
ছবি: সংগৃহীত
রাজধানীর শাহজাহানপুরে মাদক ব্যবসাকে কেন্দ্র করে পুরোনো দ্বন্দ্বের জেরে আবারও সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে ১০টার দিকে দক্ষিণ খিলগাঁও ঝিলপাড় এলাকায় দুর্বৃত্তদের গুলিতে আহত হয়েছেন বিশাল (২৬) ও রবিন (২৬) নামে দুই যুবক। গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
ঘটনাস্থল ও আহতদের পরিচয়
শাহজাহানপুর থানার পুলিশ জানায়, আহত রবিন একজন চিহ্নিত ছিনতাইকারী। তাঁর বাড়ি শাহজাহানপুর বাগিচা এলাকায়। ঢাকার বিভিন্ন থানায় তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। অন্যদিকে আহত বিশাল একজন লেগুনা চালক। তিনি সবুজবাগের মাদারটেক এলাকায় বসবাস করেন। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এ দু’জনের নাম স্থানীয় মাদক ব্যবসা ও অপরাধচক্রের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরেই যুক্ত।
সংঘর্ষের পেছনের দ্বন্দ্ব
পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে বেরিয়ে এসেছে যে, স্থানীয় মাদক ব্যবসায়ী শান্ত নামের আরেক যুবকের সঙ্গে রবিন ও বিশালের দীর্ঘদিনের দ্বন্দ্ব রয়েছে। কয়েক মাস আগে শান্তকে কুপিয়ে আহত করেছিল এই দু’জন। সেই থেকে উভয় পক্ষের মধ্যে বিরোধ চরম আকার ধারণ করে। বৃহস্পতিবার রাতে আবারও ঝিলপাড় এলাকায় মুখোমুখি হলে তাঁদের মধ্যে তর্কাতর্কি শুরু হয়। এক পর্যায়ে শান্ত ও তাঁর সহযোগীরা অস্ত্র বের করে বিশাল ও রবিনকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়।
গুলিবিদ্ধ হয়ে বিশাল ও রবিন মাটিতে লুটিয়ে পড়লে স্থানীয়রা দ্রুত তাঁদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। চিকিৎসকরা জানান, বিশালের পেটের ডানপাশে এবং রবিনের পেটের বামপাশে গুলি লেগেছে। বর্তমানে তাঁদের অবস্থা আশঙ্কাজনক হলেও চিকিৎসা চলছে।
পুলিশের বক্তব্য
শাহজাহানপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. মহসিন তালুকদার জানান, রাতের দিকে পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। তিনি বলেন, “প্রাথমিকভাবে আমরা জেনেছি, মাদক ব্যবসাকে কেন্দ্র করে পুরোনো শত্রুতার জেরে এই ঘটনা ঘটেছে। আহত রবিনের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে এবং তিনি পেশাদার ছিনতাইকারী হিসেবে পরিচিত। বিশাল লেগুনা চালালেও সে-ও অপরাধচক্রের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছিল।”
তিনি আরও জানান, শান্ত ও তাঁর সহযোগীদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। তাঁদের গ্রেপ্তারে পুলিশের বিশেষ অভিযান শুরু হয়েছে।
এলাকায় আতঙ্ক
এলাকার বাসিন্দারা জানান, দক্ষিণ খিলগাঁও ঝিলপাড় এলাকায় মাদক ব্যবসা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড দীর্ঘদিন ধরে চলছে। মাদক ব্যবসার দখলদারিত্ব নিয়ে প্রায়ই সংঘর্ষ ও হামলার ঘটনা ঘটে। এতে সাধারণ মানুষ ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছে। বৃহস্পতিবার রাতের ঘটনায়ও এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এবং সাধারণ মানুষ ঘর থেকে বের হতে সাহস পাননি।
তদন্ত ও পরবর্তী ব্যবস্থা
পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনাটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। আহতদের জবানবন্দি নেওয়া হবে এবং এর ভিত্তিতে মামলার প্রক্রিয়া শুরু হবে। ইতোমধ্যে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা মনে করছেন, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে থাকা মাদকচক্রের আধিপত্য বিস্তার এবং পুরোনো শত্রুতার কারণেই একের পর এক সহিংসতা ঘটছে। বৃহস্পতিবারের ঘটনা তারই অংশ।
বাংলাবার্তা/এমএইচ