
ছবি: সংগৃহীত
দীর্ঘ ৩৪ বছর পর অনুষ্ঠিত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন নিয়ে এখন সবার চোখ ভোট গণনার দিকে। কিন্তু বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে শুরু হওয়া ভোটগ্রহণ শেষ হলেও চূড়ান্ত ফলাফল পেতে অপেক্ষা যেন শেষ হচ্ছে না। ভোটগ্রহণ শেষে রাত ১০টার দিকে শুরু হয় গণনার কাজ। এরপর টানা ১৯ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত ফল প্রকাশ করতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচন কমিশন। এতে শিক্ষার্থী, প্রার্থী, এমনকি দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের মধ্যেও তীব্র ক্ষোভ ও হতাশা দেখা দিয়েছে।
প্রথম থেকেই এই নির্বাচনের ভোট গণনা নিয়ে ছিল নানা প্রত্যাশা। কমিশন ওএমআর (Optical Mark Recognition) মেশিন কিনেছিল যাতে দ্রুত ও নির্ভুলভাবে ফলাফল বের করা যায়। কিন্তু শেষ মুহূর্তে প্রযুক্তি ব্যবহার না করে ম্যানুয়ালি ভোট গোনা শুরু করলে পরিস্থিতি জটিল হয়ে ওঠে।
ফজিলাতুন্নেছা হলের রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক সুলতানা আক্তার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “এভাবে ভোট গুনতে গেলে আরও তিন দিনেও শেষ করা সম্ভব হবে না। ওএমআর কেনার পরও ম্যানুয়ালি কাজ করা প্রশাসনের চরম ব্যর্থতা।” তিনি আরও জানান, এক সহকর্মীর মৃত্যুর শোকের মধ্যে থেকেও দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে, এতে তাদের মনোবল ভেঙে পড়ছে।
শুক্রবার দুপুরের মধ্যে ১৮টি হল সংসদের ভোট গণনা শেষ হলেও কেন্দ্রীয় সংসদের ভোট গণনা এখনও শুরুই হয়নি। ২১টি হলে রাখা কেন্দ্রীয় সংসদের ব্যালট বাক্স তখনো অক্ষত অবস্থায় পড়ে ছিল।
এ নিয়ে শিক্ষার্থীরা প্রকাশ করেছেন মিশ্র প্রতিক্রিয়া। অনেকে মনে করছেন ভোট সুষ্ঠু হলেও গণনায় ধীরগতি অযৌক্তিক। অন্যদিকে কেউ কেউ বলছেন, অব্যবস্থাপনার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য রেজওয়ান করিম স্নিগ্ধা জানান, হল সংসদের গণনা শেষ হলেই কেন্দ্রীয় সংসদের ভোট গোনা শুরু হবে। তবে ফলাফল প্রকাশের নির্দিষ্ট সময় তিনি জানাতে পারেননি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর জাকির আহমেদ বলেন, “ওএমআর বাতিল করে ম্যানুয়ালি ভোট গণনা করায় সময় বেশি লাগছে। আমরা নির্ভুল ফলাফল নিশ্চিত করার চেষ্টা করছি।”
দীর্ঘ বিলম্বে উত্তেজনা বাড়তে থাকায় ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। সিনেট ভবনসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে মোতায়েন করা হয়েছে এক হাজারেরও বেশি পুলিশ সদস্য। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানিয়েছে, যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় তারা প্রস্তুত।
এবারের জাকসু নির্বাচনে মোট ভোটার ছিলেন ১১ হাজার ৮৪৩ জন। এর মধ্যে প্রায় ৮ হাজার শিক্ষার্থী ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। তবে ভোটের দিন নানা অনিয়মের অভিযোগ এনে নির্বাচন বর্জন করেছে ছাত্রদলসহ পাঁচটি প্যানেল ও পাঁচজন স্বতন্ত্র প্রার্থী। যদিও শিবির সমর্থিত জিএস প্রার্থী দাবি করেছেন, ভোট চুরি হয়নি, তবে প্রক্রিয়াগত নানা অসঙ্গতি ছিল।
দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অবশেষে অনুষ্ঠিত জাকসু নির্বাচন শিক্ষার্থীদের মধ্যে নতুন আগ্রহ সৃষ্টি করেছিল। কিন্তু ভোট গণনার ধীরগতি, প্রশাসনিক অব্যবস্থাপনা এবং অনিশ্চয়তা সেই উৎসাহকে ম্লান করে দিচ্ছে। শিক্ষার্থীরা বলছেন, প্রযুক্তির যুগে এমন কাগজে-কলমে ভোট গোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনামের সঙ্গে মানানসই নয়।
এখন সবার দৃষ্টি চূড়ান্ত ফলাফলের দিকে। তবে কবে নাগাদ সেটি প্রকাশ করা হবে, তার কোনো নিশ্চয়তা এখনো দিতে পারছে না কর্তৃপক্ষ।
বাংলাবার্তা/এমএইচ