
ছবি: সংগৃহীত
দীর্ঘ ৩৩ বছর পর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হলো কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) নির্বাচন। কিন্তু ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার ১১ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও এখনো পূর্ণাঙ্গ ফলাফল প্রকাশ করা সম্ভব হয়নি। নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, হাতে গণনা করতে হওয়ায় সময় লাগছে, ফলে ফলাফল পেতে বিকেল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতে পারে।
ভোট গণনায় বিলম্ব
সরেজমিনে দেখা যায়, বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৫টায় ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার পর রাত ১০টার দিকে ভোট গণনা শুরু হয়। তবে ওএমআর মেশিনের ব্যবহার নিয়ে বিভিন্ন পক্ষের আপত্তি ওঠায় কমিশনকে মেশিনের পরিবর্তে হাতে গণনার সিদ্ধান্ত নিতে হয়। এর ফলে গণনায় সময় দ্বিগুণ বেড়ে যায়। এখন পর্যন্ত ২১টি হলের মধ্যে ১০টির গণনা শেষ হয়েছে, বাকিগুলো চলমান।
কমিশনের সদস্য ড. লুৎফুল এলাহী জানিয়েছেন, অভিজ্ঞ লোকবল এনে দ্রুত গণনা শেষ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে যেহেতু প্রতিটি ব্যালট হাতে গুনতে হচ্ছে, তাই বিকেল পর্যন্তও কাজ চলতে পারে।
ভোট গণনায় শারীরিক অসুস্থতা
দীর্ঘ সময় ধরে ভোট গণনার কাজে নিয়োজিত শিক্ষার্থী প্রতিনিধি, পোলিং এজেন্ট ও কর্মকর্তাদের মধ্যে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। শুক্রবার সকালে এক পোলিং এজেন্টকে অ্যাম্বুলেন্সে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
নির্বাচনের পরিবেশ
গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত টানা ভোটগ্রহণ চলে। যদিও শেষ মুহূর্তে কিছু অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগ ওঠে। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেল নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেয় বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে। একই সময় ছাত্র ইউনিয়নের একাংশ ‘সম্প্রীতির ঐক্য’ কমিশনের প্রতি অনাস্থা জানায়। তবে অনেক শিক্ষার্থী অভিযোগগুলোকে রাজনৈতিক অবস্থান হিসেবে দেখছেন এবং শেষ পর্যন্ত ভোটে অংশগ্রহণ করেছেন।
ভোটার সংখ্যা ও প্রার্থী
এবারের নির্বাচনে মোট ভোটার ছিলেন ১১ হাজার ৭৪৭ জন। কেন্দ্রীয় সংসদের ২৫টি পদ এবং ২১টি আবাসিক হলের ১৫টি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন মোট ১৭৮ জন প্রার্থী। এর মধ্যে সহসভাপতি (ভিপি) পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন ৯ জন, সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে ৯ জন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (নারী) পদে ৬ জন এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (পুরুষ) পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন ১০ জন।
ভোটকেন্দ্র ও কর্মকর্তারা
২১টি আবাসিক হলে মোট ২২৪টি বুথে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে ১০টি ছাত্রী হল ও ১১টি ছাত্র হল। প্রতিটি বুথে একজন রিটার্নিং কর্মকর্তা, মোট ৬৭ জন পোলিং কর্মকর্তা ও ৬৭ জন সহকারী পোলিং কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করেন।
হলে হলে ভোটের চিত্র
বিভিন্ন হলে ভোটদানের হার ছিল ভিন্ন। কিছু হলে ৭০ শতাংশের বেশি ভোট পড়লেও কিছু হলে অংশগ্রহণ কম ছিল। উদাহরণস্বরূপ—
-
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম হল: ৯৯১ জন ভোটারের মধ্যে ভোট পড়েছে ৮১০টি।
-
শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ হল: ৯৪৭ জন ভোটারের মধ্যে ভোট পড়েছে ৭৫২টি।
-
রোকেয়া হল: ৯৫৫ জন ভোটারের মধ্যে ভোট পড়েছে ৬৮০টি।
-
বীরপ্রতীক তারামন বিবি হল: ৯৮৪ জন ভোটারের মধ্যে ভোট পড়েছে ৫৯৫টি।
অন্যদিকে কিছু হলে অংশগ্রহণ তুলনামূলকভাবে কম ছিল, যেমন— -
নওয়াব ফয়জুন্নেসা হল: ২৮০ জন ভোটারের মধ্যে ভোট পড়েছে ১৩৭টি।
-
প্রীতিলতা হল: ৩৯৯ জন ভোটারের মধ্যে ভোট পড়েছে ২৪৬টি।
জাকসুর ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট
১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত জাকসুর প্রথম নির্বাচন হয় ওই বছরেই। তখন সহসভাপতি (ভিপি) নির্বাচিত হন গোলাম মোর্শেদ এবং সাধারণ সম্পাদক (জিএস) নির্বাচিত হন জাসদ ছাত্রলীগের শাহ বোরহানউদ্দিন রোকন। এরপর ১৯৭৩, ১৯৭৪, ১৯৮০, ১৯৮১, ১৯৮৯, ১৯৯০, ১৯৯১ ও ১৯৯২ সালে মোট আটবার নির্বাচন হয়। সর্বশেষ ১৯৯২ সালের নির্বাচনে ছাত্রদল একচেটিয়াভাবে জয়ী হয়েছিল, যেখানে তারা কেন্দ্রীয় সংসদ ও হল সংসদের ১০৭টির মধ্যে ১০৫টি পদ দখল করে।
দীর্ঘ বিরতির পর এ বছরের নির্বাচনকে শিক্ষার্থীরা ইতিহাসের অংশ হিসেবে দেখছেন। যদিও নানা বিতর্ক ও অভিযোগ ঘিরে রয়েছে, তবুও সবাই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন নতুন নেতৃত্বের ঘোষণা শোনার জন্য।
বাংলাবার্তা/এমএইচ