
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) আসন্ন নির্বাচন ঘিরে ক্রিকেটপাড়ায় এখন তুমুল আলোচনা। কয়েক দিন আগে নির্বাচনের আয়োজন নিয়ে গুজব উঠেছিল—নাকি কোনো নির্বাচন হবে না, বরং একটি অ্যাডহক কমিটি গঠন করে বোর্ড পরিচালনা করা হবে। কিন্তু সেই গুজব একেবারেই অসাড় প্রমাণিত হয়েছে। নির্বাচন যথাসময়েই অনুষ্ঠিত হবে, আর সেটি আগামী অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে।
এবারের নির্বাচনের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হলো সভাপতি পদ। দীর্ঘদিন ধরে বিসিবি সভাপতি নির্বাচনে কার্যত কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়নি। নাজমুল হাসান পাপন প্রতিবারই সর্বসম্মত সমর্থন নিয়ে সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। কিন্তু এবার ভিন্ন চিত্র দেখা যাচ্ছে। আলোচনায় উঠে এসেছে দুই সাবেক জাতীয় অধিনায়কের নাম—আমিনুল ইসলাম বুলবুল এবং তামিম ইকবাল। বিসিবির ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সভাপতি পদে সরাসরি ভোটের মাধ্যমে নির্বাচনের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
জাতীয় দলের সাবেক ওপেনার এবং অধিনায়ক তামিম ইকবাল এবার প্রথমবারের মতো বিসিবি নির্বাচনে অংশ নিতে যাচ্ছেন। তিনি ঢাকার ক্লাব ক্যাটাগরি থেকে লড়বেন। গত বছর প্রিমিয়ার লিগে গুলশান ক্রিকেট ক্লাবের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন তামিম, সেখান থেকেই তিনি কাউন্সিলর হয়েছেন। ফলে তামিমের ক্লাব ক্যাটাগরিতে অংশ নেওয়া প্রায় নিশ্চিত ছিল। ঢাকার ৭৬ ক্লাবের মধ্যে ১২ জন পরিচালক নির্বাচিত হবেন, এবং ক্রিকেট অঙ্গনে ইতোমধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে যে এই ১২ জনের ভোট তামিমের পক্ষে যাবে।
এছাড়া তামিম একা নন, তার নেতৃত্বে পূর্ণাঙ্গ একটি ১২ জনের প্যানেল নির্বাচনে অংশ নেবে। ঢাকার ক্লাব কোটায় শক্তিশালী প্রার্থী না থাকায় তামিমের এই প্যানেলকে জয়ী ধরে নেওয়া হচ্ছে। অর্থাৎ সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তামিমের হাতে প্রাথমিকভাবে ১২ ভোট নিশ্চিত থাকবে বলেই মনে করা হচ্ছে।
অন্যদিকে বর্তমান সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল এখনো প্রকাশ করেননি তিনি কোন ক্যাটাগরি থেকে নির্বাচন করবেন। দীর্ঘদিন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলে (আইসিসি) উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে যুক্ত থাকায় ঢাকার ক্রিকেটের সঙ্গে তার সরাসরি সম্পৃক্ততা ছিল না। তাই ক্লাব কোটায় তার প্রার্থী হওয়ার সুযোগ কার্যত নেই।
তবে বুলবুলের শক্তি অন্য জায়গায়। জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থা থেকে ১০ জন পরিচালক নির্বাচিত হন, এবং এবার এই ক্যাটাগরি বুলবুলের জন্য বড় ভরসা হয়ে উঠতে পারে। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ সম্প্রতি ফরিদপুর ছাড়া সব জেলা ক্রীড়া সংস্থায় অ্যাডহক কমিটি গঠন করেছে। ধারণা করা হচ্ছে, এই অ্যাডহক কমিটিগুলো থেকে নির্বাচিত হওয়া কাউন্সিলররা মূলত জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের নির্দেশনা মেনে চলবেন। আর জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের নিয়ন্ত্রণ যেহেতু বুলবুলপন্থী, তাই তাদের ভোটও বুলবুলের পক্ষেই পড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কে এগিয়ে? সংখ্যার হিসেবে ঢাকার ক্লাব কোটার ১২ ভোট তামিমের হাতে থাকলেও, জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার ১০ ভোট বুলবুলের দিকে ঝুঁকতে পারে। এর সঙ্গে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের ২ পরিচালকের ভোটও বুলবুলের হাতে থাকবে।
এমন পরিস্থিতিতে তামিম জিততে চাইলে শুধু ক্লাব কোটার ভোট যথেষ্ট নয়। তাকে জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থা থেকে অন্তত ২-৩ ভোট নিজের পক্ষে টানতে হবে। কারণ, যদি সব জেলা ভোট বুলবুল পান, তার সঙ্গে এনএসসির ২ ভোট ও সি ক্যাটাগরির ভোট যোগ হলে পাল্লা ভারী হয়ে যাবে বুলবুলের দিকেই।
সি ক্যাটাগরি থেকেও একজন পরিচালক নির্বাচিত হবেন। এই ক্যাটাগরিতে জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক ও বর্তমান প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নু এবং কোয়াবের সাবেক সচিব দেবব্রত পাল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে জানা গেছে। তাদের মধ্যে যে-ই জিতুন, তার ভোট সভাপতির নির্বাচনে হবে ‘ডিসাইডিং ফ্যাক্টর’।
বিসিবির ইতিহাসে আগে কখনো সভাপতি পদে ভোট হয়নি। সর্বশেষ কয়েক দফায় নাজমুল হাসান পাপন সর্বসম্মতভাবে সভাপতি হয়েছেন। এবার যদি বুলবুল ও তামিম সরাসরি ভোটযুদ্ধে নামেন, তবে এটি হবে একেবারেই নজিরবিহীন ঘটনা।
তামিমের শক্তি হলো ঢাকার ১২ পরিচালকের ভোট, বুলবুলের শক্তি হলো জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার ১০ ভোট এবং এনএসসির প্রত্যক্ষ সমর্থন। ফলে ভোট ভাগাভাগির এই সমীকরণে শেষ পর্যন্ত লড়াই হবে হাড্ডাহাড্ডি।
এখন পর্যন্ত খালি চোখে মনে হচ্ছে, তামিমের পাল্লা ভারী। কিন্তু জেলা ও বিভাগীয় সংস্থার ভোটের সমীকরণ পাল্টে দিতে পারে পুরো ফলাফল। তাই ক্রিকেট বোর্ডের নির্বাচনী মঞ্চে এ বছরের সবচেয়ে বড় নাটকীয়তা হতে পারে সভাপতি পদে এই লড়াই।
বোলার-ব্যাটসম্যান হিসেবে মাঠে যেমন ভিন্ন ভূমিকা পালন করেছেন, এবার বোর্ড রুমে তারা মুখোমুখি। ক্রিকেট অঙ্গনের আলোচনায় তাই একটাই প্রশ্ন—অক্টোবরে শেষ হাসি হাসবেন কে, বুলবুল নাকি তামিম?
বাংলাবার্তা/এমএইচ