিহতরা হলেন হানিফ (২২) ও সুজন (২৩)। দুজনেই স্থানীয়ভাবে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে পুলিশ। আহত শরিফ (২২) ও ফয়সাল (২৩) বর্তমানে রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। আহতদের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে।
মোহাম্মদপুর থানার পরিদর্শক (অপারেশনস) মো. আশরাফুল ইসলাম জানান, বুধবার ভোর ৪টার দিকে নবীনগর হাউজিংয়ের ১৬ নম্বর সড়কে প্রথম গণপিটুনির ঘটনা ঘটে। স্থানীয়দের অভিযোগ, ওই সময় কয়েকজন যুবক পথচারীর কাছ থেকে টাকা ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছিল। এ সময় এলাকার লোকজন তাদের ধরে ফেলে।
লোকজন দ্রুত জড়ো হয়ে দুজনকে আটক করে গণপিটুনি শুরু করে। ঘটনাস্থলেই একজন নিহত হন। অপরজনকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হলে তার অবস্থাও আশঙ্কাজনক বলে জানান পুলিশ।
প্রথম ঘটনার মাত্র সাড়ে তিন ঘণ্টা পর সকাল সাড়ে ৭টার দিকে নবীনগর হাউজিংয়ের ১১ নম্বর সড়কে আরেকটি অনুরূপ ঘটনা ঘটে। এখানেও ছিনতাইয়ের চেষ্টার অভিযোগে স্থানীয়রা দুই তরুণকে ধরে ফেলে গণপিটুনি দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই একজন নিহত হন এবং আরেকজন গুরুতর আহত হন।
পরিদর্শক আশরাফুল ইসলাম বলেন, “এলাকার সাধারণ মানুষ কয়েক দিন ধরেই রাতের বেলায় ছিনতাইকারীদের কারণে আতঙ্কে ছিলেন। আজ ভোরে দুটি ঘটনায় স্থানীয়রা নিজেরাই ব্যবস্থা নেয়। এতে দুজন মারা গেছেন, দুজন আহত হয়েছেন। আহতদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।”
দুপুরে নিহতদের লাশ উদ্ধার করে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়। পুলিশের প্রাথমিক ধারণা, নিহতদের সবাই একই চক্রের সদস্য হতে পারে। তবে তাদের বিস্তারিত পরিচয় ও পূর্ব ইতিহাস খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, নবীনগর হাউজিং এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে অচেনা কিছু যুবক রাতের বেলায় অবস্থান নেয় এবং সুযোগ পেলেই পথচারীদের টার্গেট করে ছিনতাই করে আসছিল। কয়েক দিন ধরে ভুক্তভোগীরা প্রতিবাদ জানালেও কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেয়নি বলে তাদের অভিযোগ। এর ফলে আজ ক্ষোভে ফেটে পড়ে সাধারণ মানুষ।
একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, “রাত-বিরাতে যারা রাস্তায় বের হয়, তারা নিরাপদ থাকে না। গত সপ্তাহেও দুইজনকে ছুরিকাঘাত করে টাকা নিয়ে গেছে। তাই আজ যখন তাদের হাতেনাতে ধরা হয়, সবাই ক্ষুব্ধ হয়ে গণপিটুনি দিয়েছে।”
পুলিশ বলছে, গণপিটুনি কোনো সমাধান নয়। অপরাধীরা যেই হোক, আইনের মাধ্যমে শাস্তি নিশ্চিত করা উচিত। এ ঘটনায় কারা জড়িত, নিহতরা আসলেই ছিনতাইকারী কিনা, নাকি অন্য কোনো কারণে এ ঘটনার পুনরাবৃত্তি হলো—সবকিছু তদন্ত করা হচ্ছে।
মোহাম্মদপুর থানার ওসি জানান, “আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছি। নিহতদের পরিচয় যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
সমাজবিজ্ঞানীরা বলছেন, গণপিটুনির মতো ঘটনা আইনশৃঙ্খলার প্রতি জনগণের আস্থাহীনতার প্রকাশ। জনগণ মনে করে পুলিশ ও প্রশাসন দ্রুত ব্যবস্থা নিচ্ছে না, তাই নিজেরাই বিচার করে বসছে। তবে এর ফলে অনেক সময় নিরপরাধ ব্যক্তিও প্রাণ হারাচ্ছেন।
একদিনের ব্যবধানে একই এলাকায় দুটি গণপিটুনির ঘটনা ঢাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে। নিহতরা আসলেই ছিনতাইকারী ছিলেন কিনা তা নিশ্চিত না হলেও ঘটনাটি স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক ও ক্ষোভ আরও বাড়িয়ে তুলেছে। এখন দেখার বিষয়—এই ঘটনার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এলাকায় কী ধরনের পদক্ষেপ নেয় এবং ছিনতাই প্রতিরোধে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করে কিনা।
বাংলাবার্তা/এমএইচ