
ছবি: সংগৃহীত
মার্কিন বাণিজ্যমন্ত্রী হাওয়ার্ড লুটনিক বলেছেন, ভারত রাশিয়ার জ্বালানি কেনা বন্ধ না করলে আগামী এক থেকে দুই মাসের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ক্ষমা চেয়ে বসতে হবে এবং নতুন বাণিজ্য চুক্তিতে আলোচনা করবে। এই মন্তব্য আন্তর্জাতিক অর্থনীতিতে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে, কারণ ভারত বর্তমানে রাশিয়া ও চীনের সঙ্গে নিবিড় বাণিজ্যিক সম্পর্ক বজায় রাখছে, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নীতি ও স্বার্থের সঙ্গে দ্বন্দ্বে পড়েছে।
মার্কিন বাণিজ্যমন্ত্রী ব্লুমবার্গকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, “আমার বিশ্বাস, এক বা দুই মাসের মধ্যে ভারত আলোচনার টেবিলে আসবে। তারা বলবে, আমরা ক্ষমা চাইছি এবং প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে চুক্তি করার চেষ্টা করবে।”
তিনি আরও সতর্ক করে বলেন, যদি ভারত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমর্থন না দেখায়, তবে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করা ভারতীয় পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে। এই হুমকি ভারতীয় রপ্তানি ও বৈদেশিক বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বড় প্রভাব ফেলতে পারে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
লুটনিক ভারতের অবস্থানকে “শুধুই আস্ফালন” হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। তার ভাষ্য, “সবচেয়ে বড় ক্লায়েন্টের সঙ্গে লড়াই করা হয়তো ভালো লাগতে পারে। কিন্তু দিন শেষে নিজেদের ব্যবসার স্বার্থেই ভারত আমেরিকার সঙ্গে চুক্তি করবে।”
এর আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে একটি পোস্ট দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তিনি লিখেছেন, “মনে হচ্ছে আমরা ভারত ও রাশিয়াকে গভীর অন্ধকার চীনের কাছে হারিয়েছি। আমি তিন দেশেরই সাফল্য কামনা করছি।”
ট্রাম্পের এই মন্তব্যের পরপরই ভারত প্রসঙ্গে কঠোর অবস্থান নেন মার্কিন বাণিজ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, “ভারত যদি তাদের বাজার না খোলে, রাশিয়ার তেল কেনা বন্ধ না করে এবং ব্রিকস থেকেও না সরে, তাহলে সেটা হবে তাদের পছন্দ। তারা চাইলে রাশিয়া ও চীনের সঙ্গে মেলবন্ধন গড়ুক। কিন্তু যদি তা সম্ভব না হয়, তবে ডলারকে সমর্থন করুন, যুক্তরাষ্ট্রকে সমর্থন করুন—আপনার সবচেয়ে বড় গ্রাহককে সমর্থন করুন। নয়তো প্রস্তুত থাকুন ৫০ শতাংশ শুল্ক দেওয়ার জন্য। তারপর দেখা যাবে এই লড়াই কতদিন টেকে।”
ভারতের কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক নীতিতে এ মুহূর্তে জটিলতা দেখা দিয়েছে। দেশটি রাশিয়া থেকে তেল ও অন্যান্য জ্বালানিসামগ্রী কিনছে, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে। এদিকে ব্রিকসের (BRICS) সঙ্গেও নিবিড় সম্পর্ক বজায় রাখার কারণে ভারত একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক মসৃণ রাখতে চাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্রের হুমকি ভারতীয় অর্থনীতি ও বাণিজ্যনীতির ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলতে পারে। ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ হলে ভারতীয় রপ্তানি ব্যাহত হবে, যা বিশেষ করে সফটওয়্যার, কৃষি ও হস্তশিল্প খাতকে প্রভাবিত করবে।
সম্ভাব্য প্রভাব
১. অর্থনৈতিক প্রভাব: যুক্তরাষ্ট্র ভারতের প্রধান রপ্তানি বাজার। শুল্ক আরোপ হলে রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং বৈদেশিক মুদ্রার আগমন কমে যাবে।
২. কূটনৈতিক চাপ: ভারতকে রাশিয়া ও চীনের সঙ্গে তার সম্পর্ক পুনঃপর্যালোচনা করতে হবে, যা দক্ষিণ এশিয়ার কূটনৈতিক ভারসাম্যকে প্রভাবিত করতে পারে।
৩. বাজারে অনিশ্চয়তা: আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীরা ভারতীয় বাজারের উপর আস্থা হারাতে পারেন, যা দেশের অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতাকে প্রভাবিত করবে।
অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ভারত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনার টেবিলে না বসলে এবং শুল্ক ও বাণিজ্য চুক্তি না করলে ব্যবসায়িক খাত বড় ক্ষতির মুখে পড়বে। এছাড়া, রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ভারতকে বৈদেশিক নীতিতে সমঝোতা করতে হতে পারে, যা দেশীয় স্বার্থ এবং ব্রিকস নীতি নিয়ে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করবে।
মার্কিন বাণিজ্যমন্ত্রীর সতর্ক বার্তা এবং ট্রাম্পের মন্তব্য ভারতের কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক নীতির ওপর নতুন চাপ সৃষ্টি করেছে। আন্তর্জাতিক বাজারে ভারতের অবস্থান এবং রপ্তানি খাতের স্বার্থ রক্ষার জন্য আগামী এক থেকে দুই মাসে ভারতকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় বসতে হবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই আলোচনা শুধু অর্থনৈতিক নয়, কূটনৈতিক প্রতিক্রিয়ার দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ।
সূত্র: ব্লুমবার্গ
বাংলাবার্তা/এমএইচ