
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষা শেষে চাকরি পাওয়া দিন দিন কঠিন হয়ে উঠছে। বিশেষ করে স্নাতক ডিগ্রিধারীদের জন্য শ্রমবাজারে প্রত্যাশিত কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি না হওয়ায় বেকারত্বের বোঝা ক্রমেই বাড়ছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) প্রকাশিত ২০২৪ সালের শ্রমশক্তি জরিপের (এলএফএস) চূড়ান্ত প্রতিবেদনে দেখা গেছে, দেশে গত বছর প্রায় ৯ লাখ স্নাতক ডিগ্রিধারী বেকার ছিলেন।
প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২৪ সালে স্নাতক পাস বেকারের সংখ্যা ছিল ৮ লাখ ৮৫ হাজার। যদিও আগের বছরের তুলনায় এটি প্রায় ২০ হাজার কম, তবুও স্নাতকদের মধ্যে বেকারত্বের হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩ দশমিক ৫০ শতাংশে, যা ২০২৩ সালে ছিল ১৩ দশমিক ১১ শতাংশ। বিশেষজ্ঞদের মতে, সংখ্যা সামান্য কমলেও হার বেড়ে যাওয়ার পেছনে কর্মসংস্থানের সীমিত সুযোগ এবং চাকরির বাজারে অনিশ্চয়তাই প্রধান কারণ।
প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, স্নাতক ডিগ্রিধারী বেকারদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য অংশ নারী, যাদের সংখ্যা মোট বেকার স্নাতকদের ২০ শতাংশের বেশি। অর্থাৎ নারী স্নাতকদের কর্মসংস্থানে বৈষম্য আরও প্রকট হয়ে উঠছে।
২০২৪ সালে দেশের সার্বিক জাতীয় বেকারত্বের হার ছিল ৪ দশমিক ৪৮ শতাংশ। তবে আশঙ্কার বিষয় হলো, মাধ্যমিকের নিচে শিক্ষাগত যোগ্যতাসম্পন্ন বেকারের সংখ্যা এক বছরে ১ লাখের বেশি বেড়ে ৫ লাখ ৭ হাজারে দাঁড়িয়েছে। শতকরা হিসাবে তাদের বেকারত্বের হার বেড়েছে ০.৫১ শতাংশ পয়েন্ট।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এতে বোঝা যায় নিম্নশিক্ষিত থেকে শুরু করে উচ্চশিক্ষিত—সব স্তরেই কর্মসংস্থানের সঙ্কট রয়েছে।
প্রতিবেদন নিয়ে মতামত জানাতে গিয়ে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, “পরিস্থিতি মোটেও সন্তোষজনক নয়। সরকারি ও বেসরকারি খাতে প্রত্যাশিত হারে কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়েনি। ব্যবসার সামগ্রিক প্রবৃদ্ধিও সীমিত পর্যায়ে রয়েছে।”
তার মতে, কর্মসংস্থানের মূল উৎস হচ্ছে সরকার, কিন্তু সেখানে পদ সৃষ্টির সংখ্যা সীমিত এবং প্রতি বছর সেই সুযোগ আসে না। ফলে উচ্চশিক্ষিতদের চাকরির আশা বাস্তবে মেলেনি।
তিনি আরও বলেন, “অর্থনীতির ক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত যা অর্জন করা গেছে, তা হলো কেবল সম্পূর্ণ ধস নামা ঠেকানো। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা, সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি, ব্যাংক খাতকে স্থিতিশীল করার চেষ্টা এবং সীমিত মূলধন দিয়ে রিজার্ভ পুনর্গঠনের চেষ্টা হয়েছে। এর ফলে কিছু সূচক স্থিতিশীল রাখা গেলেও কর্মসংস্থানের সংকট কাটেনি।”
ফাহমিদা খাতুন সতর্ক করে বলেন, “হ্যাঁ, জিডিপি বেড়েছে, কিন্তু এটা বিভ্রান্তিকর। প্রবৃদ্ধির অন্যতম প্রধান চালক হলো দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগ, আর সেটি বাড়েনি। বিনিয়োগ না বাড়লে কর্মসংস্থান কীভাবে বাড়বে?”
তার মতে, গত বছর প্রত্যাশিত বিনিয়োগ হয়নি। উল্টো বিভিন্ন কারখানায় হামলা, উৎপাদন ব্যাহত হওয়া এবং অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সীমিত হয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে জিডিপির ওপরও—প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমানো হয়েছে এবং সামগ্রিক অর্থনীতির গতি মন্থর হয়েছে।
সব মিলিয়ে প্রতিবেদনের চিত্র উদ্বেগজনক। একদিকে স্নাতক ডিগ্রিধারীদের বেকারত্বের হার দ্বিগুণ অঙ্কে অবস্থান করছে, অন্যদিকে নিম্নশিক্ষিতদের মধ্যেও বেকারের সংখ্যা বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নতুন বিনিয়োগ ও শিল্পায়নের সুযোগ তৈরি না হলে আগামী দিনে এ সংকট আরও গভীর হবে। ফলে শিক্ষিত তরুণ প্রজন্মের বেকারত্ব দেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ