
ছবি: সংগৃহীত
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) সম্প্রতি সংঘটিত হামলার ঘটনায় মামলা দায়ের হয়েছে কি হয়নি—এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও হাটহাজারী থানার মধ্যে তথ্য-অসামঞ্জস্য দেখা দিয়েছে। ফলে শিক্ষার্থী, শিক্ষক এমনকি প্রশাসনের ভেতরেও বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। কারও বক্তব্যে মামলা দায়েরের বিষয়টি নিশ্চিত করা হলেও, পুলিশ বলছে মামলা এখনও হয়নি—শুধু প্রক্রিয়াধীন।
চবি রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. সাইফুল ইসলাম সংবাদমাধ্যমকে জানান, “মামলা হয়ে গিয়েছে। আমরা সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) রাতে জিডি করি। প্রক্টর ও নিরাপত্তা প্রধান বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন।” তার বক্তব্য অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আনুষ্ঠানিকভাবে মামলা করার উদ্যোগ নিয়েছে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করার দায়িত্ব দিয়েছে।
তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা দফতরের প্রধান (ভারপ্রাপ্ত) আবদুর রহিম আবার ভিন্ন চিত্র তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “সোমবার রাত ১২টার পর জিডি করা হয়। তথ্য প্রমাণাদি নিয়ে মামলা করতে গিয়েছেন সহকারী প্রক্টর নাজমুল হোসাইন ও কোরবান আলী। কিন্তু তথ্য প্রমাণাদি পর্যাপ্ত না থাকায় মামলা দায়ের করতে পারেননি। পরবর্তীতে মামলা হয়েছে কিনা সে বিষয়ে আমি জানি না।” তার বক্তব্য থেকে স্পষ্ট যে মামলার প্রক্রিয়ায় শুরুর দিকে প্রতিবন্ধকতা দেখা দিয়েছে এবং পর্যাপ্ত প্রমাণ না থাকায় পুলিশ সরাসরি মামলা নিতে অনাগ্রহ প্রকাশ করেছে।
হাটহাজারী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু কাওসার হোসেন এ বিষয়ে স্পষ্ট অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “মামলা এখনো হয়নি। প্রক্রিয়াধীন আছে।” অর্থাৎ, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে যেভাবে মামলা দায়েরের বিষয়টি নিশ্চিত করা হচ্ছে, তা পুলিশের বক্তব্যের সঙ্গে মিলছে না।
এই অসামঞ্জস্যপূর্ণ তথ্য শিক্ষার্থীদের মধ্যেও বিভ্রান্তি তৈরি করেছে। ছাত্রদের অনেকেই অভিযোগ করছেন, হামলার ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কঠোর অবস্থান নিয়েছে বলে জানিয়েছিল। প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল যে হামলার ঘটনায় মামলা হবে, শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে, এমনকি কয়েকটি সিদ্ধান্তও ঘোষণা করা হয়। কিন্তু মামলা আদৌ হয়েছে কি না, তা নিয়েই এখন সন্দেহ তৈরি হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “প্রক্টর ও নিরাপত্তা কর্মকর্তারা তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করতে গিয়ে সমস্যায় পড়েছেন। কে হামলা করেছে, কতজন জড়িত, সিসিটিভি ফুটেজে কী আছে—এসব বিষয়ে নিশ্চিত না হয়ে মামলা দায়ের করলে আইনি জটিলতা তৈরি হতে পারে।
চবির সাধারণ শিক্ষার্থীরা এই ধোঁয়াশায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তাদের মতে, হামলার ঘটনায় মামলা নিয়ে টালবাহানা হচ্ছে। একজন শিক্ষার্থী বলেন, “প্রশাসন বলছে মামলা হয়েছে, আবার পুলিশ বলছে হয়নি। এটা কি আমাদের সঙ্গে খেলা? আমরা পরিষ্কারভাবে জানতে চাই আসলেই মামলা হয়েছে কি না।”
আরেকজন শিক্ষার্থী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “যদি মামলা না হয়, তাহলে হামলাকারীরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠবে। প্রশাসনকে সঠিক তথ্য দিতে হবে। দায়সারা বক্তব্য দিয়ে আমাদের বিভ্রান্ত করা চলবে না।”
এর আগে হামলার ঘটনার পরপরই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এক জরুরি বৈঠক করে ১০টি সিদ্ধান্ত নেয়। সিদ্ধান্তগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল মামলার পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ে আইনশৃঙ্খলা জোরদার করা, সিসিটিভি মনিটরিং বৃদ্ধি করা, এবং অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া। সেই সময়ই জানানো হয়েছিল, সোমবার রাতেই মামলা দায়ের করা হবে। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, মামলা নিয়ে প্রশাসনের দাবি ও পুলিশের বক্তব্যের মধ্যে বিরাট অসঙ্গতি তৈরি হয়েছে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলার ঘটনায় মামলা নিয়ে প্রশাসন ও পুলিশের অসামঞ্জস্যপূর্ণ বক্তব্য শুধু বিভ্রান্তি নয়, ক্ষোভও তৈরি করেছে। শিক্ষার্থীরা পরিষ্কারভাবে জানতে চাইছে আসলেই মামলা হয়েছে কি না। প্রশাসন দাবি করলেও পুলিশ তা অস্বীকার করছে। ফলে প্রশ্ন উঠেছে—হামলাকারীদের দায় এড়াতে কি মামলা নিয়ে গড়িমসি করা হচ্ছে, নাকি তথ্য-প্রমাণের অভাবেই জটিলতা তৈরি হয়েছে?
বাংলাবার্তা/এমএইচ