
ছবি: সংগৃহীত
গাজা যুদ্ধ ও জিম্মি মুক্তির ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি ফিলিস্তিনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের সঙ্গে গভীর আলোচনায় রয়েছে বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) ওয়াশিংটনের হোয়াইট হাউসে ওভাল অফিসে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন। তার এই বক্তব্য নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে যে, যুক্তরাষ্ট্র এবং হামাসের মধ্যে সম্পর্ক কতটা টানাপোড়েনের মধ্য দিয়ে গেলেও বর্তমানে বাস্তব পরিস্থিতি বিবেচনায় উভয় পক্ষ একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগে বাধ্য হয়েছে।
জিম্মি মুক্তির বিষয়কে কেন্দ্র করে আলোচনা
ট্রাম্প বলেন, ইসরাইলের বিভিন্ন স্থানে হামাসের হাতে যেসব মানুষ জিম্মি হিসেবে রয়েছে, তাদের মুক্তির বিষয়ে ওয়াশিংটন বর্তমানে ‘খুব গভীর’ আলোচনায় রয়েছে। তিনি দাবি করেন, “আমরা স্পষ্টভাবে বলেছি—ওদের সবাইকে এখনই মুক্তি দিতে হবে, সবাইকে ছেড়ে দিতে হবে। তাহলেই ভালো কিছু ঘটতে পারে।” তবে তিনি একইসঙ্গে সতর্ক করেন, হামাস যদি জিম্মিদের মুক্তি না দেয়, তবে পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে।
তার ভাষায়, “এটা শেষ পর্যন্ত ইসরাইলের সিদ্ধান্ত। তবে আমার মতে, হামাস যদি বন্দিদের ছাড়ে, তাহলে একটা ইতিবাচক দিক তৈরি হবে। কিন্তু যদি তা না হয়, তবে পরিস্থিতি খুব খারাপ হবে।”
নিহত ও জীবিত জিম্মিদের প্রসঙ্গ
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, বন্দিদের পরিবারগুলো গভীর কষ্টে আছে। “তাদের প্রিয়জনরা ছিল তরুণ, সুন্দর, কিন্তু অনেকেই এখন মৃত। তারা তাদের ফেরত পেতে চায়, হয়তো জীবিত অবস্থায় যেমনটা চাইত, তার চেয়েও বেশি। এখন এই চুক্তির অংশ হিসেবে অনেক মৃতদেহও ফিরিয়ে আনা হবে।”
তিনি আরও জানান, কমপক্ষে ২০ জন জিম্মি জীবিত আছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে খবর পাওয়া যাচ্ছে, তাদের মধ্যে কয়েকজন হয়তো মারা গেছেন। ট্রাম্প বলেন, “আমি চাই এই খবরটা ভুল প্রমাণিত হোক। আমি আশা করি তাদের সবাই জীবিত আছেন।”
ট্রাম্পের সোশ্যাল পোস্ট ও নতুন বার্তা
এর আগের দিন অর্থাৎ বৃহস্পতিবার ট্রাম্প এক সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে হামাসকে অবশিষ্ট জিম্মিদের মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানান। তিনি লিখেছিলেন, যদি হামাস এটা করে, তাহলে যুক্তরাষ্ট্র তাদের টিকে থাকা মেনে নিতে পারে। এ মন্তব্য বিশ্বজুড়ে আলোচনার জন্ম দেয়, কারণ দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্র হামাসকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।
‘কঠিন পরিস্থিতি’ মন্তব্য
ট্রাম্প বলেন, বর্তমানে হামাসের হাতে খুব বেশি সংখ্যক জিম্মি অবশিষ্ট নেই। “যখন সংখ্যা ১০ থেকে ২০ জনে নেমে আসে, তখন তাদের ফেরানো অনেক কঠিন হয়ে পড়ে। সহজে তাদের আর পাওয়া যায় না। আর প্রচেষ্টা বাড়ানো মানে অনেক সময় আত্মসমর্পণ করা। এ বিষয়টি মোটেই ভালো নয়। এটি একটি জটিল এবং কঠিন পরিস্থিতি।”
৭ অক্টোবরের হামলা প্রসঙ্গ
তিনি আবারও স্মরণ করিয়ে দেন গত বছরের ৭ অক্টোবরের হামলার কথা। “মানুষ প্রায়ই ভুলে যায়, কিন্তু ওই হামলাটিকেই সমীকরণের অংশ হিসেবে রাখতে হবে। সেটি এই পুরো ঘটনাকে নতুন মাত্রা দিয়েছে।”
ইসরাইলে চলমান বিক্ষোভ নিয়ে মন্তব্য
ইসরাইলে যুদ্ধবিরতির দাবিতে এবং জিম্মি বিনিময়ের পক্ষে যে ব্যাপক বিক্ষোভ চলছে, সে বিষয়ে ট্রাম্প বলেন, “তেল আবিবে যে ব্যাপক আন্দোলন হচ্ছে, সেটি ইসরাইলের জন্য পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে। কারণ এই বিক্ষোভ যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার জন্য সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে।”
আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতাকারীদের ভূমিকা
ওভাল অফিসে আলোচনায় ট্রাম্প আরও উল্লেখ করেন যে, কাতার, মিশর এবং অন্যান্য আঞ্চলিক শক্তিগুলো এই প্রক্রিয়ায় সক্রিয়ভাবে ভূমিকা রাখছে। যুক্তরাষ্ট্রও মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে। তবে তিনি বারবার জোর দেন যে, মূল সিদ্ধান্ত ইসরাইলের হাতে।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই মন্তব্য যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতিতে নতুন দিক নির্দেশ করছে। হামাসের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের বিষয়টি আগে খুব কমই প্রকাশ্যে এসেছে। বিশেষ করে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের মুখে “হামাসকে টিকে থাকার সুযোগ দেওয়া যেতে পারে”— এমন ইঙ্গিত আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোচনার ঝড় তুলেছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এর মাধ্যমে একদিকে ট্রাম্প ইসরাইলকে চাপ দিচ্ছেন, অন্যদিকে যুদ্ধবিরতির পথও খুঁজছেন। তবে ইসরাইলি নেতৃত্ব ও তাদের জনগণ এই অবস্থানকে কিভাবে নেবে, সেটিই এখন বড় প্রশ্ন।
বাংলাবার্তা/এমএইচ