
ছবি: সংগৃহীত
কাস্টমস,এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট পূর্বের রূপগঞ্জ বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা ও ডেপুটি কমিশনার মো আব্দুল হান্নান। ৬ মাসে সরকারি কোষাগারের জন্য আহরণকৃত ভ্যাটের ৮ কোটি টাকার বেশি সরকারি কোষাগারে জমা না দিয়ে নিজে আত্মসাত করেছেন।
এছাড়া গাড়ি,ফ্ল্যাট,জমি,সঞ্চয়পত্র, ব্যাংক ব্যালেন্স করে প্রায় ২৫ কোটি টাকা সরকারি অর্থ আত্মসাত করে নিজে লাভবান হয়েছেন। এই কর্মকর্তাকে সম্প্রতি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বদলি করে ঢাকা পূর্ব ভ্যাট থেকে কাস্টমস,এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট সিলেটে পদায়ণ করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে সীমাহীন দুর্নীতির তথ্য রয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে।
দুর্নীতি দমন কমিশনেও (দুদক) এই কাস্টমস কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এমনই অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
জানা যায়, আব্দুল হান্নান গ্রেড ৬ এর একজন সরকারি কর্মচারী। তার বেতন সবমিলে ৬৩ হাজার টাকা। ৩১তম বিসিএস এ কাস্টমস ক্যাডার। ২০১৪ সালের জুন মাসে চাকরিতে যোগদান করেন। ঢাকা পূর্ব ভ্যাট অফিস শিল্প প্রতিষ্ঠানের জন্য হাব হিসেবে পরিচিত। ডিসি হান্নান অবৈধ অর্থ উপার্জনের জন্য কিছু পন্থা অবলম্বন করে থাকেন সেখানে কর্মরত থাকাকালীন সময়ে।
রূপগঞ্জ ভ্যাট অফিসের অধীনে রয়েছে শতশত শিল্প প্রতিষ্ঠান। এসব শিল্প প্রতিষ্ঠানের পণ্য তৈরির জন্য প্রয়োজন হয় কাঁচামাল। এসব কাঁচামাল বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয় নির্দিষ্ট এইচ.এস.কোড এর বিপরীতে। আমদানিকারকদের অনেকেই উচ্চ মূল্যের এইচ.এস.কোড এর পণ্য কম মূল্যের এইচ.এস.কোড দেখিয়ে কম ভ্যাট সরকারকে দেয় কর্মকর্তাদের মাধ্যমে যোগসাজস করে। আর ঢাকা পূর্ব কমিশনারেটে এসব ঘটনা ঘটে হান্নানের নেতৃত্বে। আর ভ্যাট ফাঁকি দেওয়ার অর্ধেক টাকা হাতিয়ে নেয় ডিসি হান্নান।
এই ডিসি ১০ লাখ টাকা ভ্যাট ফাঁকি দেওয়া প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ৫ লাখ টাকা ভ্যাট সরকারি কোষাগারে জমা দিয়ে, ফাঁকি দেওয়া ৫ লাখ টাকার অর্ধেক আড়াই লাখ টাকা নিয়ে নেয় হান্নান। এই টাকা কিছু তিনি সরাসরি নিজে গ্রহন করেন কিংবা মূল ফাইলের সহকারি রাজস্ব কর্মকর্তা বা বাইরে তার নিয়োজিত ব্যক্তি সেসব টাকা কালেক্ট করেন।
শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো দেশের বাজারে পণ্য বাজারজাত করতে সরকারের নিয়ম অনুযায়ী মূল্য ঘোষণার অনুমতি নিতে হয়। এই মূল্য ঘোষনায় প্রতিষ্ঠানগুলো বাজারে বিক্রয়কৃত মূল্যের চেয়ে কম মূল্য ঘোষণা দিয়ে ছাড়পত্র নিতে চায়। এখানে ডিসি আব্দুল হান্নান তার অধীনস্ত কর্মকর্তাদের চাপ দিয়ে বাজার মূল্যের চেয়ে কম মূল্যে প্রতিষ্ঠান সমূহকে ছাড়পত্র দিয়ে নিজে ব্যক্তিগতভাবে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। এখানেও তিনি শুভঙ্করের ফাঁকি দিয়ে সরকারকে ক্ষতিগ্রস্থ করে নিজে লাভবান হন।
রূপগঞ্জ বিভাগের অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের ভ্যাট নিবন্ধন নেই। নিবন্ধন করতে উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের চাপ থাকলেও নামে মাত্র মাসোয়ারি কিছু প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন করান এই ডিসি। যেসব প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন নেই সেসব প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে মাসওয়ারি ডিসি তার নিজস্ব লোকজনকে দিয়ে মোটা অংকের টাকা আদায় করান। যা তিনি নিজেই সব আত্মসাত করেন।
সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রতি মাসেই তাদের রিটার্ন জমা দিতে হয়। এই রির্টানে সংশ্লিষ্ঠ মাসে কি পরিমাণ ভ্যাট জমা হয়েছে সেটা উল্লেখ থাকে। অসংখ্য প্রতিষ্ঠান তাদের ন্যায্য ভ্যাট জমা না দিয়ে তারা কম ভ্যাট জমা দেয়। ব্যবসায়ীদের এই ভ্যাট কম হলেই সংশ্লিষ্ঠ রেঞ্জ কর্মকর্তা এ.আর.ও পরীক্ষা নিরীক্ষা করে ভুল পেলেই ডিসি হান্নান মামলার ভয় দেখিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। এছাড়া ভ্যাট নিবন্ধনকৃত প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রতি মাসেই তাদের রিটার্ন জমা দেওয়ার সময় নির্দিষ্ঠ অংকের টাকার প্যাকেট ডিসি হান্নানকে দিতে হয়।
আরও জানা যায়, এরআগে ডিসি হান্নান চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে দায়িত্বপালনকালে ব্যবসায়ীদের অনৈতিক সুবিধা দিয়ে কোটি টাকার মালিক হয়ে যান। এই হান্নান ঢাকা পূর্ব ভ্যাট বিভাগের সুত্রাপুর,শ্যামপুর,সিদ্দিরগঞ্জ ও রূপগঞ্জে দায়িত্ব পালন করেছেন। এই ডিসি হান্নান সবমিলে সরকারের রাজস্বের প্রায় ২৫ কোটি টাকা সরকারি কোষাগারে জমা না দিয়ে নিজে ভোগ দখল করে আত্মসাত করেছেন। এছাড়া রাজধানী ঢাকাতে তার ফ্ল্যাট রয়েছে। গ্রামের বাড়িতে করেছেন আলীশান বাড়ি। স্ত্রী,ভাই ও শ্বশুর-শ্বাশুড়ির নামে করেছেন বিভিন্ন সহায় সম্পত্তি।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসে থাকাকালীন সিআরভি গাড়ি ১০ লাখ টাকায় নিলাম বিভাগের দায়িত্বে থাকাকালীন ক্রয় করেন। নিজে নিলামের দায়িত্বে থেকে এভাবে গাড়ি কেনার নজীর অতীতে কোন কাস্টম কর্মকর্তার নেই। এছাড়া চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসে থাকাকালীন জেটিতে মালটানার ২ টা গাড়ি কিনে বন্দরে ভাড়া দিয়েছেন। ফালতু দিয়ে তিনি গাড়ি ভাড়ার টাকা তোলেন। চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসে তিনি ২ বার চাকরি করেছেন। তার গ্রামের বাড়ি রাজশাহী। মুক্তি যোদ্ধা কোটায় চাকরি করছেন। ডিসি হান্নানের স্ত্রী একসময় প্রাইমারী স্কুলে চাকরি করতো। এখন ঘুষ খেয়ে কোটিপতি হওয়ায় চাকরি ছেড়ে দিয়েছে।
এ বিষয়ে ডিসি আব্দুল হান্নানের ব্যক্তিগত ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রথমে পরে কথা বলবেন বলে জানান। এরপর আবার যোগাযোগ করা হলে তিনি বাংলাবার্তাকে বলেন, এগুলো সম্পর্কে আমি কোন বক্তব্য দিবো না। আপনি পারলে নিউজ করেন। আমার কিচ্ছু হবে না।
বাংলাবার্তা/এসজে