
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস দৃঢ়ভাবে ঘোষণা করেছেন যে, বাধা-বিপত্তি যাই আসুক না কেন, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে অবাধ, সুষ্ঠু এবং উৎসবমুখর পরিবেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় সাতটি রাজনৈতিক দল ও একটি সংগঠনের সঙ্গে বৈঠকে তিনি এই বার্তা দেন। বৈঠক শেষে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
প্রেস সচিব বলেন, প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনের বিষয়টি নিয়ে স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন—“আমরা এমন একটি নির্বাচন করতে চাই, যেখানে জনগণ আনন্দের সঙ্গে ভোট দিতে আসবে। যাদের জীবনে ভোট দেওয়ার অভিজ্ঞতা হয়নি, তাদের জন্য এটি হবে নতুন অভিজ্ঞতা। আবার যারা পূর্বে ভোট দিতে গিয়ে নানা ধরনের অনিয়ম, ভীতি বা তিক্ত অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছেন, তাদের জন্যও এটি হবে একটি ভিন্ন এবং ইতিবাচক অভিজ্ঞতা। কেউ যেন বলতে না পারে যে আমাকে ভোট দিতে দেওয়া হয়নি।”
নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা চলবে
প্রধান উপদেষ্টা বৈঠকে সতর্ক করে বলেন, “যারা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সফলভাবে নির্বাচন পর্যন্ত পৌঁছাতে দিতে চায় না, তারা সবধরনের কৌশল অবলম্বন করবে। কিছু লক্ষণ আমরা ইতিমধ্যেই লক্ষ্য করছি, সামনের দিনগুলোতে আরও এমন প্রচেষ্টা দেখা যেতে পারে। এজন্য আমাদের সচেতন থাকতে হবে। আমাদের প্রধান দায়িত্ব হলো নির্বাচন আয়োজন করা, আর সেই নির্বাচন ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই হবে। নির্বাচিত সরকারের কাছে আমরা শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করব।”
তিনি রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগিতা কামনা করে বলেন, “এই নির্বাচন শুধু অন্তর্বর্তী সরকারের নয়, এটি সমগ্র জাতির নির্বাচন। জনগণের বহু প্রতীক্ষিত আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটবে এই নির্বাচনের মাধ্যমে। ভবিষ্যতের বাংলাদেশ গঠনের পথে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। এ নির্বাচনের মাধ্যমে আমরা প্রমাণ করব যে আমরা নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারি, নিজেদের ভঙ্গিতে সাহসের সঙ্গে দেশকে এগিয়ে নিতে পারি।”
শান্তিপূর্ণ উৎসবমুখর পরিবেশ নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি
প্রধান উপদেষ্টা প্রত্যাশা ব্যক্ত করে বলেন, “সবাই যেন পরিবার-পরিজন নিয়ে ভোটকেন্দ্রে যেতে পারে, সেই ব্যবস্থা করা হবে। ভোট যেন উৎসবের মতো হয়, আর এই অভিজ্ঞতা মানুষ সারা জীবন মনে রাখে। এ নির্বাচনের মাধ্যমে আমরা বিশ্বকে দেখাতে চাই, বাংলাদেশ শান্তিপূর্ণভাবে একটি গণতান্ত্রিক নির্বাচন আয়োজন করতে সক্ষম।”
তিনি আরও যোগ করেন, “প্রতিটি পদক্ষেপেই বাধা আসবে, নানা ধরনের বিভ্রান্তি তৈরি করা হবে। তবে আমাদের লক্ষ্য থেকে সরে গেলে চলবে না। আমাদের স্থির থাকতে হবে, ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে, একে অপরকে সহযোগিতা করতে হবে।”
দুর্গাপূজায় বিশেষ সতর্কতা
আসন্ন দুর্গাপূজা উপলক্ষে তিনি বিশেষ সতর্কতা নেওয়ার আহ্বান জানান। প্রফেসর ইউনূস বলেন, “বাংলাদেশের প্রতিটি ধর্মীয় উৎসব শান্তিপূর্ণভাবে উদযাপন করার দায়িত্ব আমাদের। শত্রুপক্ষ বিভিন্ন গণ্ডগোল সৃষ্টির চেষ্টা করতে পারে। কিন্তু আমরা নিশ্চিত করব যেন পূজা শান্তিপূর্ণভাবে, উৎসবমুখর পরিবেশে সম্পন্ন হয়। এ দেশের মানুষ সব ধর্মের উৎসব একসাথে উদযাপন করে, আমরা সেই ঐতিহ্য ধরে রাখব।”
নুরের চিকিৎসায় উদ্যোগ
বৈঠক শেষে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরের সহধর্মিনী মারিয়া আক্তার, সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান এবং সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসান আল মামুন প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এ সময় তারা নুরের শারীরিক অবস্থার কথা উল্লেখ করলে, প্রধান উপদেষ্টা তাৎক্ষণিকভাবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেন যেন নুরকে সুচিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়।
বৈঠকে উপস্থিত রাজনৈতিক দল
মঙ্গলবারের বৈঠকে অংশ নেয় এবি পার্টি, নাগরিক ঐক্য, গণসংহতি আন্দোলন, গণঅধিকার পরিষদ, এলডিপি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, জাতীয় গণফ্রন্ট এবং হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। বৈঠকে রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে নির্বাচনকালীন বিভিন্ন প্রস্তাব ও উদ্বেগ জানানো হয়।
প্রধান উপদেষ্টা বৈঠকের সার্বিক পরিবেশকে ইতিবাচক আখ্যা দিয়ে বলেন, “সব রাজনৈতিক দলের সহযোগিতায় আমরা একটি গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করতে চাই। জনগণই হোক এই নির্বাচনের প্রকৃত নায়ক।”
বাংলাবার্তা/এমএইচ