
ছবি: সংগৃহীত
ক্রিকেটারদের বাইবেল খ্যাত ‘উইজডেন’ একবিংশ শতাব্দীর সেরা টেস্ট একাদশ ঘোষণা করেছে। ক্রিকেট ইতিহাসে সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ এই নির্বাচনী তালিকা প্রকাশের পর থেকেই ক্রিকেটবিশ্বে শুরু হয়েছে ব্যাপক আলোচনা। গত ২৫ বছরে লাল বলের ক্রিকেটে অসাধারণ পারফরম্যান্স করা ক্রিকেটারদের মধ্য থেকে বাছাই করা হয়েছে সেরা একাদশ।
এই একাদশে সর্বাধিক ক্রিকেটার জায়গা পেয়েছেন অস্ট্রেলিয়া থেকে—মোট ৫ জন। দক্ষিণ আফ্রিকা থেকেছেন ৪ জন, আর ভারত থেকে জায়গা পেয়েছেন ২ জন ক্রিকেটার। তবে বিস্ময়ের বিষয় হলো, ইংল্যান্ড যেখানেই টেস্ট ক্রিকেটের জন্ম, সেই ইংল্যান্ড থেকে কেউই জায়গা পাননি একবিংশ শতাব্দীর এই সেরা তালিকায়।
ওপেনিং জুটি: শেবাগ-গ্রেম স্মিথ
ওপেনিংয়ে জায়গা করে নিয়েছেন ভারতের বিধ্বংসী ব্যাটার বিরেন্দ্র শেবাগ এবং দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক অধিনায়ক গ্রেম স্মিথ। শেবাগ তার আগ্রাসী ব্যাটিং দিয়ে বিশ্বজুড়ে সমীহ আদায় করেছিলেন। তিনি ১০৪ ম্যাচে করেছেন ৮ হাজার ৫৮৬ রান, গড় ৪৯.৩৪। তার ঝুলিতে রয়েছে দুটি ট্রিপল সেঞ্চুরি, যার মধ্যে সর্বোচ্চ ইনিংস ৩১৯ রান।
অন্যদিকে স্মিথ তার নেতৃত্বগুণ এবং ধারাবাহিক ব্যাটিংয়ের জন্য পরিচিত। তিনি খেলেছেন ১১৭ ম্যাচ, করেছেন ৯ হাজার ২৬৫ রান। সর্বোচ্চ ইনিংস ২৭৭, আর শতক করেছেন ২৭ বার।
মিডল অর্ডার: পন্টিং-স্টিভ স্মিথ-কালিস-এবি ডি ভিলিয়ার্স
তৃতীয় স্থানে রয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার কিংবদন্তি রিকি পন্টিং। টেস্টে তার রান সংখ্যা ১৩ হাজার ৩৭৮, যা ইতিহাসে তৃতীয় সর্বোচ্চ। অস্ট্রেলিয়ার সোনালী যুগে অ্যাশেজসহ একাধিক সিরিজ জয় তার নেতৃত্বেই এসেছে।
চতুর্থ স্থানে আছেন আধুনিক যুগের ব্যাটিং জিনিয়াস স্টিভেন স্মিথ। মাত্র কয়েক বছরে তিনি টেস্টে ১০ হাজার ৪৭৭ রান করেছেন, গড় ৫৬.২। তার শতক সংখ্যা ৩৬, ফিফটি ৪৩।
অলরাউন্ডার হিসেবে রয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকার জ্যাক কালিস। তার রেকর্ড বলছে, টেস্টে ১৩ হাজার ২৮৯ রান ও ২৯২ উইকেট। ব্যাটিং গড় ৫৫.৩৭ এবং সেরা বোলিং ফিগার ৬/৫৪। তাকে অনেকেই সর্বকালের সেরা অলরাউন্ডার মনে করেন।
এছাড়া মিডল অর্ডারে জায়গা করে নিয়েছেন এবি ডি ভিলিয়ার্স। তার ব্যাটিং ভঙ্গি ও বহুমুখিতা টেস্ট ক্রিকেটকে সমৃদ্ধ করেছে। মাত্র ১১৪ ম্যাচে ৮ হাজার ৭৬৫ রান, গড় ৫০.৬৬।
উইকেটরক্ষক: এডাম গিলক্রিস্ট
দলের উইকেটরক্ষক হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে অস্ট্রেলিয়ার এডাম গিলক্রিস্টকে। তার ব্যাটিং ছিল আক্রমণাত্মক এবং ম্যাচ পরিবর্তনের ক্ষমতা রাখত। গ্লাভস হাতে ছিলেন নির্ভরযোগ্য, আর ব্যাট হাতে অজিদের মধ্য-নিচের সারিকে দিতেন শক্তি।
বোলিং ইউনিট: শেন ওয়ার্ন-ডেল স্টেইন-প্যাট কামিন্স-জাসপ্রিত বুমরাহ
দলের একমাত্র স্পিনার হিসেবে রয়েছেন কিংবদন্তি শেন ওয়ার্ন। লেগ-স্পিনের এই জাদুকর ৭০৮ টেস্ট উইকেট নিয়ে বিশ্ব ক্রিকেটে এক অনন্য উচ্চতায় অবস্থান করছেন।
পেস আক্রমণের নেতৃত্বে আছেন দক্ষিণ আফ্রিকার ডেল স্টেইন। তার গতি, সুইং এবং নিখুঁত লাইন-লেংথে তিনি শিকার করেছেন ৪৩৯ উইকেট। তার ঝুলিতে রয়েছে ২৬টি পাঁচ উইকেট এবং ৫ বার দশ উইকেটের কীর্তি।
অস্ট্রেলিয়ার বর্তমান অধিনায়ক প্যাট কামিন্সও দলে জায়গা পেয়েছেন। তার ধারাবাহিক পারফরম্যান্স এবং নতুন-পুরোনো বলে সমান কার্যকারিতা তাকে সেরা পেসারদের কাতারে তুলে এনেছে।
ভারতের প্রতিনিধি হিসেবে আছেন আধুনিক যুগের অন্যতম সেরা ফাস্ট বোলার জাসপ্রিত বুমরাহ। তার অস্বাভাবিক অ্যাকশন, ইয়র্কার আর বোলিং ভ্যারিয়েশন টেস্টে ভারতের বড় অস্ত্র হয়ে উঠেছে।
উইজডেনের সেরা একাদশ একনজরে
-
বিরেন্দ্র শেবাগ (ভারত)
-
গ্রেম স্মিথ (দক্ষিণ আফ্রিকা)
-
রিকি পন্টিং (অস্ট্রেলিয়া)
-
স্টিভেন স্মিথ (অস্ট্রেলিয়া)
-
জ্যাক কালিস (দক্ষিণ আফ্রিকা)
-
এবি ডি ভিলিয়ার্স (দক্ষিণ আফ্রিকা)
-
এডাম গিলক্রিস্ট (অস্ট্রেলিয়া, উইকেটরক্ষক)
-
শেন ওয়ার্ন (অস্ট্রেলিয়া)
-
ডেল স্টেইন (দক্ষিণ আফ্রিকা)
-
প্যাট কামিন্স (অস্ট্রেলিয়া)
-
জাসপ্রিত বুমরাহ (ভারত)
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই একাদশ মূলত পারফরম্যান্স ও প্রভাব বিবেচনায় তৈরি। তবে বিতর্কের জায়গাও রয়েছে, বিশেষত ইংল্যান্ডের কোনো ক্রিকেটার সুযোগ না পাওয়ায় সমালোচনা শুরু হয়েছে। অনেকেই বলছেন, অ্যালিস্টার কুক, জেমস অ্যান্ডারসন বা জো রুটের মতো খেলোয়াড়রা হয়তো জায়গা পাওয়ার যোগ্য ছিলেন। তবে উইজডেনের নির্বাচক প্যানেল একবিংশ শতাব্দীতে সর্বোচ্চ প্রভাব বিস্তারকারীদেরই বেছে নিয়েছেন।
বাংলাবার্তা/এমএইচ