
ছবি: সংগৃহীত
সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা এবং অপরাধ দমনে পুলিশ প্রতিনিয়ত বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৪ ঘণ্টায় (শুক্রবার, ১২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত) পরিচালিত অভিযানে বিপুল সংখ্যক আসামি গ্রেফতারের তথ্য দিয়েছে পুলিশ সদর দফতর। সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, একদিনে সারাদেশ থেকে মোট ১ হাজার ৮০৯ জনকে আটক করা হয়েছে।
পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) এএইচএম শাহাদাত হোসেন এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান, এর মধ্যে মামলা ও ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি আছেন ১ হাজার ২৮১ জন। অর্থাৎ যারা পূর্বে বিভিন্ন মামলায় অভিযুক্ত কিংবা আদালতের জারিকৃত গ্রেফতারি পরোয়ানাভুক্ত ছিলেন, তাদের খুঁজে বের করে আটক করেছে পুলিশ। এছাড়া অন্যান্য অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে আরও ৫২৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সব মিলিয়ে মাত্র একদিনেই আটক হয়েছেন মোট ১ হাজার ৮০৯ জন।
অভিযানের সময় শুধু আসামি গ্রেফতারই হয়নি, উদ্ধার হয়েছে বিপজ্জনক অস্ত্রশস্ত্রও। পুলিশ জানিয়েছে, বিশেষ অভিযানে একটি দেশীয় তৈরি একনলা বন্দুক, একটি ওয়ান শুটারগান, একটি দেশীয় পিস্তল, চার রাউন্ড গুলি, চারটি বার্মিজ চাকু এবং একটি রাবার কার্তুজ জব্দ করা হয়েছে। এসব অস্ত্রশস্ত্র জঙ্গি কার্যক্রম, সন্ত্রাসী হামলা কিংবা অন্যান্য অপরাধমূলক কাজে ব্যবহারের পরিকল্পনা ছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে।
পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ঢাকাসহ বিভাগীয় শহরগুলোতে বিশেষ অভিযান বেশি জোরদার করা হয়েছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচিকে ঘিরে সহিংসতা কিংবা নাশকতার আশঙ্কা থাকায় রাজধানীতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও কঠোর করা হয়েছে। শহরের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট, গলি, মহল্লা এবং চেকপোস্টগুলোতে তল্লাশি চালানো হয়েছে। রাতে মোবাইল টিম মাঠে থেকে হঠাৎ অভিযান পরিচালনা করেছে।
এছাড়া চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, সিলেট, বরিশাল ও রংপুর বিভাগেও একযোগে এ অভিযান চলে।
পুলিশ সদর দফতরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, অপরাধী যেই হোক, তাকে আইনের আওতায় আনা হবে। মামলা ও ওয়ারেন্টভুক্ত আসামিদের গ্রেফতার করতে নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে। একইসঙ্গে অস্ত্রধারী ও চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করা হয়েছে।
এএইচএম শাহাদাত হোসেন বলেন, “জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিতে পুলিশ সর্বদা তৎপর। আমরা চাই অপরাধীরা আইনের বাইরে না থাকতে পারে। এজন্য প্রতিটি থানাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে গ্রেফতারি পরোয়ানা বাস্তবায়নে সর্বোচ্চ তৎপর হতে।”
সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানে চুরি, ডাকাতি, মাদক পাচার ও রাজনৈতিক সহিংসতা বেড়ে যাওয়ায় পুলিশের ওপর চাপ বাড়ছিল। এ পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় এবং সাধারণ মানুষকে নিরাপত্তা দিতে এ বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হয়।
ঢাকায় বিশেষ করে ঝটিকা মিছিল, নাশকতার প্রস্তুতি এবং অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনাও ঘটেছে। মাত্র কয়েক দিন আগেই রাজধানীতে আওয়ামী লীগের ১২ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে পুলিশ, যা রাজনৈতিক অঙ্গনেও আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
এক দিনে ১ হাজার ৮০৯ জনকে গ্রেফতার নিঃসন্দেহে পুলিশের জন্য বড় সাফল্য। তবে একইসঙ্গে এ ঘটনাটি ইঙ্গিত করে যে, মামলা ও অপরাধে জড়িত আসামির সংখ্যা দেশে এখনও বিপুল। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ধারাবাহিক অভিযানেই এই চক্রগুলোকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ