
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) আসন্ন নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিলেন সাবেক অধিনায়ক এবং বর্তমানে বিসিবি সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করা আমিনুল ইসলাম বুলবুল। ক্রিকেট ক্যারিয়ারের পর আন্তর্জাতিক অঙ্গনে (আইসিসি) দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করা এই অভিজ্ঞ ক্রিকেট সংগঠক প্রথমদিকে বিসিবিতে অস্থায়ীভাবে যুক্ত হলেও এখন মত পরিবর্তন করে বোর্ডের স্থায়ী কার্যক্রমে যুক্ত থাকার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
বুলবুল যখন বিসিবি সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নেন, তখন একাধিকবারই জানিয়েছিলেন যে, তিনি দীর্ঘ সময়ের জন্য বোর্ডে থাকার ইচ্ছা পোষণ করেন না। বরং সীমিত সময়ের জন্য কাজ করে দেশের ক্রিকেটে অবদান রাখাই ছিল তার মূল উদ্দেশ্য। তবে সময়ের সাথে সাথে পরিস্থিতি পরিবর্তিত হয়েছে। গত কয়েক মাসে দায়িত্ব পালনের সময় তিনি নিজেকে নতুনভাবে খুঁজে পেয়েছেন এবং দেশের ক্রিকেট অঙ্গনে দীর্ঘমেয়াদে কাজ করার প্রেরণা পেয়েছেন।
আজ (মঙ্গলবার) সিলেট জেলা স্টেডিয়াম পরিদর্শনে গিয়ে অবকাঠামো ও বিভিন্ন সুবিধা-অসুবিধা ঘুরে দেখেন বুলবুল। এরপর স্থানীয় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে জানান, দেশের প্রয়োজনে বিসিবিতে আরও কিছুদিন কাজ চালিয়ে যেতে চান। তার বক্তব্যে প্রতিফলিত হয়েছে দেশপ্রেম এবং ক্রিকেটের প্রতি গভীর দায়বদ্ধতা। তিনি বলেন, “আমি দেশের জন্য ক্রিকেট অঙ্গনে আরও কাজ করতে চাই। ক্রিকেট শুধু খেলা নয়, এটি জাতীয় গর্ব এবং দেশের ভাবমূর্তির সঙ্গে যুক্ত। এই জায়গাটিতে আমি যতদিন পারি কাজ চালিয়ে যেতে চাই।”
আগামী ৪ অক্টোবর বিসিবির পরিচালনা পর্ষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সে প্রসঙ্গে বুলবুল বলেন, “অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে আমরা ইনশাআল্লাহ নির্বাচন করব। এখানে সভাপতি নয়, পরিচালকদের নির্বাচন হয়। সেটিই মূল লক্ষ্য এবং আমি সেখানে থাকার চেষ্টা করব।”
অর্থাৎ সরাসরি সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা নয়, বরং পরিচালক হিসেবে থেকে দেশের ক্রিকেটে অবদান রাখার জন্যই এবার তিনি ভোটে অংশ নিতে যাচ্ছেন।
দীর্ঘ সময় ধরে আইসিসিতে দায়িত্ব পালন করে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট প্রশাসন সম্পর্কে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা অর্জন করেছিলেন বুলবুল। সেই অভিজ্ঞতাই কাজে লাগাতে অস্থায়ীভাবে বিসিবিতে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। তবে বোর্ডে কাজ করার পর উপলব্ধি করেছেন, দেশের ক্রিকেট উন্নয়নে এখনও অনেক কিছু করার বাকি আছে। তাই অস্থায়ী ভূমিকা থেকে স্থায়ীভাবে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
এমন সিদ্ধান্তের আভাস আসলে এর আগেই পাওয়া গিয়েছিল। গত ২৮ আগস্ট বিসিবি সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে এক বক্তব্যে বুলবুল ইঙ্গিত দিয়েছিলেন নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে। তিনি বলেছিলেন, “আমার ব্যক্তিগত যে ইচ্ছা... আমি হঠাৎ করে এখানে এসেছি এবং দায়িত্ব নিয়েছি। আমার স্থায়ী সবকিছু ছিল (আইসিসিতে), সেগুলো ছেড়ে দেশের জন্য এসেছি। যতদিন সম্ভব কাজ করব। ভবিষ্যতের ব্যাপারটা আমার হাতে নেই।”
এই বক্তব্য থেকেই বোঝা যাচ্ছিল, তিনি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে ইতিবাচক। অবশেষে গুঞ্জন সত্যি হলো— বিসিবির আসন্ন নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন বুলবুল।
বুলবুলের এই সিদ্ধান্তে ক্রিকেট মহলে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। অনেকেই মনে করছেন, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দীর্ঘ অভিজ্ঞতা এবং দেশের ক্রিকেটের প্রতি তার দায়বদ্ধতা বিসিবির জন্য উপকারী হবে। বিশেষ করে অবকাঠামো উন্নয়ন, ঘরোয়া ক্রিকেটকে সুসংগঠিত করা এবং বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে কাঠামোগত পরিবর্তন আনার ক্ষেত্রে তার অভিজ্ঞতা বড় ভূমিকা রাখতে পারে।
বিসিবির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যেই উত্তেজনা বাড়ছে। তবে সাবেক অধিনায়ক বুলবুলের অংশগ্রহণ এ নির্বাচনে নতুন মাত্রা যোগ করবে বলেই মনে করছেন সবাই। দেশের ক্রিকেটের স্বার্থে তিনি দীর্ঘমেয়াদে কাজ চালিয়ে যেতে চান— সেটিই এখন ক্রিকেটপ্রেমীদের কাছে সবচেয়ে বড় প্রত্যাশা।
বাংলাবার্তা/এমএইচ