
ছবি: সংগৃহীত
মালয়ালাম সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে একের পর এক ব্যবসাসফল চলচ্চিত্র উপহার দিয়েছে দর্শকদের। তবে চলতি বছরের আগস্টে মুক্তি পাওয়া ‘লোকাহ: চ্যাপ্টার ১–চন্দ্রা’ যেন একেবারে ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে এই ইন্ডাস্ট্রিতে। মুক্তির মাত্র ১৫ দিনের মাথায় সিনেমাটি আয় ছাড়িয়েছে অবিশ্বাস্য ২০৩ কোটি রুপি। ভারতীয় বক্স অফিসে নারী-কেন্দ্রিক কোনো সিনেমার জন্য এটি এক ঐতিহাসিক ঘটনা বলেই মনে করছেন চলচ্চিত্র সমালোচকরা।
‘লোকাহ’-এর পরিচালক ডোমিনিক অরুন একেবারে শুরু থেকেই দর্শকদের জন্য কিছু আলাদা উপহার দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন। প্রযোজক হিসেবে নাম লিখিয়েছেন দক্ষিণী তারকা দুলকার সালমান, যিনি শুধু নিজের অভিনয়ের জন্যই নন, বরং মানসম্মত কনটেন্ট তৈরির জন্যও আলাদা পরিচিতি পেয়েছেন। তার প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ওয়ারফেয়ার ফিল্মস–এর ব্যানারে নির্মিত এ সিনেমা বাজেট ছিল মাত্র ৩০ কোটি রুপি। অথচ এর বিপরীতে আয় দাঁড়িয়েছে ২০০ কোটিরও বেশি, যা নির্মাণ ব্যয়ের তুলনায় একে সুপারহিট নয়, বরং ব্লকবাস্টার পর্যায়ে নিয়ে গেছে।
সিনেমার গল্প আবর্তিত হয়েছে এক নারী চরিত্রকে ঘিরে, যার মধ্যে রয়েছে অলৌকিক শক্তি। দক্ষিণ এশিয়ার সিনেমায় যেখানে এখনো পুরুষ সুপারহিরোর প্রভাব, সেখানে প্রথমবারের মতো দর্শক পেলেন এক নারী সুপারহিরোইনকে। গল্পের পটভূমি নির্মিত হয়েছে কেরালার এক প্রাচীন লোককাহিনি থেকে। সেখানে এক রক্তপিপাসু ডাকিনির চরিত্রকে আধুনিক সমাজের নানা সমস্যার সাথে যুক্ত করা হয়েছে।
সিনেমায় উঠে এসেছে অঙ্গ পাচার, সামাজিক বৈষম্য, লোভ আর ক্ষমতার অপব্যবহার। কল্পকাহিনি আর বাস্তবতার মিশেলে তৈরি এই প্লট দর্শকদের একেবারে অন্য এক অভিজ্ঞতা দিয়েছে। ফলে ‘লোকাহ’ কেবল একটি ফ্যান্টাসি সিনেমাই নয়, বরং সমসাময়িক সামাজিক বার্তা বহনকারী চলচ্চিত্র হিসেবেও আলোচনায় এসেছে।
সিনেমার ভিজ্যুয়াল এফেক্ট নিয়ে ইতোমধ্যে ভারতীয় চলচ্চিত্র সমালোচকদের মধ্যে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে। অত্যাধুনিক CGI, নিখুঁত গ্রাফিক্স এবং ঝলমলে অ্যাকশন দৃশ্যের মাধ্যমে দর্শক যেন এক নতুন ভিজ্যুয়াল দুনিয়ায় প্রবেশ করেছেন। মাত্র ৩০ কোটির বাজেটে এত মানসম্পন্ন প্রযুক্তির ব্যবহার সম্ভব হবে, সেটা অনেকের কাছেই বিস্ময়কর মনে হয়েছে।
প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন তরুণ অভিনেত্রী কল্যাণী প্রিয়দর্শন। তার শক্তিশালী অভিনয় এবং নতুন ধরনের চরিত্রচিত্রণ দর্শকদের মুগ্ধ করেছে। এই সিনেমার মাধ্যমেই তিনি প্রথম নারী অভিনেত্রী হিসেবে ২০০ কোটির ক্লাবে পৌঁছেছেন। ফলে তার ক্যারিয়ারের জন্য এটি এক মাইলফলক।
এছাড়া সিনেমায় আরও অভিনয় করেছেন নাসলেন, স্যান্ডি, অরুণ কুরিয়ান প্রমুখ। বিশেষ ক্যামিও চরিত্রে ছিলেন দুলকার সালমান, টোভিনো থমাস, আন্না বেন। শুধু তাই নয়, কিংবদন্তি অভিনেতা মাম্মুটি একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে কণ্ঠ দিয়েছেন, যা সিনেমার প্রতি দর্শকদের আকর্ষণ আরও বাড়িয়েছে।
প্রেক্ষাগৃহে মুক্তির পর থেকেই প্রতিটি শোতে দর্শকদের উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। পরিবার থেকে শুরু করে তরুণ প্রজন্ম—সবাই সমান আগ্রহে সিনেমাটি দেখতে ছুটে যাচ্ছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দর্শকরা লিখছেন, “এ যেন মালয়ালাম সিনেমার এক নতুন বিপ্লব”, “নারী সুপারহিরোকে এত শক্তিশালীভাবে তুলে ধরার জন্য আমরা অনেকদিন অপেক্ষা করছিলাম।”
ভারতীয় সিনেমার ইতিহাসে নারী-নির্ভর ফ্যান্টাসি চলচ্চিত্রের এমন সাফল্য এর আগে দেখা যায়নি। ‘এম্পুরান’-এর পর দ্রুততম সময়ে ২০০ কোটির মাইলফলক স্পর্শ করেছে ‘লোকাহ’। সিনেমাটি এখন শুধু মালয়ালাম নয়, পুরো ভারতীয় চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রিতেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে।
চলচ্চিত্র বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘লোকাহ’ প্রমাণ করেছে নারী চরিত্রকে কেন্দ্র করে নির্মিত সিনেমাও বাণিজ্যিক সাফল্যে নতুন রেকর্ড গড়তে পারে। এর ফলে দক্ষিণি চলচ্চিত্রে নারী চরিত্রভিত্তিক আরও বড় বাজেটের সিনেমা নির্মাণের প্রবণতা বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ