
ছবি: সংগৃহীত
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনকে ঘিরে শিক্ষার্থীদের মধ্যে যেমন দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটেছে, তেমনি নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে কিছু ঘটনা ঘিরে তৈরি হয়েছে নানা বিতর্কও। এমন এক ঘটনায় আলোচনায় আসেন ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা প্রার্থী তানভীর বারী হামিম। ভোটের হিসেবে তিনি দ্বিতীয় হলেও, নির্বাচনের দিনের এক ঘটনার কারণে পরবর্তীতে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হন।
তানভীর বারী হামিম ছিলেন ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থী। ডাকসু নির্বাচনে তিনি মোট ৫ হাজার ২৮৩ ভোট পান। যদিও বিজয়ের শীর্ষে পৌঁছাতে পারেননি, তবে ভোটের হিসেবে তিনি দ্বিতীয় অবস্থানে ছিলেন। ফলাফল প্রকাশের পর ভোটকেন্দ্রের কিছু ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হলে তার নাম নতুন করে আলোচনায় উঠে আসে।
নির্বাচনের দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষক ও সহকারী প্রক্টর শেহরীন আমিন মোনামি ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন। এ সময় তার সঙ্গে হামিমের বাগবিতণ্ডা হয়। ঘটনার ভিডিও দ্রুত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে এবং এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। কেউ কেউ এটিকে একজন শিক্ষকের প্রতি অসম্মানজনক আচরণ বলে উল্লেখ করেন। আবার অন্যরা মনে করেন, প্রশাসনিক ভূমিকা পালনের সময় শিক্ষককে সমালোচনা করা অস্বাভাবিক নয়।
ঘটনার কয়েকদিন পর বৃহস্পতিবার রাতে “ফেস দ্য পিপল” নামে একটি ইউটিউব চ্যানেলের আলোচনায় একসঙ্গে অংশ নেন শিক্ষক শেহরীন আমিন মোনামি ও তানভীর বারী হামিম। সেই আলোচনার ভিডিওটি পরবর্তীতে হামিম নিজ ফেসবুক প্রোফাইলে শেয়ার করেন। সেখানে তিনি খোলাখুলি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, “ম্যাম তখন প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। আমি তার সঙ্গে প্রশাসক হিসেবে কথা বলেছি, শিক্ষক হিসেবে নয়। কিন্তু সবশেষে তিনি আমার শিক্ষক। আমি ছাত্র হিসেবে তখন উত্তেজিত হয়ে যেভাবে কথা বলেছি, সেটি কোনোভাবেই সঠিক হয়নি। এজন্য আমি সব সময়ের জন্য দুঃখিত।”
হামিম আরও বলেন, ঘটনার পেছনে কেবল একটি মুহূর্তের প্রতিক্রিয়া নয়, বরং সেদিন সকাল থেকেই অনিয়ম ও আচরণবিধি লঙ্ঘনের নানা অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছিল। সামগ্রিকভাবে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ ছিল, তবে ব্যক্তিগতভাবে শেহরীন আমিন মোনামির বিরুদ্ধে এমন কোনো অভিযোগ তিনি আনেননি।
তার ভাষায়, “আমি তখন ম্যাডামের সঙ্গে প্রতিবাদ করেছি প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে, শিক্ষক হিসেবে নয়। আমার প্রতিবাদের ভাষা হয়তো যৌক্তিক ছিল, কিন্তু উত্তেজিত হয়ে প্রকাশ করেছি। এজন্য আমি নিজেই অনুতপ্ত। কারণ সব কিছুর আগে তিনি আমার শিক্ষক।”
ঘটনার পর থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেহরীন আমিন মোনামিকে নিয়ে নানান কটূক্তি ছড়াতে শুরু করে। তাকে ‘শিবির’ ট্যাগ দিয়ে বিভিন্নভাবে আক্রমণ করা হয়। এ প্রসঙ্গে হামিম স্পষ্ট বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, “আমি সবার সামনে বলতে চাই—ম্যাম আপনাকে নিয়ে যারা অযথা বাজে মন্তব্য করছে, যদি তাদের কারো সাংগঠনিক পরিচয় প্রমাণিত হয়, তাহলে আমি তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। প্রয়োজনে সাংগঠনিক নয়, প্রশাসনিক ব্যবস্থাও নিতে প্রস্তুত।”
এই ঘটনার মধ্য দিয়ে আবারও সামনে এসেছে ডাকসু নির্বাচন-পরবর্তী পরিস্থিতি, যেখানে শিক্ষার্থীদের উচ্ছ্বাসের পাশাপাশি প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনার ওপর সমালোচনা চলছে। শিক্ষার্থীরা বলছেন, একজন প্রার্থীর উচিত সব পরিস্থিতিতে সংযত থাকা। অন্যদিকে কেউ কেউ মনে করছেন, উত্তেজনার মুহূর্তে এমন আচরণ ব্যাখ্যাযোগ্য হলেও প্রকাশ্যে ক্ষমা প্রার্থনা ইতিবাচক বার্তা বহন করছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সম্পর্ক সব সময়ই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ছাত্র রাজনীতি যতই উত্তপ্ত হোক না কেন, শিক্ষকদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন শিক্ষার্থীদের মৌলিক দায়িত্ব—এমন মত দিয়েছে শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ। হামিমের প্রকাশ্য দুঃখ প্রকাশকে অনেকে সেই সম্পর্ক পুনর্গঠনের ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন।
ডাকসু নির্বাচনে জয়ী হতে না পারলেও দ্বিতীয় স্থানে থেকে আলোচনায় ছিলেন হামিম। তবে ভোট-পরবর্তী এই ঘটনা তার নামকে আরও বেশি আলোচনায় এনেছে। একজন শিক্ষকের সঙ্গে বাগবিতণ্ডার ঘটনায় প্রকাশ্যে দুঃখ প্রকাশ করা এবং তাকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হওয়া কটূক্তির বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া নিঃসন্দেহে ছাত্র রাজনীতিতে একটি ভিন্ন দৃষ্টান্ত তৈরি করেছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ