
ছবি: সংগৃহীত
মানবদেহের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হলো কিডনি। প্রতিদিন নিরবচ্ছিন্নভাবে এই অঙ্গ আমাদের শরীর থেকে অতিরিক্ত লবণ, টক্সিন এবং বর্জ্য পদার্থ বের করে দেয়। শুধু তাই নয়, কিডনি শরীরের পানি ও ইলেক্ট্রোলাইটের ভারসাম্য রক্ষা, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ এবং হরমোন উৎপাদনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই কিডনির যত্ন নেওয়া মানে পুরো শরীরকে সুস্থ রাখা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সঠিক খাদ্যাভ্যাসের পাশাপাশি কিছু প্রাকৃতিক পানীয় নিয়মিত গ্রহণ করলে কিডনি দীর্ঘদিন সুস্থ থাকে এবং কিডনি-সংক্রান্ত জটিলতার ঝুঁকি অনেকাংশে কমে যায়।
কিডনির জন্য কেন বিশেষ পানীয় প্রয়োজন?
আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় অনেক সময় অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস, পানিশূন্যতা, অতিরিক্ত লবণযুক্ত খাবার, কোমল পানীয় কিংবা এনার্জি ড্রিংক গ্রহণ কিডনির ওপর বাড়তি চাপ তৈরি করে। ফলে কিডনিতে পাথর, সংক্রমণ কিংবা ধীরে ধীরে ক্রনিক কিডনি ডিজিজ (CKD) হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। এজন্যই চিকিৎসকরা বলছেন, এমন কিছু প্রাকৃতিক পানীয় দৈনন্দিন অভ্যাসে রাখা উচিত যা শরীর থেকে ক্ষতিকর পদার্থ বের করে দিতে সাহায্য করবে এবং কিডনিকে চাপমুক্ত রাখবে।
লেবু পানি
চিনি ছাড়া লেবু পানি কিডনির জন্য একটি উৎকৃষ্ট পানীয়। লেবুর মধ্যে থাকা সাইট্রিক অ্যাসিড প্রস্রাবে ক্যালসিয়াম জমাট বাঁধা কমায়, ফলে কিডনিতে পাথর হওয়ার ঝুঁকি হ্রাস পায়। বিশেষজ্ঞরা বলেন, সকালে ঘুম থেকে উঠে বা দুপুরে ভারী খাবারের পর লেবু পানি পান করা সবচেয়ে কার্যকর। নিয়মিত অভ্যাস করলে শরীর সতেজ থাকে এবং প্রস্রাবের মাধ্যমে অতিরিক্ত লবণ বের হয়ে যায়।
নারকেল পানি
প্রকৃতির সবচেয়ে সহজলভ্য ও স্বাস্থ্যকর পানীয় হলো নারকেল পানি। এটি প্রাকৃতিক ইলেক্ট্রোলাইট সমৃদ্ধ, যা শরীরকে দ্রুত হাইড্রেট রাখে। ঘাম, ডায়রিয়া বা ডিহাইড্রেশনের কারণে শরীরের পানি-লবণের ঘাটতি হলে নারকেল পানি দ্রুত তা পূরণ করে। পাশাপাশি এটি শরীরে অপ্রয়োজনীয় সোডিয়াম জমতে দেয় না, যা কিডনিকে সুরক্ষিত রাখে। শিশু থেকে বৃদ্ধ—সবার জন্যই এটি নিরাপদ পানীয়।
জবের পানি
প্রাচীনকাল থেকেই জবের পানি কিডনি সুস্থ রাখার জন্য ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এটি শরীরকে ঠান্ডা রাখে এবং প্রস্রাবের মাধ্যমে শরীরের অতিরিক্ত টক্সিন বের করে দেয়। নিয়মিত জবের পানি পান করলে কিডনির কর্মক্ষমতা বাড়ে এবং বিভিন্ন সংক্রমণের ঝুঁকি কমে যায়। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে জবের পানি এখনও একটি জনপ্রিয় হারবাল পানীয়।
শসার পানি
শসা প্রাকৃতিক ডাইইউরেটিক হিসেবে কাজ করে, অর্থাৎ এটি প্রস্রাবের পরিমাণ বাড়ায় এবং শরীরের বর্জ্য দ্রুত বের করে দেয়। গরমের দিনে শসার পানি শরীর ঠান্ডা রাখে এবং ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধ করে। শসা কেটে পানিতে ভিজিয়ে কয়েক ঘণ্টা রেখে দিলে তা ডিটক্স ওয়াটার হিসেবে কাজ করে। প্রতিদিন এক গ্লাস শসার পানি কিডনিকে সতেজ রাখে এবং কিডনিতে অপ্রয়োজনীয় জমা কমায়।
যে বিষয়গুলোতে সতর্ক থাকতে হবে
কিডনি ভালো রাখতে শুধু ভালো পানীয় পান করলেই হবে না, কিছু বিষয়ে সতর্ক থাকাও জরুরি। বিশেষজ্ঞরা জানান—
১. অতিরিক্ত চা, কফি, কোমল পানীয় ও এনার্জি ড্রিংক কিডনির ওপর মারাত্মক ক্ষতি করে।
২. যাদের আগে থেকেই কিডনির সমস্যা আছে, বিশেষ করে ক্রনিক কিডনি ডিজিজ (CKD) রোগীরা ডাক্তার পরামর্শ ছাড়া বেশি পানি বা বিশেষ পানীয় পান করা থেকে বিরত থাকবেন।
৩. নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং রক্তচাপ ও রক্তের সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখলে কিডনি দীর্ঘদিন সুস্থ থাকে।
কিডনি শরীরের নীরব যোদ্ধা। এই অঙ্গের যত্ন না নিলে শরীরে নানা জটিলতা দেখা দেয়। তাই প্রতিদিনের জীবনে লেবু পানি, নারকেল পানি, জবের পানি ও শসার পানি যুক্ত করলে শুধু কিডনিই নয়, পুরো শরীরই থাকবে প্রাণবন্ত ও সুস্থ। আর সেই সঙ্গে অস্বাস্থ্যকর পানীয় থেকে দূরে থাকাই হবে সবচেয়ে বড় সুরক্ষা।
বাংলাবার্তা/এমএইচ