
ছবি: সংগৃহীত
নানা জল্পনা, শঙ্কা ও বিতর্কের অবসান ঘটিয়ে অবশেষে মাঠে গড়াতে যাচ্ছে এশিয়ার সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ ক্রিকেট টুর্নামেন্ট—এশিয়া কাপ ক্রিকেট। আবুধাবির শেখ জায়েদ আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে ৮টায় আফগানিস্তান ও হংকংয়ের মধ্যকার ম্যাচ দিয়ে শুরু হবে ১৭তম আসর। এবারের আসর বিশেষ এক অধ্যায় রচনা করতে যাচ্ছে কারণ প্রথমবারের মতো ৮ দল অংশ নিচ্ছে এশিয়ান শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে। আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হবে টুর্নামেন্টের ফাইনাল।
আয়োজন নিয়ে দ্বন্দ্ব ও অনিশ্চয়তা
এশিয়া কাপ ঘিরে এ বছর দীর্ঘ সময় ধরে তৈরি হয়েছিল অনিশ্চয়তা। মাত্র দেড় মাস আগেও অনেকেই ধরে নিয়েছিলেন, ভারত-পাকিস্তান দ্বন্দ্বের কারণে এবারের আসর অনুষ্ঠিত হবে না। জম্মু-কাশ্মীরের পেহেলগামে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনার পর দুই দেশের মধ্যে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ক আরও জটিল আকার ধারণ করে। ভূরাজনৈতিক উত্তেজনার প্রভাব পড়ে ক্রিকেটাঙ্গনেও। আয়োজন নিয়ে সংশয় সৃষ্টি হয়, এমনকি আলোচনায় উঠে আসে টুর্নামেন্ট বাতিলের সম্ভাবনাও।
তবে পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটে যখন ঢাকায় সফলভাবে অনুষ্ঠিত হয় এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের (এসিসি) বার্ষিক সাধারণ সভা। সেখানেই আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা আসে—৯ সেপ্টেম্বর থেকে ২৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে এশিয়া কাপ। ভারত হোস্ট হলেও টুর্নামেন্ট সরিয়ে নেওয়া হয় সংযুক্ত আরব আমিরাতে, যেখানে আগে বহু আন্তর্জাতিক আসরের আয়োজন হয়েছে।
মরুভূমির গরমে কঠিন চ্যালেঞ্জ
এবারের আসরের অন্যতম চ্যালেঞ্জ হলো আরব আমিরাতের আবহাওয়া। বছরের এই সময়ে মরুভূমির প্রচণ্ড গরম খেলোয়াড়দের জন্য বড় পরীক্ষা হয়ে উঠবে। পাকিস্তান, আফগানিস্তান এবং স্বাগতিক আমিরাত ইতোমধ্যে ত্রিদেশীয় সিরিজ খেলে আবহাওয়ার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার সুযোগ পেয়েছে। অন্যদিকে ভারত, বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটারদের জন্য এটি বাড়তি চাপের বিষয় হয়ে দাঁড়াবে।
ফরম্যাট ও ভেন্যু
দীর্ঘ ৩ বছর পর আবারও টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে ফিরছে এশিয়া কাপ। সর্বশেষ ২০২৩ সালে পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কায় হাইব্রিড মডেলে অনুষ্ঠিত হয়েছিল ওয়ানডে সংস্করণ, যেখানে ভারত জিতেছিল শিরোপা। এর আগে ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত প্রথম টি-টোয়েন্টি সংস্করণের চ্যাম্পিয়নও ভারত। তবে বর্তমান টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের শিরোপাধারী শ্রীলঙ্কা এবারও নিজেদের সামর্থ্য প্রমাণ করতে মরিয়া থাকবে।
দুই গ্রুপে বিভক্ত হয়ে লড়বে ৮ দল।
-
গ্রুপ ‘এ’: ভারত, পাকিস্তান, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ওমান।
-
গ্রুপ ‘বি’: বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, আফগানিস্তান ও হংকং।
মোট ১৯টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়াম এবং আবুধাবির শেখ জায়েদ স্টেডিয়ামে।
ভারত-পাকিস্তান লড়াই: টুর্নামেন্টের আকর্ষণ
এশিয়া কাপ মানেই ভারত-পাকিস্তান দ্বৈরথ। রাজনৈতিক সম্পর্ক যতই জটিল হোক, মাঠে দুই দলের মুখোমুখি হওয়া মানেই ক্রিকেট বিশ্বে বাড়তি উত্তেজনা। এবারের আসরে ১৪ সেপ্টেম্বর গ্রুপপর্বেই একে অপরের বিপক্ষে নামবে দুই দল। যদি দু’দল সুপার ফোরে জায়গা করে নেয়, তবে আরও এক বা একাধিকবার হতে পারে “সুপার ক্ল্যাসিকো”।
ভারত এর আগে সর্বোচ্চ ৮ বার শিরোপা জিতেছে। শ্রীলঙ্কার ঝুলিতে আছে ৬টি শিরোপা আর পাকিস্তান জিতেছে ২ বার। পরিসংখ্যানের এই দাপট নিয়েই নামবে তারা। তবে আফগানিস্তান ও বাংলাদেশও বড় স্বপ্ন দেখছে—সাফল্যের মুকুটে নতুন পালক যোগ করার।
বাংলাদেশের লক্ষ্য
বাংলাদেশ দল এবার গ্রুপ ‘বি’-তে খেলবে শ্রীলঙ্কা, আফগানিস্তান ও হংকংয়ের বিপক্ষে। আগের কয়েক আসরে ফাইনালে ওঠা সত্ত্বেও ট্রফি জিততে পারেনি টাইগাররা। এবার তাই সাকিব আল হাসান ও অভিজ্ঞদের নেতৃত্বে নতুন করে আশায় বুক বাঁধছে সমর্থকরা। ক্রিকেট বিশ্লেষকদের মতে, সুপার ফোরে জায়গা করে নিতে হলে আফগানিস্তান ও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে লড়াই হবে বাংলাদেশের জন্য টুর্নামেন্টের টার্নিং পয়েন্ট।
সমর্থক ও সম্প্রচার
এশিয়া কাপ শুধু এশিয়ার ক্রিকেটভক্তদেরই নয়, বিশ্বব্যাপী ক্রিকেটপ্রেমীদেরও আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। টেলিভিশন, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ও সামাজিক মাধ্যমে কোটি কোটি দর্শক এই আসর উপভোগ করবেন। আবুধাবি ও দুবাইয়ের ভেন্যুগুলোতে গ্যালারি পূর্ণ থাকবে ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের প্রবাসী সমর্থকদের উচ্ছ্বাসে।
অবশেষে সকল শঙ্কা কাটিয়ে মাঠে গড়াতে যাচ্ছে এশিয়া কাপের ১৭তম আসর। মরুভূমির গরম, নতুন দল, উত্তেজনাপূর্ণ দ্বন্দ্ব এবং বিশেষ করে ভারত-পাকিস্তান লড়াই ঘিরে আগ্রহ তুঙ্গে। ফাইনাল ম্যাচ পর্যন্ত প্রায় তিন সপ্তাহের এই আসরে কোন দল শিরোপা জিতবে, সেটিই এখন কোটি ক্রিকেটপ্রেমীর আলোচনার কেন্দ্র।
বাংলাবার্তা/এমএইচ