
ছবি: সংগৃহীত
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ঘিরে আবারও ছড়িয়ে পড়ল এক অভাবনীয় গুজব। কয়েকদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ট্রেন্ড করেছে তার মৃত্যুর খবর। বিশেষ করে এক্স (সাবেক টুইটার)-এ ট্রাম্পের মৃত্যু বিষয়ক গুজব ছিল ট্রেন্ডিং টপিকের মধ্যে। এতে অনেকে ধরে নিয়েছিলেন, হয়তো সত্যিই যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট আর বেঁচে নেই। কিন্তু মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) হোয়াইট হাউসে সংবাদ সম্মেলনে এসে নিজেই বিষয়টি পরিষ্কার করলেন তিনি। শুধু পরিষ্কারই করলেন না, বরং এ ধরনের গুজব ছড়ানো এবং সংবাদমাধ্যমে তা আলোচনায় আনার কারণে তীব্র ক্ষোভও প্রকাশ করেছেন।
কীভাবে ছড়াল ট্রাম্পের মৃত্যুর গুজব?
সপ্তাহের শেষ দিকে হঠাৎ করেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে #TrumpDead এবং #RIPTrump হ্যাশট্যাগ ঘুরতে শুরু করে। দেখা যায়, শনিবার সকাল নাগাদ এ বিষয় নিয়ে প্রায় ১৩ লাখ ব্যবহারকারী আলোচনা করেছেন। অনেকেই দাবি করেন, ট্রাম্পকে কয়েকদিন জনসম্মুখে দেখা যায়নি, তাই তার মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিষয়টি দ্রুতই আলোচনায় চলে আসে এবং মূলধারার কিছু গণমাধ্যমেও জায়গা পেতে শুরু করে।
সাংবাদিকের প্রশ্নে ট্রাম্পের প্রতিক্রিয়া
এমন পরিস্থিতির মধ্যে মঙ্গলবার এক সাংবাদিক ট্রাম্পকে সরাসরি প্রশ্ন করেন—“সপ্তাহের শেষ দিকে আপনার মৃত্যু নিয়ে একটা ভাইরাল সোশ্যাল মিডিয়া ট্রেন্ড শুরু হয়। আপনি কীভাবে জানতে পারলেন যে, আপনি মারা গেছেন? বিষয়টি কি নিজে দেখেছেন?” সাংবাদিক আরও যোগ করেন, “শনিবার সকাল পর্যন্ত আপনার মৃত্যু নিয়ে ১৩ লাখ মানুষ আলোচনা করছিল।”
এই প্রশ্নে প্রথমে খানিকটা অবাক হন ট্রাম্প। পরে হেসে জবাব দেন, “সত্যি বলছেন? আমি তো কিছুই জানতাম না। আমি জানি, ব্যাপারটা বেশ পাগলামি। গত সপ্তাহে আমি একাধিক সংবাদ সম্মেলন করেছি, সবগুলোই খুব সফল হয়েছে। তারপর আমি শুধু দুই দিন কোনো সম্মেলন করিনি, আর তারা বলা শুরু করল, ‘নিশ্চয়ই তার কিছু একটা হয়েছে!’”
বাইডেনকে টেনে আনা
ট্রাম্প এই প্রসঙ্গে বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে টেনে আনেন। তিনি বলেন, “বাইডেন তো মাসের পর মাস কোথাও সামনে থাকতেন না। আপনাদের চোখেই পড়তেন না। অথচ কেউ কখনও বলেনি যে, তার কিছু একটা হয়েছে। অথচ তখনও তিনি দারুণ ফিট ছিলেন। কিন্তু আমার ক্ষেত্রে মাত্র দুই দিন সামনে না আসতেই এই পাগলামি শুরু হলো।”
নিজের কার্যক্রমের বর্ণনা দিলেন ট্রাম্প
মৃত্যুর গুজব উড়িয়ে দিয়ে ট্রাম্প বিস্তারিতভাবে জানালেন, ওই সময় তিনি কতটা সক্রিয় ছিলেন। তিনি বলেন, “আমি তো দেড় ঘণ্টার একটি দীর্ঘ সাক্ষাৎকার দিয়েছিলাম, যেটা আপনারাই দেখেছেন। সেটি আপনাদের প্রতিদ্বন্দ্বী একটি চ্যানেলে প্রচারিত হয়েছে। আমি আরও অনেকগুলো টিভি শোতে অংশ নিয়েছি, ট্রুথ সোশ্যালে পোস্ট দিয়েছি। সেগুলো সবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল।”
তিনি আরও জানান, সপ্তাহান্তে তিনি পোটোম্যাক নদীর কাছে নিজের ক্লাবে গিয়েছিলেন এবং সেখানেও অনেকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। তাই তার মৃত্যু নিয়ে যেসব গুজব ছড়ানো হয়েছে, তা ভিত্তিহীন।
সংবাদমাধ্যমকে দায়ী করলেন ট্রাম্প
ট্রাম্প স্পষ্টভাবে সংবাদমাধ্যমকে দায়ী করেন এই গুজব ছড়িয়ে পড়ার জন্য। তিনি বলেন, “আমার মৃত্যুর খবর পুরোটাই ভুয়া খবর। এতটাই ভুয়া যে, এটি প্রমাণ করে গণমাধ্যমের বিশ্বাসযোগ্যতা কতটা কমে গেছে। তারা দায়িত্বজ্ঞানহীনভাবে এমন বিষয় প্রচার করেছে।”
তিনি আরও অভিযোগ করেন, সংবাদমাধ্যম ইচ্ছাকৃতভাবে তার সম্পর্কে নেতিবাচক খবর ছড়ানোর চেষ্টা করে। ফলে মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হয় এবং গণমাধ্যমের গ্রহণযোগ্যতা দিন দিন কমে যাচ্ছে।
রাজনৈতিক প্রভাব
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ট্রাম্পকে ঘিরে এ ধরনের গুজব ছড়ানো কেবল তার ব্যক্তিগত ইমেজের ওপরই নয়, আসন্ন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রেক্ষাপটেও প্রভাব ফেলতে পারে। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে এখন ট্রাম্প অন্যতম আলোচিত ও প্রভাবশালী প্রার্থী। তার মৃত্যু নিয়ে গুজব রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার অংশ হিসেবেও ব্যাখ্যা করা যেতে পারে।
ট্রাম্পের ভাষায়, “না, আমি খুব সক্রিয় ছিলাম। তারা জানতও আমি কোথায় গিয়েছিলাম। অথচ তারপরও আমার মৃত্যু নিয়ে এমন গুজব ছড়াল। এ কারণেই আমি বলি—আমাদের সংবাদমাধ্যমের বিশ্বাসযোগ্যতা আজ শূন্যের কোটায়।”
এক্সে ট্রাম্পের মৃত্যু নিয়ে আলোচনায় মেতে উঠেছিল লাখো মানুষ। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ট্রাম্প নিজেই দাঁড়িয়ে সেই গুজব উড়িয়ে দিলেন এবং গণমাধ্যমের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে বিষয়টি আরও একবার আলোচনায় নিয়ে এলেন।
বাংলাবার্তা/এমএইচ