
ছবি: সংগৃহীত
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) এবং হল সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ শেষ হয়েছে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়, কিন্তু তার পর থেকে ভোট গণনার কাজ দীর্ঘসময় ধরে চলছিল। শুক্রবার রাত ১১টা পর্যন্ত গণনা পুরোপুরি শেষ হয়নি। এমন পরিস্থিতি স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উত্থাপন করেছে যে, ভোট গণনা কীভাবে হচ্ছে এবং কেন এটি এত সময় নিচ্ছে।
এবারের নির্বাচনে মোট ভোটার ১১ হাজার ৭৪৩ জন, যার মধ্যে ভোট পড়েছে ৬৭ দশমিক ৬৮ শতাংশ, অর্থাৎ প্রায় ৭ হাজার ৯৪৭ জন ভোট দিয়েছেন। কেন্দ্রীয় সংসদে মোট ২৫টি পদ এবং ১৭৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। ভোটের সংখ্যা ও পদসংখ্যার পরিমাণ বেশি হওয়ায় গণনার প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত সময়সাপেক্ষ।
কেন্দ্রীয় সংসদের ভোট তিন পৃষ্ঠার ব্যালট পেপারে অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রতিটি ব্যালটে সব পদে প্রার্থীর নাম রয়েছে। গণনার সময় প্রতিটি পদ আলাদাভাবে গণনা করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, সহসভাপতি (ভিপি) পদে একটি ব্যালটের ভোট যদি ‘ক’ প্রার্থীকে দেওয়া হয়, তবে গণনাকারী প্রার্থীর পাশে টালি চিহ্ন দেবেন। চারটি টালি চিহ্নের পরে পঞ্চমটিতে একটি আড়াআড়ি দাগ টানা হয়। এই পদ্ধতিতে প্রতি প্রার্থীর ভোট গুনে মোট ভোট সংখ্যা নির্ধারণ করা হয়।
জনসংযোগ বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ মহিউদ্দিন জানিয়েছেন, এই পদ্ধতি স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে। কারণ প্রতিটি প্রার্থীর প্রতিনিধি সরাসরি গণনা পর্যবেক্ষণ করতে পারেন। তবে পদ্ধতির কারণে গণনা অনেক সময়সাপেক্ষ। কেন্দ্রীয় সংসদের ব্যালট তিন পৃষ্ঠার হওয়ায় ৭,৯৪৭ ভোটের ক্ষেত্রে ২৪ হাজারের বেশি কাউন্ট করতে হচ্ছে, যা কার্যত কয়েক ঘণ্টার মধ্যে শেষ করা সম্ভব নয়।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মনিরুজ্জামান বলেছেন, গণনা শেষ হতে রাতের মধ্যে সময় লাগতে পারে। গণনাকারীর সংখ্যা সীমিত হওয়ায় সময় বেশি লাগছে, তবে চেষ্টা চলছে সংখ্যাটি বাড়িয়ে রাতের মধ্যে ফল ঘোষণা করার। কিছু প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভোট গণনা শেষ করতে ৯২ ঘণ্টা পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।
নির্বাচনে সময় বিলম্বের পেছনে শুধু গণনার পদ্ধতিই নয়, রাজনৈতিক কারণে দেরি হওয়ার অভিযোগও উঠেছে। ছাত্রশিবির সমর্থিত জিএস প্রার্থী অভিযোগ করেছেন, নির্বাচনের ফল প্রকাশে রাজনৈতিক প্রভাবও রয়েছে। এছাড়া ছাত্রদলসহ পাঁচটি প্যানেল আগেই ভোট বর্জন করেছে।
গণনার প্রক্রিয়ার সময় পোলিং কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা একজন শিক্ষক, জান্নাতুল ফেরদৌস (৩১), ভোরে গণনা করতে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনের সামনে পড়ে যান। পরে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। শিক্ষককে পাবনায় দাফন করা হয়েছে।
নির্বাচন কমিশন জানিয়েছেন, গণনা পদ্ধতি ও সময় সাপেক্ষতা বিবেচনায় আগামী নির্বাচনে প্রক্রিয়ায় পরিবর্তনের প্রয়োজন রয়েছে। ভোটের স্বচ্ছতা এবং গণনার নির্ভুলতা নিশ্চিত করতে অতিরিক্ত কর্মকর্তা ও প্রযুক্তি ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। এছাড়া রাজনৈতিক উত্তেজনা কমিয়ে গণনার ত্বরান্বিত প্রক্রিয়া চালানো সম্ভব হলে আগামী নির্বাচনের ফল প্রকাশ দ্রুত করা যাবে।
জাকসু নির্বাচনের এই দীর্ঘ ভোট গণনা প্রক্রিয়া এবং নির্বাচনের সময় দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুর ঘটনা ছাত্রজীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা হিসেবে গণ্য হচ্ছে, যা ভবিষ্যতে আরও স্বচ্ছ ও নিরাপদ নির্বাচনের দিক নির্দেশনা দেবে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ