
ছবি: সংগৃহীত
মুন্সিগঞ্জের টংগিবাড়ীতে বিষাক্ত মদ্যপানের ঘটনা ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার থেকে শুক্রবার বিকাল পর্যন্ত চারজন ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করেছেন। এছাড়া গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও তিনজন। এই ঘটনায় পুরো এলাকা শোকাহত ও উদ্বিগ্ন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মৃতদের দেহ স্থানীয় সামাজিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, অতিরিক্ত ও বিষাক্ত মদ্যপানই এই হত্যাকারী পরিস্থিতির মূল কারণ।
কাঠাদিয়া-শিমুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আনিছুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, মৃত ব্যক্তিদের নাম ও বয়স হলো:
-
বাচ্চু বেপারী, ৬৫ বছর, কাঠাদিয়া গ্রাম
-
ইব্রাহিম মুন্সী, ৭০ বছর
-
রহমত উল্লাহ বেপারী, ৬৮ বছর
-
হোসেন ডাক্তার, ৬৫ বছর, মহাকালি ইউনিয়নের ঘাসিপুকুরপাড় এলাকা
এছাড়া, এই ঘটনায় অসুস্থ হয়ে রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন:
-
রহমতুল্লাহ, ৬৫ বছর
-
আল আমিন সরকার, ৪৫ বছর
-
সিজান বেপারি, ২৬ বছর
চেয়ারম্যান মো. আনিছুর রহমান আরও বলেন, “স্থানীয়দের দাবি অনুযায়ী, এই মদ্যপানের ফলে মৃত্যু ও গুরুতর অসুস্থতার ঘটনা ঘটেছে। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। স্থানীয় প্রশাসন সঙ্গে সহযোগিতা করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে।”
স্থানীয় হাসপাতাল ও চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, এই ধরনের বিষযুক্ত মদ্যপানের কারণে আক্রান্তদের দেহে তীব্র বিষক্রিয়া দেখা দেয়। প্রথমে বমি, বুকে ব্যথা, মাথা ঘোরা এবং শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। চিকিৎসাধীন রোগীদের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় দ্রুত রাজধানীর শীর্ষ হাসপাতালগুলিতে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। চিকিৎসকরা সতর্ক করেছেন, বিষাক্ত মদ্যপান অব্যাহত থাকলে আরও মৃত্যুর ঘটনা ঘটতে পারে।
স্থানীয় হাসপাতালের চিকিৎসকরা নাম প্রকাশ না করে জানিয়েছেন, “এই ধরনের মদ্যপান অনেক সময় মৃত্যু পর্যন্ত নিয়ে যেতে পারে। অতিরিক্ত ও অনিয়ন্ত্রিত মদ্যপান থেকে বিরত থাকা জরুরি।”
টংগিবাড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মহিদুল ইসলাম জানান, “বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে খবর প্রকাশিত হওয়ার পর পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে। বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্তের পর প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। তারা জনগণকে সতর্ক করেছেন, অজানা বা অবৈধ উৎস থেকে কোনো ধরণের মদ্যপান না করার জন্য। এছাড়া, এই ঘটনার পেছনে কোনো বেআইনি কারবার, যেমন মদ তৈরি বা বিক্রির দায় আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
স্থানীয়রা শোক প্রকাশ করেছেন এবং এ ধরনের ঘটনায় সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। এলাকাবাসী মনে করছেন, “এই ধরনের বিষাক্ত মদ্যপান শুধু ব্যক্তির নয়, পরিবারেরও ক্ষতি করছে। সরকার ও প্রশাসন দ্রুত ব্যবস্থা নিলে এমন ঘটনায় রোধ সম্ভব।”
সোশ্যাল মিডিয়ায় এবং স্থানীয় পত্রিকায় খবর প্রকাশের পর এলাকাবাসী ও স্থানীয় নেতারা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়িয়েছেন। তারা আশা করছেন, প্রশাসন অভিযুক্তদের খুঁজে বের করবে এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের বিষাক্ত মদ্যপান প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে মদ্যপানের কারণে মৃত্যুর ঘটনা নিয়মিত হয়ে উঠেছে। তাঁরা উল্লেখ করেছেন, সচেতনতা বৃদ্ধি, অবৈধ মদের বাজার বন্ধ করা এবং স্থানীয় প্রশাসনের তৎপরতা বৃদ্ধিই একমাত্র দীর্ঘমেয়াদি সমাধান।
চেয়ারম্যান মো. আনিছুর রহমান জানিয়েছেন, “আমরা স্থানীয়ভাবে সচেতনতা বাড়াচ্ছি। মদ্যপানের কারণে মৃত্যুর ঘটনা যেন পুনরায় না ঘটে, এজন্য মাঠ পর্যায়ে কাজ চলছে।”
এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে মুন্সিগঞ্জের বিভিন্ন সামাজিক ও নাগরিক সংগঠনও জনগণকে সচেতন করার উদ্যোগ নিয়েছে। স্থানীয় নেতারা বলছেন, এই ধরনের বিষাক্ত মদ্যপান প্রতিরোধে শিক্ষামূলক প্রচারণা, স্থানীয় বাজারের মনিটরিং এবং প্রশাসনের তৎপরতা একসাথে প্রয়োজন।
বাংলাবার্তা/এমএইচ