
ছবি: সংগৃহীত
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলায় ভয়াবহ এক অমানবিক ঘটনা ঘটেছে। নুরুল হক ওরফে নুরাল পাগলা নামে এক ব্যক্তির মরদেহ কবর থেকে তুলে এনে সড়কের পাশে প্রকাশ্যে পুড়িয়ে দেয় উত্তেজিত জনতা। ঘটনাটি কেন্দ্র করে এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। দুপক্ষের সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছেন এবং এক সাংবাদিকসহ অন্তত ২২ জন আহত হয়েছেন। এসময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) গাড়ি ও পুলিশের দুটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়।
শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) জুমার নামাজ শেষে স্থানীয় ‘ইমান-আকিদা রক্ষা কমিটি’র ব্যানারে গোয়ালন্দ আনসার ক্লাব মাঠে এক বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিল শেষে উত্তেজিত জনতা সরাসরি নুরুল হকের বাড়ির দিকে অগ্রসর হয়। তারা বাড়ির গেট ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে হামলা চালায়, ভাঙচুর করে এবং অগ্নিসংযোগ করে। একই সঙ্গে বাড়ির আসবাবপত্র লুটপাটের অভিযোগও পাওয়া গেছে।
পরে উত্তেজিত জনতা নুরুল হকের কবর খুঁড়ে মরদেহ বের করে আনে। মরদেহটি কবর থেকে টেনে নিয়ে গিয়ে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের পদ্মার মোড়ে প্রকাশ্যে আগুনে পোড়ানো হয়। পুরো ঘটনাটি দেখতে বিপুল সংখ্যক মানুষ সেখানে ভিড় করেন।
সংঘর্ষে আহতদের মধ্যে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান দেবগ্রামের আজাদ মোল্লার ছেলে রাসেল মোল্লা (২৮)। এছাড়া এক সাংবাদিকসহ অন্তত ২২ জন আহত হন, যাদের মধ্যে কয়েকজন গুরুতর অবস্থায় বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. শরিফুল ইসলাম জানান, নিহত রাসেল মোল্লা সংঘর্ষের সময় গুরুতর আহত হন। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নাহিদুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, দুপুরে নুরুল হকের মাজারে হামলা চালানো হয়। এরপর মরদেহ কবর থেকে তোলা হয় এবং মহাসড়কে নিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। ঘটনাস্থলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গিয়ে তার গাড়ি ভাঙচুর করা হয়।
রাজবাড়ীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শরীফ আল রাজীব বলেন, বিক্ষোভকারীরা নুরুল হকের বাড়িতে হামলার পাশাপাশি অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করে। পরে ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। নিরাপত্তার জন্য অতিরিক্ত পুলিশ, সেনাবাহিনী ও র্যাব মোতায়েন করা হয়েছে।
এই ঘটনাকে ‘অমানবিক ও ঘৃণ্য’ আখ্যা দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার তাৎক্ষণিকভাবে এক বিবৃতি দিয়েছে। সেখানে বলা হয়, “নুরুল হকের মরদেহ কবর থেকে তুলে এনে পোড়ানো—এটি মানবতার বিরুদ্ধে ভয়াবহ অপরাধ। এই জঘন্য ঘটনায় যারা জড়িত, তাদের চিহ্নিত করা হবে এবং আইনের সর্বোচ্চ প্রয়োগের মাধ্যমে বিচারের আওতায় আনা হবে।”
ঘটনার পর গোয়ালন্দ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয়রা বলছেন, নুরুল হককে ঘিরে আগে থেকেই মতবিরোধ ছিল। তার মৃত্যু এবং দাফনের পরও বিষয়টি থামেনি। শুক্রবারের বিক্ষোভে অংশ নেয়া জনতা একপ্রকার পরিকল্পিতভাবে এই হামলা চালিয়েছে।
এমন অমানবিক ঘটনাকে কেন্দ্র করে সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ, আতঙ্ক ও তীব্র নিন্দা দেখা দিয়েছে। অনেকে বলছেন, এই ধরনের বর্বরতা রাজবাড়ীর ইতিহাসে নজিরবিহীন।
রাজবাড়ীতে নুরুল হকের মরদেহ কবর থেকে তুলে এনে পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা শুধু স্থানীয় এলাকাতেই নয়, বরং সারা দেশে তীব্র আলোচনার জন্ম দিয়েছে। সরকারের কঠোর অবস্থান এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পদক্ষেপের পরও মানুষের মধ্যে শঙ্কা রয়ে গেছে—ভবিষ্যতে এ ধরনের অমানবিক ঘটনা প্রতিরোধ করা যাবে কি না।
বাংলাবার্তা/এমএইচ