
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ ক্রিকেটের ইতিহাসের সেরা তারকাদের একজন সাকিব আল হাসান দীর্ঘদিন ধরেই দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। এক সময় তিনি শুধু মাঠের পারফরম্যান্স দিয়েই আলোচনায় থাকতেন, কিন্তু সাম্প্রতিক রাজনৈতিক টানাপোড়েন ও আইনি জটিলতার কারণে তার নাম এখন সমানভাবে রাজনীতি ও বিতর্কে শোনা যায়। আওয়ামী লীগ সরকারের সময় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ায় ব্যাপক জনরোষ ও সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন সাকিব। এরপর একাধিক মামলায় আসামি হওয়ায় দেশে ফেরার সাহস আর দেখাননি তিনি। ফলে বাংলাদেশ জাতীয় দলে তার ক্যারিয়ার কার্যত থমকে গেছে।
গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে সাকিব দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। এ সময়ে জাতীয় দলের হয়ে তার মাঠে নামা হয়নি। তবে সরকার পরিবর্তনের পর দুইটি সিরিজে তাকে দেখা গিয়েছিল বাংলাদেশের জার্সিতে। সেই উপস্থিতিও ছিল ক্ষণস্থায়ী। এরপর আবারও তিনি জাতীয় দল থেকে ছিটকে পড়েন। বর্তমানে তার বিরুদ্ধে দেশে একাধিক মামলা ঝুলছে, এমনকি হত্যা মামলার আসামিও করা হয়েছে তাকে। এসব কারণে সাকিবের দেশে ফেরা, অনুশীলনে যোগ দেওয়া কিংবা জাতীয় দলে প্রত্যাবর্তন নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
অন্যদিকে, জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক তামিম ইকবাল বর্তমানে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) নির্বাচনে লড়ার ঘোষণা দিয়েছেন। ফলে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে—তামিম যদি বোর্ডে গুরুত্বপূর্ণ পদে নির্বাচিত হন, তাহলে সাকিব কি আবারও জাতীয় দলে ফেরার সুযোগ পাবেন? নাকি আইনি জটিলতার কারণে তার ক্যারিয়ার এখানেই থেমে যাবে?
সম্প্রতি এক পডকাস্টে এ প্রসঙ্গে মুখ খুলেছেন তামিম ইকবাল। তিনি বলেন— “সে একজন অ্যাকটিভ ক্রিকেটার। সে বাংলাদেশের ক্রিকেটার। এখন যদি সে ফিট থাকে, অনুশীলন করতে পারে এবং নির্বাচকরা যদি মনে করেন সে দলের যোগ্য, অবশ্যই তাকে নেওয়া হবে। তবে তাকে দেশে ফেরানোটা আমার হাতে নেই। এখানে আইনি বিষয় জড়িয়ে আছে।”
তামিম স্পষ্ট করে জানান, সাকিবের জাতীয় দলে ফেরার ক্ষেত্রে মূল বাধা ক্রিকেটীয় নয়, বরং আইনি জটিলতা।
সাকিবের বিরুদ্ধে যে একাধিক মামলা চলছে, সেগুলো নিয়েও মত দিয়েছেন তামিম। তিনি বলেন— “দেশের পরিস্থিতি তো আমি নিয়ন্ত্রণ করতে পারব না। তার বিরুদ্ধে মামলা আছে। সে যদি সেগুলোর মুখোমুখি হতে পারে এবং জাতীয় দলের অনুশীলনে যোগ দিতে পারে, তাহলে নিঃসন্দেহে তার জন্য দরজা খোলা থাকবে। সে আমেরিকান ক্রিকেটার নয়, পর্তুগিজ ক্রিকেটার নয়—সে বাংলাদেশের।”
তামিম আরও বলেন, সাকিবকে মাঠে ফেরার সিদ্ধান্ত শেষ পর্যন্ত তার নিজেরই নিতে হবে। “কোর্টে মামলা চালানো বা মামলা উঠিয়ে নেওয়া বিসিবির কাজ নয়। সাকিবকে দেশের হয়ে খেলতে হলে আগে দেশে ফিরতে হবে, অনুশীলন করতে হবে। এটিই হলো বাস্তবতা। আমি কোনো কিছু আড়াল করছি না। এটা তার দেশ, তার ক্যারিয়ার। সে সিদ্ধান্ত নেবে কী করবে, সেটা আমি বলে দিতে পারি না।”
তামিমের বক্তব্যে স্পষ্ট হয়েছে, সাকিব আল হাসানের জাতীয় দলে ফেরার রাস্তা পুরোপুরি বন্ধ নয়। তবে শর্ত হলো—তিনি দেশে ফিরবেন, মামলার মুখোমুখি হবেন, আবারও মাঠে নামার জন্য ফিটনেস ও অনুশীলনে অংশ নেবেন। শুধুমাত্র তখনই নির্বাচকরা তাকে বিবেচনায় নেবেন।
এদিকে ক্রিকেট বিশ্লেষকরা বলছেন, সাকিবের মতো বিশ্বমানের অলরাউন্ডারের ক্যারিয়ার যদি এভাবে রাজনৈতিক ও আইনি জটিলতার কারণে ঝুঁকির মুখে পড়ে, তবে তা বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য বড় ক্ষতি হবে। তবে একই সঙ্গে তারা এটাও মনে করছেন, আইন ও দেশের পরিস্থিতিকে উপেক্ষা করে সাকিবের প্রত্যাবর্তন সম্ভব নয়।
সব মিলিয়ে, সাকিবের জাতীয় দলে ফেরা এখনো অনেক দূরের পথ। তার আইনি জটিলতা কাটিয়ে ওঠা এবং দেশে ফেরা ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই। তামিম ইকবালের বক্তব্যে সেটিই প্রতিফলিত হয়েছে। এখন দেখা যাক, সাকিব আল হাসান নিজের ক্যারিয়ারকে কীভাবে এগিয়ে নিতে চান—দেশে ফিরে আইনি লড়াই ও অনুশীলনের মাধ্যমে মাঠে ফিরবেন, নাকি বিদেশেই থেকে ধীরে ধীরে ক্রিকেট থেকে বিদায় নেবেন।
বাংলাবার্তা/এমএইচ