
ছবি: সংগৃহীত
ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু আবারও প্রকাশ্যে স্পষ্ট করে জানালেন যে, ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনের কোনো সম্ভাবনা নেই। বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) পূর্ব জেরুজালেম সংলগ্ন অবৈধ ইসরাইলি বসতি মালে আদুমিমে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি জোর দিয়ে বলেন—“আমরা আমাদের প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে যাচ্ছি, কোনো ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র হবে না। এই জায়গাটি আমাদের।”
নেতানিয়াহুর ভাষায়, “আমরা আমাদের ঐতিহ্য, আমাদের ভূমি এবং আমাদের নিরাপত্তা রক্ষা করব। এখানে হাজার হাজার নতুন আবাসিক ইউনিট নির্মাণ করা হবে। এই এলাকা কারো সঙ্গে ভাগাভাগি করার নয়—এটি আমাদের।”
তার এই বক্তব্য ইঙ্গিত দিচ্ছে, ফিলিস্তিনিদের জন্য স্বাধীন রাষ্ট্রের যে বহুদিনের আন্তর্জাতিক দাবিদাওয়া, তা একেবারেই বাতিল করে দিচ্ছে ইসরাইলি সরকার।
যে বসতিতে নেতানিয়াহু বক্তব্য দেন, সেটি পশ্চিম তীরের ই১ এলাকা নামে পরিচিত প্রায় ১২ বর্গকিলোমিটার জমির ওপর গড়ে তোলার পরিকল্পনা করা হয়েছে। ভৌগোলিকভাবে এ স্থানটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি জেরুজালেম ও মালে আদুমিমের মাঝামাঝি অবস্থানে এবং ফিলিস্তিনের উত্তর-দক্ষিণ সংযোগের পথকে কার্যত বিচ্ছিন্ন করে দিতে পারে।
ইসরাইল দীর্ঘদিন ধরেই এই প্রকল্প বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় দেশগুলোর তীব্র আপত্তি, আন্তর্জাতিক আইন ভঙ্গের অভিযোগ এবং ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনের সম্ভাবনায় বড় আঘাত হানার আশঙ্কার কারণে ২০১২ ও ২০২০ সালে প্রকল্পটি স্থগিত করা হয়েছিল।
কিন্তু সম্প্রতি পরিস্থিতি পাল্টে গেছে। গত মাসে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা কমিশন আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকল্পটির অনুমোদন দিয়েছে। অনুমোদনের পর ইসরাইলি অতি-ডানপন্থি অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচ এখানে প্রায় ৩,৪০০টি বাড়ি নির্মাণের পরিকল্পনাকে সমর্থন করেন।
আন্তর্জাতিক মহলে এই ঘোষণার পর উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইসরাইল গাজায় যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ায় এবং প্রতিদিন নতুন করে বোমা হামলা জোরদার করায় একাধিক পশ্চিমা মিত্র দেশ ইতোমধ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। কয়েকটি দেশ জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের আসন্ন অধিবেশনে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেওয়ার পরিকল্পনার ঘোষণা দিয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, এই পরিস্থিতি ইসরাইলকে আরও বিচ্ছিন্ন করে ফেলবে।
ইসরাইলি গণমাধ্যম জানিয়েছে, ই১ এলাকার প্রকল্পে শুধু আবাসনই নয়, বরং রাস্তা, অবকাঠামো ও জনসেবামূলক সুবিধাসহ ব্যাপক উন্নয়ন করার পরিকল্পনা রয়েছে। মোট বিনিয়োগের আনুমানিক পরিমাণ প্রায় ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এতে বসতি সম্প্রসারণ আরও সুসংগঠিতভাবে এগোবে, আর ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের ওপর নিয়ন্ত্রণও জোরদার হবে।
ফিলিস্তিনপন্থী সংগঠনগুলো বলছে, ইসরাইলের এই পদক্ষেপ দুই-রাষ্ট্র সমাধানের ধারণাকে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করবে। গাজা, পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমে একটি স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনের দাবি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত হলেও নেতানিয়াহুর সাম্প্রতিক বক্তব্যে স্পষ্ট যে, তার সরকার কোনোভাবেই এমন সমাধানে রাজি নয়।
নেতানিয়াহুর এ বক্তব্য নতুন কিছু নয়, তবে এর সময়কাল ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট গুরুত্বপূর্ণ। গাজায় চলমান রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ, পশ্চিম তীরে সহিংসতা এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ইসরাইলের ক্রমবর্ধমান সমালোচনার প্রেক্ষাপটে এমন ঘোষণার মাধ্যমে তিনি অভ্যন্তরীণ সমর্থকদের এক ধরণের বার্তা দিতে চাইছেন। তবে বিশ্লেষকদের মতে, এর ফলে ইসরাইলের কূটনৈতিক অবস্থান আরও দুর্বল হতে পারে এবং ফিলিস্তিনি ইস্যুতে আন্তর্জাতিক চাপ আরও জোরদার হতে পারে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ