
ছবি: সংগৃহীত
সরকারি কর্মচারীদের জন্য নতুন বেতন কাঠামো ঘোষণায় বিলম্ব হতে পারে। রাজনৈতিক, আর্থিক ও সামাজিক সংকট বিবেচনায় নিয়ে সরকারি কর্মচারীদের পে-স্কেল নির্ধারণের জন্য গঠিত কমিশন ইতোমধ্যে কাজ শুরু করলেও, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি এবং আর্থিক সীমাবদ্ধতার কারণে নতুন বেতন কাঠামো ঘোষণার সম্ভাবনা কম। তবে পে-কমিশনের প্রতিবেদন জমা হলে তা সরকারের সুপারিশমালার ভিত্তিতে চূড়ান্ত করা হবে।
কমিশন গঠন ও কার্যক্রম
সরকারি চাকুরীদের জন্য নতুন পে-স্কেল প্রণয়নের জন্য কমিশন গত মাসের ১৪ তারিখে গঠিত হয় এবং একই দিন প্রথম সভা করেছে। কমিশনকে নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে — ছয় মাসের মধ্যে — প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। অর্থাৎ আগামী বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি কমিশনের মেয়াদ পূর্ণ হবে। কমিশন সরকারের কাছে একটি সুপারিশমালা দাখিল করবে, যা পরবর্তী সময়ে নতুন সরকার বাস্তবায়ন করবে।
পে-কমিশনের কার্যপরিধিতে রয়েছে সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান, সরকারি মঞ্জুরিপ্রাপ্ত বিশ্ববিদ্যালয় এবং রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন, ভাতা ও অন্যান্য সুবিধা পর্যালোচনা। কমিশনের সদস্যরা ইতোমধ্যে বিভিন্ন সংস্থার বেতন কাঠামো ও সুবিধার মূল্যায়ন শুরু করেছেন।
বর্তমান বেতন কাঠামো ও সম্ভাব্য পরিবর্তন
বর্তমান বেতন কাঠামো ২০১৫ সালের পে-স্কেল অনুযায়ী ২০টি গ্রেডে বিভক্ত, যা প্রায় ১৫ লাখ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন নির্ধারণ করে। নতুন কমিশন রিপোর্টে গ্রেডের সংখ্যা কমবেশি হতে পারে। এছাড়া, বিদ্যমান বেতন বৈষম্য দূর করার বিষয়েও কমিশনকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, “কমিশনকে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। প্রতিবেদনে দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা এবং মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় রাখতে হবে। আমাদের লক্ষ্য হলো সময়োপযোগী বেতন কাঠামো প্রণয়ন। তবে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন উপলক্ষ্যে পরিস্থিতি বিবেচনায় নতুন সরকার এসে তা বাস্তবায়ন করবে।”
রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি জোরদার করছে। নির্বাচনের আগে নতুন বেতন কাঠামো ঘোষণা করা নীতিগতভাবে কঠিন এবং আর্থিক সীমাবদ্ধতার কারণে সরকারের জন্য চাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে পে-কমিশন প্রতিবেদন অনুযায়ী সুপারিশকৃত কাঠামো নির্বাচনের পরে কার্যকর হবে।
কর্মচারীদের প্রত্যাশা ও প্রভাব
সরকারি চাকুরারা মনে করেন, প্রতি পাঁচ বছর অন্তর নতুন পে-স্কেল ঘোষণার নিয়ম থাকলেও বিগত সরকার তা বাতিল করে দিয়েছে। এর ফলে অনেক কর্মচারী অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। নতুন পে-স্কেল ঘোষণা হলে বেতন বৈষম্য দূর হওয়া এবং বেতন কাঠামো আধুনিকায়নের আশা করছেন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
কমিশনের নজরদারি বিষয়
কমিশন শুধু বেতন নয়, কর্মচারীদের ভাতা, অন্যান্য সুবিধা এবং সরকারি, আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের বেতন কাঠামোর সমন্বয়কেও গুরুত্ব দিচ্ছে। কমিশন নিশ্চিত করবে যে নতুন পে-স্কেল ঘোষণায় কোনো ধরনের অসন্তোষ সৃষ্টি না হয় এবং সকল শ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারী উপকৃত হবেন।
সম্ভাব্য বাস্তবায়ন
নতুন পে-স্কেল ঘোষণার আগে কমিশনের সুপারিশ চূড়ান্ত করতে সরকার সময় নেবে। নির্বাচনের পর নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পর এই বেতন কাঠামো বাস্তবায়ন হবে। এর ফলে সরকারি চাকুরীরা নিয়ম অনুযায়ী মহার্ঘভাতা প্রাপ্য থাকবেন। অর্থাৎ, কমিশনের সুপারিশ কার্যকর হওয়া পর্যন্ত বর্তমান বেতন কাঠামোই থাকবে, তবে মহার্ঘভাতা ও অন্যান্য সুবিধা চালু থাকবে।
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ
অর্থনীতিবিদদের মতে, নতুন বেতন কাঠামো নির্ধারণের ক্ষেত্রে দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা, মূল্যস্ফীতি এবং অর্থনৈতিক সংকটকে বিবেচনায় রাখা জরুরি। সময়োপযোগী ও ন্যায্য বেতন কাঠামো প্রণয়নে কমিশনের সুপারিশ সরকারি কর্মচারীদের আস্থার প্রতিফলন হবে এবং কর্মী সন্তুষ্টি বৃদ্ধি পাবে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ