
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণ এবং রাজস্ব ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এবার নতুন একটি উদ্যোগ নিয়েছে। ব্যবসায়ী সমাজ ও অংশীজনদের অভিযোগ, অভিজ্ঞতা এবং বাস্তব সমস্যাগুলো সরাসরি শোনার জন্য এনবিআর নিয়মিতভাবে আয়োজিত করবে এক বিশেষ সংলাপ অনুষ্ঠান—‘মিট দ্য বিজনেস’। এই সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে প্রতিমাসের দ্বিতীয় বুধবার, রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত রাজস্ব ভবনে।
মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) এক আনুষ্ঠানিক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায় এনবিআর। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কাস্টমস, আয়কর ও মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) নিয়ে ব্যবসায়ীরা যে নানামুখী সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন, সেগুলো সমাধানে দ্রুত উদ্যোগ নেওয়াই হবে এ আয়োজনের মূল লক্ষ্য।
এনবিআরের চেয়ারম্যান এবং বিভিন্ন সদস্যরা প্রতি মাসে আয়োজিত এ সংলাপে উপস্থিত থাকবেন। তাঁরা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে সরাসরি শুনবেন মাঠপর্যায়ের অভিজ্ঞতা ও সমস্যার কথা। এর ফলে নীতিনির্ধারকরা একদিকে যেমন ব্যবসায়ীদের বাস্তব চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা পাবেন, অন্যদিকে সমাধানমূলক পদক্ষেপ নেওয়া অনেক সহজ হবে।
প্রথম সংলাপ আগামী বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৩টায় অনুষ্ঠিত হবে। স্থান হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে এনবিআরের মাল্টিপারপাস হল রুম (কক্ষ নং-৩০১)। এতে অংশ নিতে আগ্রহী ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের জন্য অনলাইনে একটি নির্দিষ্ট ফরম পূরণের আহ্বান জানিয়েছে এনবিআর।
বর্তমান অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে ব্যবসায়ীরা প্রায়শই অভিযোগ করে থাকেন, কাস্টমস ক্লিয়ারেন্সে দীর্ঘসূত্রিতা, ভ্যাট ও আয়করের জটিল প্রক্রিয়া, হঠাৎ নীতিমালা পরিবর্তন এবং বিভিন্ন পর্যায়ে দুর্নীতি ব্যবসার পরিবেশকে বাধাগ্রস্ত করছে।
এনবিআর মনে করছে, এসব সমস্যার সরাসরি সমাধান দেওয়া সম্ভব হবে যদি ব্যবসায়ীরা নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে খোলামেলা মতবিনিময় করতে পারেন। এ কারণে ‘মিট দ্য বিজনেস’কে ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন বা ব্যবসা সহজীকরণের অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
এনবিআরের বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, এই উদ্যোগ ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিবেশকে আরও গতিশীল করার পাশাপাশি রাজস্ব আহরণে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি বাড়াবে। ব্যবসায়ীরা দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসছিলেন, তাঁদের মতামত এবং সমস্যাগুলো খুব একটা গুরুত্ব পায় না। কিন্তু নিয়মিত এ সংলাপ তাঁদের সরাসরি নীতিনির্ধারণ প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত করবে।
এনবিআর আশা করছে, এর মাধ্যমে কেবল করদাতাদের আস্থা বাড়বে না, বরং রাজস্ব আহরণের ক্ষেত্রেও ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো এরই মধ্যে এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে। ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (ডিসিসিআই), মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স (এমসিসিআই) এবং ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই)-এর অনেক নেতাই জানিয়েছেন, এটি দীর্ঘদিনের দাবি ছিল। তাঁদের মতে, ব্যবসায়ীরা যদি নিয়মিতভাবে তাঁদের সমস্যার কথা বলতে পারেন, তবে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরি হবে এবং দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি আরও গতিশীল হবে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ‘মিট দ্য বিজনেস’-এর মাধ্যমে ব্যবসায়ীরা কেবল অভিযোগ জানানোর সুযোগই পাবেন না, বরং কর কাঠামো সহজীকরণ, ডিজিটালাইজড কাস্টমস সিস্টেম এবং ভ্যাট নীতির সংস্কার বিষয়ে প্রস্তাবও দিতে পারবেন। এনবিআর যদি সেই প্রস্তাবগুলোকে গুরুত্ব দিয়ে বাস্তবায়ন করে, তবে রাজস্ব ব্যবস্থায় বড় ধরনের ইতিবাচক পরিবর্তন আসতে পারে।
এনবিআরের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, এই সংলাপকে ভবিষ্যতে জেলা পর্যায়ে সম্প্রসারণের পরিকল্পনাও রয়েছে। প্রথমে রাজধানী ভিত্তিক ব্যবসায়ীদের নিয়ে শুরু হলেও পর্যায়ক্রমে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ব্যবসায়ী সংগঠনকেও এর অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
বাংলাবার্তা/এসজে