
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশের ছোটপর্দার অভিনয়শিল্পীদের মধ্যে নতুন প্রজন্মে যাদের নিয়ে সবচেয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে, তাঁদের একজন তানজিম সাইয়ারা তটিনী। অল্প সময়ে অসংখ্য দর্শকের মন জয় করে নেওয়া এই তরুণী অভিনয়শিল্পী একের পর এক কাজ করে যাচ্ছেন। ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন শুটিং নিয়ে। নাটক, টেলিফিল্ম কিংবা ওয়েব কনটেন্ট—সব ক্ষেত্রেই সমান দক্ষতায় নিজেকে উপস্থাপন করছেন তিনি।
নতুন নাটকের শুটিংয়ে অপূর্বর সঙ্গে
গত মঙ্গলবার রাজধানীতে একটি এক ঘণ্টার নাটকের শুটিং করছিলেন তটিনী। এই নাটকে তার সহশিল্পী ছিলেন জনপ্রিয় অভিনেতা অপূর্ব। কাজের ফাঁকে তটিনী জানালেন, অপূর্বের সঙ্গে কাজ করা সবসময়ই বিশেষ অভিজ্ঞতা। “অপূর্ব ভাই সহশিল্পী হিসেবে ভীষণ সাপোর্টিভ। খুব সহযোগিতা করেন। তাঁর সঙ্গে অনেক নাটক করেছি এবং দর্শকদের কাছ থেকে দারুণ সাড়া পেয়েছি,” বলেন তিনি।
নতুন নাটকের চরিত্র নিয়েও বেশ উৎসাহিত এই অভিনেত্রী। তটিনী বলেন, “এই নাটকে আমার চরিত্রটি বেশ চটপটে ও চঞ্চল। চরিত্রের ভেতরে নতুনত্ব আছে। চরিত্রের সঙ্গে মিশে যাওয়ার চেষ্টা করছি। দেখা যাক দর্শকরা কতটা গ্রহণ করেন।” নাটকের নাম এখনো চূড়ান্ত হয়নি, তবে নির্মাতা ও শিল্পীরা আশাবাদী যে এটি দর্শকের মনে জায়গা করে নেবে।
শিহাব শাহীনের নাটকে ৯০ দশকের গল্প
শুটিংয়ের ব্যস্ততার মধ্যেই সম্প্রতি শেষ করেছেন শিহাব শাহীন পরিচালিত ‘ক্যাপিটাল অ্যাপার্টমেন্ট’ নামের একটি নাটকের কাজ। এতে তার বিপরীতে অভিনয় করেছেন তৌসিফ মাহবুব। নাটকটি মূলত ৯০ দশকের প্রেক্ষাপট নিয়ে নির্মিত। সে সময়ের জনপ্রিয় ‘পত্র মিতালি’ বিষয়টি গল্পে স্থান পেয়েছে।
এ প্রসঙ্গে তটিনী বলেন, “একটা সময় এ দেশে পত্র মিতালি ছিল। মানুষ চিঠির মাধ্যমে সম্পর্ক গড়ে তুলত। সেই সময়ের আবেগ ও অনুভূতি নিয়ে শিহাব শাহীন ভাইয়ের নাটকটি নির্মিত হচ্ছে। আমার জন্য চরিত্রটি ছিল চ্যালেঞ্জিং। তাঁর সঙ্গে কাজ করলে সবসময় নতুন কিছু শেখার সুযোগ হয়।”
এছাড়াও তটিনী জানিয়েছেন, আগামী সেপ্টেম্বরে শিহাব শাহীনের পরিচালনায় একটি ওয়েব কনটেন্টে কাজ করার সম্ভাবনা রয়েছে।
আশ্রমের গল্পে নতুন চরিত্র
সিনেমাওয়ালার ব্যানারে তটিনী আরও একটি নাটকের শুটিং শেষ করেছেন। সেখানে তার সহশিল্পী ইয়াশ রোহান। নাটকের নাম এখনও চূড়ান্ত হয়নি, তবে কাহিনি আবর্তিত হয়েছে একটি আশ্রমকে কেন্দ্র করে।
তটিনী বলেন, “নাটকের মেয়েটি আশ্রমে বড় হয়। জীবনে তার আপনজন বলতে কেউ নেই। একাকীত্ব, সংগ্রাম আর আশ্রম জীবনের নানা গল্প এই নাটকে উঠে এসেছে। আমি বিশ্বাস করি, নাটকটি দর্শকের হৃদয় ছুঁয়ে যাবে।”
সহশিল্পী ইয়াশ রোহানের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা নিয়েও মন্তব্য করেন তটিনী। তাঁর ভাষায়, “জুটিপ্রথা দর্শকরাই বানিয়ে দেন। এটা একজন শিল্পীর জন্য প্লাস পয়েন্ট। তবে জুটি তৈরি হওয়া সহজ নয়। ইয়াশের সঙ্গে কিছু কাজ দর্শক ভালোভাবে গ্রহণ করেছেন। তবে আমি অনেকের সঙ্গেই অভিনয় করেছি, আর সেই নাটকগুলোও সমানভাবে দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছে।”
সিনেমায় আসার পরিকল্পনা
অল্প কয়েক বছরের ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক ও টেলিফিল্মে অভিনয় করলেও এখনো বড়পর্দায় অভিষেক ঘটেনি তটিনীর। এ বিষয়ে তিনি বলেন, “এখন মন দিয়ে নাটকেই কাজ করতে চাই। বড়পর্দায় কাজ করার আগে ভালো গল্প, ভালো চরিত্র আর দক্ষ পরিচালক—এই তিনটি বিষয় নিশ্চিত করতে চাই। হুট করে কোনো সিদ্ধান্ত নেব না। তবে ইচ্ছে আছে, একদিন সিনেমায় কাজ করার।”
অভিনয় মানেই শেখার প্রক্রিয়া
তটিনী মনে করেন, প্রতিটি চরিত্র ভিন্ন ভিন্ন অভিজ্ঞতা দেয়। কখনো চঞ্চল তরুণী, কখনোবা নিঃসঙ্গ আশ্রমের মেয়ে—সব চরিত্রের মধ্যেই নতুন কিছু শেখার সুযোগ থাকে। তাঁর কথায়, “অভিনয়ে শেখার শেষ নেই। প্রতিটি চরিত্র আমাকে নতুন কিছু শিখতে সাহায্য করে। যত শিখতে পারব, তত ভালো কিছু করতে পারব। আমি চাই দর্শকের কাছে বিশ্বাসযোগ্য চরিত্র হয়ে উঠতে। যাতে তাঁরা আমাকে অনেকদিন মনে রাখেন।”
অভিনয়কে নিজের জীবনের অংশ বলেই মনে করেন তটিনী। “এখন প্রতিদিন শুটিং না থাকলে ভালো লাগে না। বরং প্রতিদিন শুটিং থাকলেই ভালো লাগে। কাজ করতে করতে অভ্যাস হয়ে গেছে,” হাসতে হাসতে বললেন তিনি।
সামনে এগোনোর স্বপ্ন
বর্তমানে নাটকে মনোযোগ দিলেও তটিনীর চোখ সামনে। ভিন্ন ভিন্ন চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে দর্শকের কাছে নিজের অবস্থান আরও দৃঢ় করতে চান তিনি। দর্শকের ভালোবাসাই তাঁর এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা। আর তাই এক কথায় বলতে গেলে—তটিনীর জন্য অভিনয় মানে হলো শিখতে থাকা, আরও ভালো হওয়ার জন্য প্রতিনিয়ত নিজেকে নতুনভাবে তৈরি করা।
বাংলাবার্তা/এমএইচ