
ছবি: সংগৃহীত
দীর্ঘ ৩৩ বছর পর আবারও অনুষ্ঠিত হচ্ছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচন। আজ বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত চলবে এই নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। একই দিনে অনুষ্ঠিত হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১টি আবাসিক হল সংসদের নির্বাচনও। শুধু ভোট নয়, এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস এখন উৎসবমুখর।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, এ নির্বাচন কেবল নতুন নেতৃত্ব বেছে নেয়ার প্রক্রিয়া নয়—এটি যেন তাদের অধিকার, স্বপ্ন আর ভবিষ্যতের প্রতিফলন। দীর্ঘ বিরতির পর ভোট দেওয়ার সুযোগ পেয়ে তারা আনন্দিত। অনেকে বলেন, গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই ক্যাম্পাসজুড়ে নির্বাচনী প্রচারণা, পোস্টার-ব্যানার, স্লোগান ও মিছিলের মধ্য দিয়ে পুরো পরিবেশ এক ধরনের গণতান্ত্রিক উৎসবে পরিণত হয়েছে। এখন শুধু অপেক্ষা ব্যালটের মাধ্যমে নিজেদের প্রতিনিধি বেছে নেওয়ার।
এবারের নির্বাচনে মোট ভোটার ১১ হাজার ৯১৯ জন। নির্বাচনে অংশ নিতে চূড়ান্ত অনুমোদন পেয়েছেন ১৭৮ জন প্রার্থী। এর মধ্যে সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে ৯ জন, সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে ৯ জন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (নারী) পদে ৬ জন এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (পুরুষ) পদে ১০ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এছাড়া অন্যান্য পদে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের মনোনীত প্রার্থী এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীরা রয়েছেন।
নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে মোট আটটি প্যানেল। এর মধ্যে রয়েছে বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলোর ঐক্যবদ্ধ প্যানেল, ইসলামী ছাত্রশিবিরের সমর্থিত প্যানেল, ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেল এবং কয়েকটি স্বতন্ত্র জোট। প্রতিটি প্যানেলই নানা ইশতেহার ও প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোটারদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা চালিয়েছে।
ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১টি হলের মোট ২২৪টি বুথে। এর মধ্যে ১০টি ছাত্রী হল এবং ১১টি ছাত্র হল। প্রতিটি কেন্দ্রে থাকবেন একজন রিটার্নিং কর্মকর্তা, ৬৭ জন পোলিং কর্মকর্তা এবং ৬৭ জন সহকারী পোলিং কর্মকর্তা। ভোটাররা কেন্দ্রীয় সংসদ ও হল সংসদ মিলিয়ে মোট ৪০টি ব্যালটে ভোট দেবেন। প্রতিটি ব্যালটে প্রার্থীর নামের পাশে টিক চিহ্ন দিয়ে ভোট প্রদান করতে হবে।
ভোট গণনায় ব্যবহার করা হবে বিশেষ ওএমআর মেশিন, যা দ্রুত ও স্বচ্ছভাবে ভোটগণনা সম্পন্ন করবে। ক্যাম্পাসের সিনেট হলে বসানো বড় স্ক্রিনে সরাসরি সব হলের ভোট পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা যাবে। প্রতি ঘণ্টায় ভোটের অগ্রগতি ও ফলাফল ক্যাম্পাসের বিভিন্ন পয়েন্টে প্রদর্শনের ব্যবস্থা থাকবে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট ও জনসংযোগ দফতরের ফেসবুক পেজে ভিডিও নির্দেশনাও প্রকাশ করা হয়েছে, যাতে শিক্ষার্থীরা সহজে ভোট প্রদানের নিয়ম জানতে পারেন।
নির্বাচনকে ঘিরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২টি প্রবেশ গেইটে মোতায়েন করা হয়েছে প্রায় ১ হাজার ২০০ পুলিশ সদস্য। পাশাপাশি ভোটকেন্দ্রে নিরাপত্তা নিশ্চিতে সিভিল পোশাক পরিহিত আনসার সদস্যরাও দায়িত্ব পালন করবেন। যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পুলিশের স্ট্রাইকিং ফোর্স প্রস্তুত রাখা হয়েছে। নিরাপত্তার এ চাদরে আবৃত ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীরা নিশ্চিন্তে ভোট দিতে পারবে বলে আশা করছে প্রশাসন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, জাকসু নির্বাচন কেবল নেতৃত্ব বাছাইয়ের প্রক্রিয়া নয়, এটি গণতান্ত্রিক চর্চার এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। দীর্ঘ সময় পর শিক্ষার্থীরা ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারছেন, যা তাদের মধ্যে রাজনৈতিক চেতনা, অধিকার সচেতনতা এবং দায়িত্ববোধ জাগিয়ে তুলবে।
অন্যদিকে, শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা মনে করেন, জাকসুর মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান এবং শিক্ষার্থীদের স্বার্থরক্ষায় নতুন নেতৃত্ব ভূমিকা রাখবে।
সব মিলিয়ে, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় আজ এক ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী হতে যাচ্ছে। শিক্ষার্থীরা আশা করছেন, এই নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি আরও প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পাবে এবং দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে জাকসু আবারও হয়ে উঠবে শিক্ষার্থীদের অধিকার ও স্বপ্নের প্রতিচ্ছবি।
বাংলাবার্তা/এমএইচ