
ছবি: সংগৃহীত
সংযুক্ত আরব আমিরাতে চলমান ত্রিদেশীয় সিরিজে আফগানিস্তান আবারও তাদের সামর্থ্য প্রমাণ করল। মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) পাকিস্তানের বিপক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে জয় পেয়ে তারা ফাইনালের পথে নিজেদের অবস্থান শক্ত করল। ম্যাচটির বিশেষ গুরুত্ব কেবল জয় নিয়েই সীমাবদ্ধ ছিল না, ব্যক্তিগত এক ঐতিহাসিক অর্জনের কারণেও আলোচনায় চলে এলেন আফগান ক্রিকেটের নির্ভরযোগ্য অলরাউন্ডার মোহাম্মদ নবি।
দীর্ঘদিন ধরে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে এক অনন্য রেকর্ড ছিল কেবল বাংলাদেশের তারকা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের দখলে। রেকর্ডটি হলো—আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে দুই হাজারের বেশি রান ও শতাধিক উইকেট নেওয়া। ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ততম ফরম্যাটে এতদিন একাই এই বিরল কীর্তির মালিক ছিলেন সাকিব। কিন্তু সংযুক্ত আরব আমিরাতের মাঠে আফগান অলরাউন্ডার মোহাম্মদ নবি সেই রেকর্ডে ভাগ বসালেন।
মঙ্গলবার পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের চতুর্থ ম্যাচে বল হাতে দুর্দান্ত বোলিং করে নিজের টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে ১০০ উইকেট পূর্ণ করেন নবি। পাকিস্তানের ব্যাটার ফখর জামানকে আউট করার মধ্য দিয়েই তিন অঙ্কের উইকেট সংখ্যা স্পর্শ করেন তিনি। এরপর আরও একটি উইকেট শিকার করে ম্যাচ শেষ করেন ৪ ওভারে মাত্র ২০ রান দিয়ে ২ উইকেট নিয়ে। এই সাফল্যের মধ্য দিয়েই সাকিবের পাশে নাম লেখালেন আফগানিস্তানের অভিজ্ঞ এই অলরাউন্ডার।
মোহাম্মদ নবি শুধুই বল হাতে নয়, ব্যাট হাতেও দলের জন্য সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে আসছেন। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে এখন পর্যন্ত ১৩৪ ম্যাচ খেলেছেন তিনি। এই সময়ে ব্যাট হাতে ২২.২৪ গড় ও ১৩৫.৮৭ স্ট্রাইক রেটে সংগ্রহ করেছেন ২২৪৬ রান। অন্যদিকে বল হাতে তার সংগ্রহ দাঁড়িয়েছে ১০১ উইকেটে। এই পরিসংখ্যানই প্রমাণ করে দলে তার অবদান কতটা ভারসাম্যপূর্ণ।
অন্যদিকে সাকিব আল হাসান আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে আরও এগিয়ে আছেন। বাংলাদেশের হয়ে এখন পর্যন্ত এই ফরম্যাটে ব্যাট হাতে করেছেন ২৫৫১ রান এবং বল হাতে নিয়েছেন ১৪৯ উইকেট। ব্যাটে-বলে সমানতালে অবদান রাখা সাকিবকে অনেকেই বিশ্ব ক্রিকেটের ইতিহাসের সেরা অলরাউন্ডারদের কাতারে রাখেন। দীর্ঘদিন ধরে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে রান ও উইকেট দুটোই হাজারের ঘর ছাড়ানোর কাছাকাছি ছিলেন মোহাম্মদ নবি। অবশেষে পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচে তিনি সেই কাঙ্ক্ষিত মাইলফলক ছুঁয়ে ফেললেন।
উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, আফগানিস্তান ক্রিকেটের উত্থানের সঙ্গে নবি নামটি অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িয়ে আছে। দলে অভিজ্ঞদের মধ্যে অন্যতম এই ক্রিকেটার ব্যাট হাতে আক্রমণাত্মক ভূমিকায় যেমন কার্যকর, তেমনি স্পিন বোলিংয়েও প্রতিপক্ষকে চাপে রাখেন। সাকিবের মতোই তিনি নিজেকে প্রমাণ করেছেন বিশ্ব ক্রিকেটে একজন নির্ভরযোগ্য ‘অলরাউন্ডার’ হিসেবে।
ম্যাচ শেষে আফগানিস্তানের ড্রেসিংরুমে ছিল আনন্দের বন্যা। কেবল পাকিস্তানের বিপক্ষে জয় নয়, নবি যে কীর্তি গড়লেন সেটিও দলের সবাইকে উজ্জীবিত করেছে। আফগান ক্রিকেট বোর্ড ও ভক্তরা সামাজিক মাধ্যমে তাকে অভিনন্দন জানাতে ভোলেনি। অনেকেই মন্তব্য করেছেন—“নবি শুধু আফগানিস্তানের নয়, সমগ্র বিশ্ব ক্রিকেটের গর্ব।”
অন্যদিকে ক্রিকেট বিশ্লেষকরা বলছেন, আফগান ক্রিকেটের জন্য এটি এক বিশাল দারুণ মুহূর্ত। কারণ সাকিবের মতো এক কিংবদন্তি অলরাউন্ডারের পাশে দাঁড়ানো সহজ ব্যাপার নয়। এর মধ্য দিয়ে আফগান ক্রিকেটারদের প্রতিভা ও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তাদের ধারাবাহিক অগ্রযাত্রা আবারও সামনে এল।
সামনে ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনাল ও আসন্ন বিশ্বকাপকে সামনে রেখে এই অর্জন আফগান দলকে আরও আত্মবিশ্বাসী করে তুলবে। আর মোহাম্মদ নবি প্রমাণ করে দিলেন—সময় যতই এগোচ্ছে, তার অলরাউন্ড দক্ষতা এখনও দলের বড় ভরসা হয়ে আছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ