
ফাইল ছবি
রাজধানী ঢাকার উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর মধ্যে অন্যতম ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে—যা দেশের প্রথম উড়াল এক্সপ্রেসওয়ে হিসেবে পরিচিত। কিন্তু এই প্রকল্পের কারণে রাজধানীর ব্যস্ততম ও জনপ্রিয় দুটি উন্মুক্ত স্থানের ওপর প্রভাব পড়ায় নতুন এক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এ দুটি স্থান হলো পান্থকুঞ্জ পার্ক এবং হাতিরঝিল এলাকা। দীর্ঘদিন ধরে এই দুটি অংশের ওপর নির্মাণকাজ চলছিল। এর ফলে নগরবাসীর বিনোদনের জায়গা যেমন সংকুচিত হচ্ছিল, তেমনি জনসাধারণের অবাধ চলাচলেও প্রতিবন্ধকতা তৈরি হচ্ছিল।
এই প্রেক্ষাপটে হাইকোর্ট সম্প্রতি এক গুরুত্বপূর্ণ আদেশ দিয়েছেন। আদালত স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছেন যে, পান্থকুঞ্জ ও হাতিরঝিল অংশে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজ অবিলম্বে বন্ধ রাখতে হবে। শুধু তাই নয়, আদালত আরও বলেছেন যে, এই দুটি অংশকে অবিলম্বে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করতে হবে। অর্থাৎ, জনগণের প্রবেশাধিকার ও ব্যবহারের জন্য স্থান দুটি আবারও খোলা রাখতে হবে, যাতে নগরবাসী তাদের প্রাপ্য উন্মুক্ত পরিবেশ ভোগ করতে পারেন।
হাইকোর্টের এই রায়ের পর শহরবাসীর মধ্যে স্বস্তি দেখা দিয়েছে। রাজধানী ঢাকায় যেখানে উন্মুক্ত স্থান ক্রমেই কমে আসছে, সেখানে পান্থকুঞ্জ পার্ক ও হাতিরঝিল এলাকার গুরুত্ব অপরিসীম। বিশেষ করে হাতিরঝিল এলাকা রাজধানীর মানুষের জন্য শুধু একটি বিনোদনকেন্দ্র নয়, এটি নগর পরিকল্পনার অন্যতম সফল উদাহরণ হিসেবে বিবেচিত। অন্যদিকে, পান্থকুঞ্জ পার্কও আশপাশের মানুষের হাঁটাহাঁটি, বিশ্রাম ও সামাজিক কর্মকাণ্ডের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গা। কিন্তু এক্সপ্রেসওয়ের কাজের কারণে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই স্থানগুলোর সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছিল এবং মানুষ বঞ্চিত হচ্ছিল তাদের ব্যবহারের অধিকার থেকে।
শুনানির সময় আদালত বলেন, জনস্বার্থকে উপেক্ষা করে কোনো প্রকল্প পরিচালনা করা যাবে না। নগরবাসীর স্বার্থ আগে বিবেচনায় নিতে হবে। ঢাকার মতো জনবহুল ও চাপযুক্ত শহরে প্রতিটি উন্মুক্ত স্থান মানুষের জীবনের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। এখানে শিশুরা খেলাধুলা করে, বয়স্করা হাঁটাহাঁটি করেন এবং সাধারণ মানুষ নিঃশ্বাস ফেলার জন্য কিছুটা খোলা জায়গা খোঁজেন। আদালতের মতে, এই জায়গাগুলোকে সংকুচিত করে দেওয়া মানে মানুষের জীবনযাত্রাকে আরও কঠিন করে তোলা।
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে অবশ্য বলা হয়েছিল, প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হলে যানজট কমবে, নগরবাসী সময় বাঁচাবে এবং অর্থনীতিরও সুফল আসবে। তবে নগর পরিকল্পনাবিদ ও পরিবেশবাদীরা বারবার সতর্ক করেছিলেন যে, ঢাকার মতো একটি শহরে উন্নয়ন প্রকল্পে জনস্বার্থ উপেক্ষা করা দীর্ঘমেয়াদে ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনবে। তারা মনে করিয়ে দেন, ঢাকা শহরে প্রতি ব্যক্তির জন্য যে পরিমাণ উন্মুক্ত স্থানের প্রয়োজন, তার অতি সামান্যই এখানে বিদ্যমান। ফলে বিদ্যমান পার্ক ও উন্মুক্ত স্থানগুলো দখল বা সংকুচিত হলে নাগরিকদের জীবনযাত্রার মান আরও অবনতি ঘটবে।
হাইকোর্টের এই নির্দেশকে বিশেষজ্ঞরা নগর উন্নয়নের ক্ষেত্রে একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ হিসেবে অভিহিত করছেন। কারণ, এটি শুধু পান্থকুঞ্জ ও হাতিরঝিল রক্ষার সিদ্ধান্ত নয়, বরং ভবিষ্যতে যেকোনো উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় কর্তৃপক্ষকে মনে করিয়ে দেবে যে, জনস্বার্থ সর্বাগ্রে গুরুত্ব পাবে।
রাজধানীবাসীর আশা, আদালতের এই নির্দেশ দ্রুত বাস্তবায়ন হবে এবং পান্থকুঞ্জ ও হাতিরঝিল আবারও আগের মতো উন্মুক্ত হয়ে উঠবে। নগরবাসীর জন্য কিছুটা হলেও স্বস্তির নিশ্বাস নেওয়ার সুযোগ তৈরি হবে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ